টিকা নিরাপত্তার ‘কোল্ড বক্স’ ছাড়াই টিকা স্থানান্তর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড জালিয়াতিসহ সরকারি তদন্তে ধরা পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘হুইপ বাহিনীর’ করা টিকা বাণিজ্য। তবে উপজেলার সরকারি টিকা সংরক্ষণাগারের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে।
সরকারি একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের টিকাদান প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সর্বোচ্চ জনবল দিয়ে পরিচালিত হয়। অথচ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও দুই দিনে শোভনদণ্ডী ইউনিয়নের সেই ক্যাম্পের মতো এত ঝোড়ো গতিতে টিকা প্রদান সম্ভব হয়নি। ওই ক্যাম্পে দুই দিনে দুই হাজার ৬০০ টিকা প্রদানের ঘটনা তাই প্রশ্নবিদ্ধ। তা ছাড়া ক্যাম্পটিতে কোনো ইপিআই প্রশিক্ষিত লোকবলও ছিল না।
উপজেলাটির হেলথ কমপ্লেক্সেই পূর্ণ লোকবল নিয়ে গোটা দিনে যেখানে (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত) মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টিকা প্রদান করার সক্ষমতা আছে, সেখানে একটি ইউনিয়নের ওই ক্যাম্পেই প্রশিক্ষিত লোকবল ছাড়া কিভাবে দুই দিনে দুই হাজার ৬০০ অর্থাৎ দিনে এক হাজার ৩০০ করে টিকা পুশ করা হলো, তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, অনুমোদন না নিয়ে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির বাড়ি লাগোয়া একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে টিকাগুলো দেওয়া হয়। তদন্তকালে অভিযুক্ত হইপপোষ্য কথিত ছাত্রলীগ নেতা ও ইপিআই কর্মসূচির টেকনোলজিস্ট রবিউল হুসাইন তদন্ত টিমকে মোট ২৬শ’ টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড উপস্থাপন করেন। কার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট বারকোড পরখ করে ধরা পড়েছে ভিন্নতা। ২৬শ’ কার্ডের মধ্যে দুই শতাধিক কার্ড পুরনো রেজিস্ট্রেশনকৃত।
জানা যায়, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি এলাকার জনগণকে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর তার নির্দেশনায় ৩০ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণের জন্য মহাজন হাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ আয়োজন করা হয়।
শোভনদন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টিকা প্রদানের জন্য প্রচারণা চালিয়ে এই সময় ও তারিখে ইউনিয়নবাসীকে (৩০ বছরের ঊর্ধ্বে) আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হয় টিকা গ্রহীতারা।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ইপিআই মো. রবিউল হোসেন গত রবিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তদন্ত কমিটিকে দুই হাজার ৬০০ টিকা দেওয়ার সপক্ষে নিবন্ধনের কপি জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, রবিউলের জমা দেওয়া এসব নিবন্ধনের মধ্যে বেশির ভাগ ভুয়া। এ ব্যাপারে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ডা. অজয় দাশ বলেন, ‘টিকা দেওয়া দুই হাজার ৬০০ জনের নিবন্ধনের যে কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে, এতে আমরা কিছু অনিয়ম পেয়েছি। পুরো বিষয়টি প্রতিবেদনে থাকবে।’
অভিযোগ উঠেছে, টিকা প্রদান করার সময় অনেকের কাছ থেকে রবিউলের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেট টাকা নিয়েছে। একেকজনের কাছ থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা নেয়। টাকা দেওয়া লোকের সংখ্যা হাজার হবে। আবার এমন অভিযোগও উঠেছে, প্রায় তিন হাজার টিকার মধ্যে কয়েক শ টিকা রবিউল অন্যত্র (বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিবর্গ) পাচার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন। হুইপের অনুসারীদের টিকা নিয়ে এই অবৈধ বাণিজ্যের বিষয়টি এখন এলাকায় মানুষের মুখে মুখে। তবে কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩০৩
আপনার মতামত জানানঃ