টিকা নিয়ে জালিয়াতি, টিকা চুরিসহ অনেকগুলো অনিয়ম ধরা পড়েছে ইতিমধ্যেই। তবে সম্প্রতি ধরা পড়েছে ফার্মেসিতে টিকা বিক্রির একটি ঘটনা। রাজধানীর দক্ষিণখানের চালাবন এলাকার হাজীপাড়ার আলী স্কুলের সামনের একটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে মডার্না ভ্যাকসিনসহ একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার রাত ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে ওই ফার্মেসি থেকে শ্রী বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া এক জাতীয় দৈনিককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক ওই জাতীয় দৈনিককে বলেন, দরিদ্র পরিবার সেবা কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানের টাকার বিনিময়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মডার্নার ভ্যাকসিনসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। কোথা থেকে কিভাবে এই ভ্যাকসিন তার কাছে এলো এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ওই ফার্মেসিতে দুই জন টিকা নিচ্ছিলেন। এ সময় ওই ফার্মেসি থেকে মডার্না ভ্যাকসিনের দুইটি ভাওয়েল উদ্ধার করা হয়েছে, যা ১৪-১৮ জনের শরীরে প্রয়োগ করা যেতো। এছাড়া, ভ্যাকসিনের বেশকিছু খালি বোতল জব্দ করা হয়েছে।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এসময় দক্ষিণখানের চলাবন এলাকার সেবা সংস্থা (ক্লিনিক) নামের একটি ফার্মেসি থেকে ২টি মডার্নার ভ্যাকসিন উদ্ধার করা হয়। পরে ওই ফার্মেসি থেকে মডার্নার ভ্যাকসিনের ব্যবহৃত ভাইলসহ ২১টি খালি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়।
প্রতিটি প্যাকেটে ১০টি টিকা রাখার জায়গা আছে। ওই ফার্মেসিতে এক হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতি ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হতো। তবে এ পর্যন্ত কতোজনকে সেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।পরে সরকারি নীতিমালা ছাড়া অবৈধভাবে করোনার টিকা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিজয়কৃষ্ণ তালুকদারকে আটক করা হয়।
এর আগেও টিকা চুরির অভিয়োগ উঠেছে হুইপ বাহিনীর বিরুদ্ধে। উপজেলার লোকজনকে টিকা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরে সিনোফার্মের কয়েক হাজার টিকা মজুদ ছিল। স্টোরে যথাযথ তাপমাত্রায় থাকা এসব টিকার মধ্যে প্রায় তিন হাজার টিকার বেশির ভাগই স্বাস্থ্য বিভাগের কাউকে না জানিয়ে কোল্ড বক্স ছাড়াই পাঁচ কিলোমিটার দূরে শোভনদন্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১২) ও জাতীয় সংসদের সরকারি দলের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর গ্রামের বাড়ির পাশে ওই কেন্দ্র। সেখানে ওই ভয়াবহ ঘটনার বিষয়ে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত সূত্রে জানা গেছে আরও ঘোরতর অনিয়মের চিত্র। সম্প্রতি এর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
টিকা প্রদান করার সময় অনেকের কাছ থেকে রবিউলের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেট টাকা নিয়েছে। একেকজনের কাছ থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা নেয়। টাকা দেওয়া লোকের সংখ্যা হাজার হবে। আবার এমন অভিযোগও উঠেছে, প্রায় তিন হাজার টিকার মধ্যে কয়েক শ টিকা রবিউল অন্যত্র (বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিবর্গ) পাচার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন। হুইপের অনুসারীদের টিকা নিয়ে এই অবৈধ বাণিজ্যের বিষয়টি এখন এলাকায় মানুষের মুখে মুখে। তবে কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৪০৬
আপনার মতামত জানানঃ