মিসর সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কৌতূহল তুঙ্গে। পিরামিড, মমি বিভিন্ন মূর্তিসহ সেখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রাচীন মিসরের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তাদের অসাধারণ শিল্প নৈপুণ্য ও বিজ্ঞান মনস্কতায়।
পাথরের তৈরির অদ্ভুত সুন্দর সব মূর্তির সন্ধান মেলে শুধু মিসরেই। মিসর সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি বিজ্ঞানীদের। তাদের রহস্যময় সব স্থাপনা ও কলা-কৌশল আজও বিজ্ঞানীদের অজানা। যুগ যুগ ধরে এসব নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, আর তাতেই বেরিয়ে আসছে সব অজানা ও বিস্ময়কর তথ্য।
এবার দেশটিতে সাড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো একটি সূর্য মন্দির বা উপাসনালয়ের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। এটি খ্রিস্টপূর্ব ২৫ শতকের বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি মিসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে মনে করছেন তারা।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিসরের প্রাচীন শাসকদের (ফারাও) নির্মিত সূর্য মন্দিরের সন্ধান পান প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। ধারণা করা হয়, মিসরের প্রাচীন শাসকেরা মাত্র ৬টি সূর্য মন্দির নির্মাণ করেন। এগুলোর বয়স ৪ হাজার ৫০০ বছর। এই সূর্য মন্দিরগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২টির সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
মিসরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণে আবু গোরাবের পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ একটি এলাকায় সূর্য মন্দিরটির সন্ধান পান প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। মন্দিরের ভেতর বিশাল উঠানের মতো খালি জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া ভেতরে রয়েছে বিশাল লম্বা একটি স্তম্ভ। সেখানেই মিলিত হয়ে সূর্যের আরাধনা করা হতো।
মিসরের প্রাচীন আমলে নির্মিত পিরামিড ফারাও শাসকদের মর্যাদার বিষয়টি তুলে ধরে। সারা বিশ্বে পিরামিড মানুষের কাছে বিস্ময়কর একটি বস্তুর নাম। ঠিক তেমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মনে করা হয় সূর্য মন্দিরকে। নিজেদের জীবন্ত দেবতা হিসেবে তুলে ধরতে ফারাও শাসকেরা এটা ব্যবহার করতেন।
প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, কায়রো থেকে ১২ মাইল দক্ষিণে অন্য একটি মন্দিরের নিচে চাপা পড়ে ছিল এ মন্দিরটি।
এ মন্দিরটির খোঁজ যেখানে পাওয়া গেল, ১৮৯৮ সালে ঠিক সেখানেই আরেকটি মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এখন নতুন মন্দিরটির সন্ধান পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে আগের মন্দিরটি এটির ওপরই নির্মিত হয়েছিল।
উনবিংশ শতাব্দীতে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সূর্য মন্দিরটির সামান্য একটি অংশের খোঁজ পেয়েছিলেন। তবে তখন তারা মনে করেছিলেন এটা তাদের আবিষ্কৃত মন্দিরটিরই পূর্ববর্তী অংশ। তবে এখন দেখা যাচ্ছে সেটা আসলে সম্পূর্ণ আলাদা একটা মন্দির ছিল।
পুরো মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে মাটির ইট দিয়ে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়— মোট ছয়টি সূর্য মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটির সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। এখন পর্যন্ত জানা যায় সূর্য মন্দিরগুলোর সবগুলোই খুবই কাছাকাছি এলাকায় নির্মিত হয়েছিল।
এ মন্দিরটি যেভাবে নির্মিত হয়েছিল অর্থাৎ মাটির ইট দিয়ে, এভাবে নির্মিত স্থাপনাগুলো খুব একটা বেশি টেকসই হয় না। কোন রাজার শাসনামলে মন্দিরটা নির্মাণ করা হয়েছিল সেটা এখনও নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেননি সেখানে কাজ করা প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
গবেষকরা বলছেন, সার্বিকভাবে এ আবিষ্কার ওই সময়ের মানুষদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বুঝতে সহায়ক হবে। যেমন: তারা কী খেতো, তাদের বিশ্বাসরীতি কেমন ছিল এসব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
২০১৯ সালে মিসরে ধারাবাহিকভাবে চালানো প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের সবশেষ আবিষ্কার প্রাচীন মন্দিরটি। ২০১১ সালের বিপ্লবের কারণে সংকটে পড়া দেশটির পর্যটনের বিকাশে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। আশার কথা হলো, জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) ২০১৮ সালের ট্যুরিজম হাইলাইটস রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুত পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বের এমন ১০টি দেশের তালিকার শীর্ষে আছে মিসর।
গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে আছে টলেমায়েক রাজবংশের (৩২৩-৩০ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কার আটটি মমি, কায়রোর দক্ষিণে সাকারার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে ৪৪০০ বছর আগের পুরনো একটি সমাধি, সোহাজ শহর থেকে চার মাইল দূরে আখমিম এলাকায় ইঁদুর, বিড়াল, ঈগল, বাজপাখিসহ অর্ধশত পশু-পাখির মমি, নীল নদের কাছে প্রাচীন বন্দর, পিরামিড চত্বর গিজার কাছে ৪ হাজার বছরের পুরনো সমাধি, দক্ষিণ মিসরীয় শহর আসওয়ানের একটি সমাধিতে ফেরাউন ও গ্রেকো-রোমান সময়কালের (খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে চতুর্থ শতাব্দী) নারী, পুরুষ ও শিশুর ৩৪টি মমি।
প্রাচীন এসব সম্পদ আবিষ্কারের সুবাদে মিসরে নতুন জাদুঘর নির্মাণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বহুল প্রতীক্ষিত গ্র্যান্ড ইজিপ্টিয়ান মিউজিয়ামের কাজ শেষের পথে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৭
আপনার মতামত জানানঃ