একটি ধমনী যা কিনা সাময়িকভাবে মায়ের গর্ভে থাকা মানব শিশুর হাতের কেন্দ্র দিয়ে যায়, সেটি সচরাচর নিজে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেও এখন আর মিলিয়ে যাচ্ছে না। বরং পূর্ণবয়স্ক মানব দেহে রক্ত সংবহনতন্ত্রে অতিরিক্ত একটি পথ হিসেবে কাজ করছে।
বিকাশের প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি মানবশরীরের এই ধননী স্বাভাবিকভাবেই থাকে। মূলত এই ধমনী বাহুর কেন্দ্রে উপস্থিত হয় এবং হাত বাড়ার সাথে সাথে রক্ত প্রবাহের কাজ করে। কিন্তু এটি তখনই স্বাভাবিক যখন নিজে থেকেই এই ধমনীটি নিজের বিকাশ বন্ধ করে দেয় এবং অন্য দুটি ধমনী (উলনার এবং রেডিয়াল) রক্ত প্রবাহের কাজ করে।
গত বছর এনাটমি’র একটি বিজ্ঞান সাময়িকে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড এবং ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি অব অস্ট্রেলিয়া’র একটি গবেষণা থেকে এমনটি জানা যায়; যে মানুষও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, আঠারো শতক থেকেই এনাটমিস্টরা পূর্ণবয়স্ক মানব শরীরে এই ধমনীটির উপস্থিতি লক্ষ্য করে আসছে। তবে তাদের সম্প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে যে, মানবশরীরে এটির উপস্থিতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির তেগান লুকাস জানান, ১৮৮০-এর মাঝামাঝি ১০ শতাংশ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যেত। যা কিনা বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া ৩০ শতাংশ মানুষের মধ্যে এখন দেখে যাচ্ছে। ক্রমবিকাশের জায়গা থেকে যা খুব কম সময়ে ঘটে যাওয়া বিবেচনাযোগ্য একটি পরিবর্তন।
এই রক্ত প্রবাহের ধমনীর মানব শরীরে উপস্থিতির ধারণা পেতে গবেষকরা দান করা অঅস্ট্রেলিয়ান ও ইউরোপীয়ান বংশধরদের মৃতদেহের ৮০ টি অঙ্গ পরীক্ষা করে দেখেছে। যেগুলোর বয়স সীমা ছিল ৫১ থেকে ১০১ বছর। অর্থাৎ অধিকাংশই বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জন্মগ্রহণ করেছিল।
মানব শরীরে এই ধমনী রক্ত সরবরাহের একটি অতিরিক্ত পথও। এর উপস্থিতির পুনরাবৃত্তি সম্পর্কে ধারণা পেতে গবেষকরা পূর্বের রেকর্ডের সাথে বর্তমান গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে দেখেন। এক্ষেত্রে দেখা যায়, একশ বছর আগের তুলনায় আজকের দিনে পূর্ণবয়স্কদের শরীরে এই ধমনীর উপস্থিতির সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যাদের শরীরে রক্ত প্রবাহের এই অতিরিক্ত ধমনীটি তার স্বাভাবিক বিকাশ বন্ধ না করে বৃদ্ধি অব্যাহত রেখে অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহের পথ তৈরি করছে।
লুকাস সায়েন্সএলার্টের সাথে আলাপকালে ব্যাখ্যা করেন, এই বৃদ্ধির কারণে মধ্যবর্তী ধমনীর বিকাশে জড়িত জিনের মিউটেশন হতে পারে অথবা গর্ভাবস্থায় মায়েদের স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে অথবা উভয়ই হতে পারে।
এই অতিরিক্ত ধমনী থাকার অর্থ আমরা আঙুল ও হাতে আরও বেশি রক্তপ্রবাহ পাঠাতে পারবো; যাত সেগুলো বেশি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। তবে এর ফলে আমাদের কারপাল টানেল সিনড্রোমের (এক প্রকারের কব্জির প্রদাহজনিত রোগ। কারপাল টানেল অর্থাৎ কব্জির হাড়গুলির ও সংশ্লিষ্ট কব্জি ভাজকরার পেশীগুলির সংযোগকারী টেন্ডন সমূহের মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গে মিডিয়ান স্নায়ুর নিষ্পেষণ/পীড়ন জনিত কারণে এই প্রদাহ হয়ে থাকে।) ঝুঁকি বেড়ে যাবে। যা আমাদের হাতের ব্যবহার কমাতে বাধ্য করবে।
লুকাস আরও বলেন, যদি এই ধারাটি চলতে থাকে তাহলে ২১০০ সালের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের হাতে একটি মধ্যম ধমনী থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭০৩
আপনার মতামত জানানঃ