‘যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চীনা সামরিক বাহিনী নিজেদের অফিসিয়াল গ্রুপে যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কিত এই পোস্ট করে। পোস্ট করার পর লাখ লাখ মানুষ সেই পোস্টে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
তবে পোস্টটি প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’ কিংবা ‘টুইটারে’ দেওয়া হয়নি। এটি চীনের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওয়েবসাইট ‘সিনা ওয়েইবো’তে দেওয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) চীনের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ওয়েইপোতে ওই পোস্ট দেওয়া হয়।
তাইওয়ান ইস্যুতে যদিও চীন কোনও ধরনের উস্কানি সৃষ্টি না করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হঁশিয়ারি দিয়েছে, তারপরও ধারণা করা হচ্ছে- চীনের পিপলস লিবারশেন আর্মির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মহড়া সম্পর্কে এই পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ এ ধারণার কথা জানিয়েছে। গ্লোবাল টাইমস হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সরকারি মুখপত্র।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও আমেরিকাকে সতর্ক করেছেন। তাইওয়ান প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “কেউ যেন আগুন নিয়ে না খেলে, আগুন নিয়ে খেলতে গেলে সেই আগুনে তারাই পুড়ে ছাই হবে।”
শুক্রবার ‘সিনা ওয়েইবো’ সাইটে যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে পোস্ট দেওয়ার পরপরই তাতে অল্প সময়ের মধ্যে তিন লাখ সমর্থনমূলক রিঅ্যাকশন এসেছে। কমেন্ট পড়েছে ১৯ হাজারের বেশি।
চীনা ভাষায় দেওয়া ওই পোস্টের অর্থ হচ্ছে ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’। কিন্তু গ্লোবাল টাইমস বলছে, ওই পোস্টের সঠিক অনুবাদ হবে ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি’।
এর আগে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়া বন্ধ করতে পারে একমাত্র তারাই, যারা যুদ্ধের জন্য সক্ষম।
ওয়েইবো-তে চীনের সামরিক বাহিনীর ৮০তম গ্রুপ যে পোস্ট দিয়েছে তাতে এক মন্তব্যে এই গ্রুপ জানিয়েছে, “আমাদের সব সময় যুদ্ধের প্রস্তুতির মতো মৌলিক দায়িত্বের কথা মনে রাখতে হবে এবং এটি হচ্ছে একটি শক্তিশালী বাহিনীর দায়িত্ব।”
“আমাদের সব সময় যুদ্ধের প্রস্তুতির মতো মৌলিক দায়িত্বের কথা মনে রাখতে হবে এবং এটি হচ্ছে একটি শক্তিশালী বাহিনীর দায়িত্ব।”
চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা বর্তমানে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। চীন গণতান্ত্রিক এই ভূখণ্ডকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে। সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চীনের সামরিক বিমানের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় উত্তেজনার পারদ এখন চরমে।
সম্প্রতি তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে চীনের। বেশ কয়েকবারই চীনের বিমান তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। চীন দাবি করে থাকে, তাইওয়ান দেশটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণার পরিণতির বিষয়ে বরাবরই সতর্ক করে দিয়ে আসছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাইওয়ানে যেকোনো চীনা আগ্রাসনের সামরিক জবাব দেবে ওয়াশিংটন।
স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রদেশ মনে করে চীন। দেশটির ইচ্ছা তাইওয়ানকে আবার মূল ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করা। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করতে চায় বেইজিং।
আগেও তাইওয়ানের বিষয়ে চীনকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর বেইজিং এ যাবৎকালের সবচেয়ে কড়া ভাষায় তার প্রতিবাদ করে। চীন বলছে, তাইওয়ানের স্বাধীনতার ‘যেকোনো প্রচেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে চুরমার করে দেবে’ দেশটি।
চীনকে উদ্দেশ্য করে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, তাইওয়ানের কাছে যুদ্ধবিমান উড়িয়ে ‘বিপদ নিয়ে খেলছে’ চীন। আক্রান্ত হলে সামরিকভাবে দ্বীপটিকে রক্ষা করারও অঙ্গীকার করেন তিনি।
তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম জাতি হিসেবে মনে করে। তবে দ্বীপটিকে নিজের অংশ বলেই দাবি করে আসছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের সবচেয়ে বড় মিত্র মনে করে তাইওয়ান। দ্বীপটির আত্মরক্ষায় সহযোগিতা প্রদান নিয়ে ওয়াশিংটনের একটি আইনও রয়েছে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় এই কথার লড়াই শুরু হয়েছে। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে যুদ্ধবিমান পাঠানো বাড়িয়েছে চীন। গত মে মাসে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান বহরটি পাঠিয়েছিল দেশটি। এদিকে তাইওয়ানের জলসীমায় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে কি সামরিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন?
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১২
আপনার মতামত জানানঃ