চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, প্রধান হিসাবরক্ষক হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন সংস্থাটির বেশ কিছু ঠিকাদার। চিঠিতে তারা প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীর উপর হামলার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে দায়ী করেছেন তিনজনকেই। মেয়র রেজাউল করিমের বহিষ্কার দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।
ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন চসিকের কাছে ঠিকাদারদের প্রায় সাতশ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এসব বকেয়া বিল পরিশোধে প্রধান হিসাবরক্ষক হুমায়ুন কবির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ঘুষ নিচ্ছেন। ঘুষ নেবার পরও দুই থেকে দশ লক্ষ টাকার বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন সদস্যের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন তারা।
অভিযোগ পত্রে তারা দাবি করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাজ করে অনেক ঠিকাদারকে দেউলিয়া হতে হয়েছে। এমন কি দেনার চাপ সইতে না পরে শাহাবুদ্দিন নামের এক ঠিকাদার আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
অভিযোগ পত্রে ঠিকাদাররা বলেন, চসিকের মেয়র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে প্রতারণা করেছেন। প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক এবং হুমায়ুনকে দিয়ে ‘ ঘুষ বাণিজ্য ‘ অবারিত করেছেন মেয়র। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ লুটপাটে ব্যয় হচ্ছে। প্রকল্পের কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রতিটি কাজের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এই সিন্ডিকেটের পকেটে ডুকছে। এমন দূর্নীতিগ্রন্থ সংস্থায় অর্থ বরাদ্ধ না দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারকে বিক্ষুব্ধ করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পিডি ড. গোলাম ইয়াজদানীর উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক ও প্রধান হিসাবরক্ষক হুমায়ুন কবির মিলে। ঠিকাদারদের এমন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
মেয়র রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনে লেখা চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডিজিএফআই’র মহাপরিচালক, দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, এনএসআই’র মহাপরিচালক, দুদক কমিশনার, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে।
অভিযোগের ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ঠিকাদার হাবিবুল্লাহ খান, নাজমুল হোসেন, সন্জয় ভৌমিক, মোহাম্মদ ফেরদৌস, সুভাষ মজুমদার, ফয়সাল, আলমগীর, হাসান আলী, সিরাজুদ্দৌলাহ,এমরান, লিটন, জুয়েল, জসিম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, নাজিম উদ্দীন।
ঠিকাদার ও চসিকের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) জসিম উদ্দিন, প্রধান হিসাবরক্ষক হুমায়ুন কবির, বিদ্যুৎ উপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ – এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরমধ্যে রফিকুল ইসলাম বাড়ি কিনেছেন আমেরিকায়, দুবাইয়ে প্রমোত তরী ক্রয় করেছেন প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন। হুমায়ুন কবির কানাডা ও আমেরিকায় বাড়ি ক্রয় করেছেন। ঝুলন কুমার দাশ নিজেই আবাসন ব্যবসায় জড়িত। তার একাধিক বাড়ি কেনা আছে ভারতে। চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র হবার পরে কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতে বাড়ি ক্রয় করেছেন। গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।
অভিযোগ পত্রে ঠিকাদাররা এসব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিরেপক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এবিষয়ে জানতে একাধিকবার মেয়র রেজাউল করিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি। প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশও ফোন রিসিভ করেন নি।
আপনার মতামত জানানঃ