পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিজানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সুধী সমাজের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে তার মুক্তি চেয়েছেন।
মিজানুর রহমান মিজানের স্ত্রী শামিম হাসেম খুকি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন মিজানকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। সে আমার মেয়েকে বিষয়টি টেলিফোনে জানায়। তারপর থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।’
মিজানুর রহমানের মেয়ে পূর্ণতা হাসিনা এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবা ফোন করে জানান যে বিক্রমপুর প্লাজার সামনের পুলিশ বক্স থেকে তাকে ডাকা হয়েছে। তিনি সেখানে যাচ্ছেন। মাকে ফোন করে বিষয়টি জানাতে বলেন।’
পূর্ণতা হাসিনা বলেন, ‘আমি ফোনের ওপাশ থেকে শুনতে পাই যে, কেউ একজন বলছেন, ডিসি স্যার আপনাকে ডাকছেন। আপনি আসেন।’
মিজানুর রহমান মিজানের বন্ধু মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মিজান আমাকে সকাল ১১টায় ফোনে করে জানান তাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তার লাইন কেটে যায়। আমি এখন শ্যামপুর থানার সামনে আছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। তবে এখানকার আনসার ও আশপাশের লোকজন জানিয়েছে, দাড়িওয়ালা টাক মাথার একজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
ডিবির সন্দেহজনক মন্তব্য
শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম বলেন, ‘আমরা মিজানুর রহমান মিজানকে তুলে আনিনি। তবে জানতে পেরেছি তাকে ডিবিতে নেওয়া হয়েছে। জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি একজন সন্দেহভাজন ইন্ধনদাতা। তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জুরাইনে ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর হামলার ঘটনার পর অনেকেই ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। আমরা অনেককেই খুঁজছি। তবে মিজানুর রহমান নামে কাউকে এখনো তুলে আনা হয়নি।’
মিজানুর রহমান মিজানকে আটক করা বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেমএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘উস্কে দিয়ে জুরাইনে পুলিশ সার্জেন্টের উপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তারমধ্যে মিজানুর রহমান আছে কিনা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আমরা যাচাই করে দেখবো।’
এদিকে, ডিবির একটি সূত্র জানায়, মিজানকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গাড়িতে তুললেও পরবর্তী সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিবির এক কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিক জানিয়েছেন, মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আনা হয়েছে। তাকে এই মামলা গ্রেফতার দেখানো হবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত না।
মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার পানি দিয়ে তৈরি ‘শরবত’ খাওয়াতে এসেছিলেন। তবে ওয়াসার এমডি তার সঙ্গে দেখা করেননি। তারপর থেকে মিজানুর রহমান আলোচনায় আসেন।
কী ঘটেছিল জুরাইনে?
প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টপথে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় এক দম্পতির সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি। পরবর্তী সময়ে সেখানে উপস্থিত নিম্নআয়ের মানুষ, অটোচালক ও হকাররা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এতে এক পরিদর্শক, এক সার্জেন্ট, দুই এসআই ও দুজন কনস্টেবল আহত হন।
এই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে জুরাইন থানায় মামলা করে। মামলায় নামীয় আসামিরা হলেন- মোটরসাইকেলচালক বার্তা বিচিত্রা নামক পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহাগ-উল ইসলাম রনি, তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান ভুইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভুইয়া। আরও ৩ থেকে ৪শ’ অজ্ঞাত আসামি।
জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, সকালে এক ব্যক্তি স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলে করে কোথাও যাচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর মাথায় হেলমেট ছিল না। এ সময় ট্রাফিকের একজন সার্জেন্ট মোটরসাইকেলটি থামান। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট নারীর গায়ে হাত তোলেন ও ওই দম্পতিকে পুলিশ বক্সের দিকে নিয়ে যান। তখনই এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পর মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। তিনি পুলিশ বক্সের কাচের টুকরা রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। মিজানুর বলেন, পুলিশের চাঁদাবাজি নিয়ে স্থানীয় লোকজন বিরক্ত। মূলত তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আজ।
এই ঘটনায় মিজানুর রহমান একাধিক গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। ওই এলাকায় পুলিশের অনিয়ম নিয়েও কথা বলেন তিনি। তার বাড়ি জুরাইন এলাকাতেই। পরিবার ও বন্ধুদের সন্দেহ, গণমাধ্যমে পুলিশের অনিয়মের কথা বলায় তাকে আটক করা হতে পারে।
শামীম হাসেম খুকির ধারণা, জুরাইনে পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় তার স্বামী পুলিশের সমালোচনা করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে আটক করা হতে পারে। এছাড়া তার নামে অন্য কোনও মামলা বা গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট নেই বলেও জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ