তীব্র দাবদাহ, সঙ্গে খরার কারণে জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ একটি জলপথে নৌ চলাচল সীমিত হয়ে পড়ার পর জার্মানিতে বিদ্যুতের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে গ্রীষ্মের এই যন্ত্রণাদায়ক গরম ইউরোপের জ্বালানি ব্যবস্থার ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।
এই চাপ পুরো ইউরোপজুড়েই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের আয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে; শীতের সময় জ্বালানির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংকট আরও তীব্র হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ার পেছনে এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবকিছুরই অবদান রয়েছে।
সর্বশেষ যা ‘গলা টিপে’ ধরছে, তা হল রাইন নদী। গত কিছুদিন ধরে এ জলপথ দিয়ে নৌ চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ানোয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানিতেও এখন প্রচণ্ড গরম। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় কমছে নদীর পানির উচ্চতা। রাইন নদীর পানি কমছে দ্রুত। এর প্রভাবে শিল্পখাতে বাড়ছে বিপর্যয়ের শঙ্কা।করোনা সংকট এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জার্মানির অর্থনীতি এমনিতেই বেশ সংকটে।
দীর্ঘ খরা এবং পানির উচ্চতা কমে যাওয়া শিল্পখাতের সরবরাহকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। কোম্পানিগুলোর ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
গতমাসে ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক রিসার্চ জানায়, জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড সাত দশমিক ছয় শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনীতির এই মন্দাভাব আরো প্রকট হতে পারে বলে মনে করেন ফেডারেল অব জার্মান ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডিআই)-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হোলগার ল্যোশ। তার এমন আশঙ্কার কারণ বৈরি প্রকৃতি।
বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না, তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিরতিহীন গরম এবং বৃষ্টিহীনতার কারণে কমছে রাইন নদীর পানির উচ্চতা। ধীরে পন্যবাহী যান চালানোই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তাই তার আশঙ্কা খুব শিগগির পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি এমন দিকে চলে যেতে পারে যখন আর নদীতে পণ্যবাহী যান চালানো যাবে না এবং তার ফলে শিল্পখাতে বিপর্যয় নামবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ খরা এবং পানির উচ্চতা কমে যাওয়া শিল্পখাতের সরবরাহকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। কোম্পানিগুলোর ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তীব্র দাবদাহের এ মৌসুমে, বিশেষ করে নদীতে যখন পণ্যবাহী যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে, তখন অন্য বিকল্প থাকলে ভালো হতো।
কিন্তু ল্যোশ জানা, জার্মানির রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা এবং ট্রাক চালকের স্বল্পতার কারণে পণ্য সরবরাহের অন্য বিকল্পগুলোও এই মুহূর্তে কাজে আসছে না।
ফেডারেল অব জার্মান ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডিআই)-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনে করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে বিশেষ করে রাসায়নিক, ইস্পাত, পেট্রোলিয়াম এবং নির্মাণ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল গন্তব্যে পৌঁছানো অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রচণ্ড গরম এবং খরার কারণে রাইন নদীর পানির উচ্চতা গত কিছুদিন ধরেই ধীরে ধীরে কমছে।
তবে সম্প্রতি বিষয়টি খুব উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ডাচ সীমান্ত সংলগ্ন জার্মান শহর এমেরিশে নদীর পানি আরো চার সেন্টিমিটার (১.৬ ইঞ্চি) নেমেছে। এর ফলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আরো বেড়েছে। পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের পথে পানি এখনো দুই মিটার গভীর।
এই গভীরতায় অল্প পণ্য বোঝাই করা বাহন চলাচল করা সম্ভব। গভীরতা আরো কমলে সেই সুযোগও আর থাকবে না। তবে আশার কথা, জার্মানির কিছু অঞ্চলে গরমের তীব্রতা কমতে শুরু করেছে, বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও বাড়ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ