যশোরে মাদকদ্রব্যসহ পুলিশের দুই কনস্টেবলকে আটক করা হয়েছে। শনিবার রাতে শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি।
সূত্র মতে, আটক দুই কনস্টেবলের কাছ থেকে দুই বোতল ফেনসিডিল, ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ইয়াবা সেবনের জন্যে বিশেষভাবে তৈরি চারটি পাইপ লাইটার উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন মুজাহিদ (২৭) ও আজম মোল্যা (৩০)। আটক মুজাহিদ যশোরের চাঁচড়া ফাঁড়িতে কর্মরত। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার জয়গাছি গ্রামে। এছাড়া আজম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কমর্রত ছিলেন এবং তিনি সাময়িক বরখাস্ত। তার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কচুয়াপোতা গ্রামে।
এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কনস্টেবল মুজাহিদ ও আজম মোল্যা যশোর আবাসিক হোটেলের ৪১০ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কসবা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই খায়রুল আলম সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। তারা দুইজন মাদকদ্রব্য বিক্রির উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থান করছিলেন।
বেড়েছে মাদক চোরাচালান
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক চোরাচালানের পরিমাণ বাড়ছে৷ সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটককৃত মাদকের পরিমাণ ও এর সাথে জড়িতদের সংখ্যা তার আগের বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে৷
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ২০১৯ সালে এর পরিমান ছিল তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার পিস। ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে করোনার বছরে বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালেদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ৩৯ হাজার নয়শ ৬৮ কেজি গাঁজা আটক করে৷ ২০২০ সালে আটকের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার দুইশ ৭৯ কেজি৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালে একশ সাত দশমিক ৫৪ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে৷ ২০২০ সালে উদ্ধারের পরিমাণ ছিল দুইশ ১০ দশমিক ৪৪ কেজি৷
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি নামের এক মাদকের সন্ধানও পায় গোয়েন্দা বিভাগ৷ পুলিশের দাবি, রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে, যারা এক বছর ধরে এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত৷
পুলিশের সংশ্লিষ্টতা বেড়েছে অপরাধে
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে দুই দশকে (২০০১ থেকে ২০২১) পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে ১৯টি ইয়াবাসংক্রান্ত। এরপর সোনার বার লুটের মামলা ১০টি।
এ ছাড়া টাকা লুটের ৩টি, ডাকাতি ও খুনের ২টি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ২টি এবং অস্ত্র ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আছে ২টি মামলা।
মামলায় আসামি ৫৩ জন। এর মধ্যে একজন করে পুলিশ সুপার (এসপি), সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ও পরিদর্শক রয়েছেন। এ ছাড়া উপপরিদর্শক (এসআই) ২৪ জন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ৭ জন ও বাকি ১৯ জন কনস্টেবল।
অপরাধে অভিযুক্ত ৪৩ জন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে এক এসপিসহ সাতজন। বাকিরা জামিনে। এ পর্যন্ত তিন মামলায় সাবেক সাত পুলিশ সদস্যের সাজা হয়েছে।
গত ২৭ জুন নগরের কর্ণফুলী এলাকায় ১১ হাজার ৫৬০টি ইয়াবাসহ পুলিশের এক এসআইকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার নাম শেখ মাসুদ রানা (৩৫)। তিনি পিবিআই কক্সবাজার জেলায় কর্মরত ছিলেন।
এভাবে জেলা ও নগর মিলে ইয়াবা বিক্রি, পাচার ও আত্মসাতের মামলাসংখ্যা এখন ১৯। এর মধ্যে ১৭টি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। প্রতিটিতে অভিযুক্ত পুলিশের জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ সূত্র।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৪৫
আপনার মতামত জানানঃ