কানাডার ইতিহাসে টানা তৃতীয় দিনের মত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিটন গ্রামে। মঙ্গলবার ওই এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২১ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এর আগে কখনোই কানাডার কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেনি।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের পুলিশ জানায়, সোমবার পর্যন্ত তারা ৭০ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছে, মৃতদের অধিকাংশই বয়স্ক নাগরিক। তারা জানায়, এসব মৃত্যুর পেছনে ঐ অঞ্চলের তাপদাহ দায়ী।
রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তীব্র গরমে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের জনবহুল শহর ভ্যাঙ্কুভার ও পাশের বার্নাবি শহরে বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আরসিএমপির করপোরাল মাইকেল কালাঞ্জ বলেন, মৃত্যুর এসব ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে তাঁরা মারা গেছেন।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের একটি গ্রাম লুটন। গতকাল সেখানকার মানুষ বৈরী আবহাওয়ার চরম রূপ দেখেছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এদিন বিকেলে লুটনে তাপমাত্রা উঠেছিল ১২১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কানাডার ইতিহাসে এটাই সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। চলতি সপ্তাহের আগে কানাডায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়নি। তিন দিন ধরেই লুটনে রেকর্ডভাঙা তাপমাত্রা বজায় রয়েছে।
শুধু ব্রিটিশ কলাম্বিয়া নয়, কানাডার মেরু অঞ্চল থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন, ওয়াশিংটন অবধি তাপমাত্রা স্বাভাবিক সময়ের গড়ের তুলনায় বেশি রয়েছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলে তাপমাত্রা ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠেছিল। আর অরিগন অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর পোর্টল্যান্ডের তাপমাত্রা ছিল আরও বেশি। গতকাল সেখানে ১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস)। ১৯৪০-এর দশকের পরে যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে এবার।
সিয়াটলের স্থানীয় এক ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, তাপমাত্রা ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠলেই ওই দিনকে উষ্ণ ধরা হয়। সবাই টি-শার্ট আর শর্টস পরে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। সেখানে এখন দিনের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়েছে।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার মানুষ সাধারণত তুমুল তুষারপাতের সঙ্গে পরিচিত। তীব্র গরমের সঙ্গে অভ্যস্ত নয় তারা। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেরু এলাকাগুলোয়ও রেকর্ডভাঙা গরম দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে এনভায়রনমেন্ট কানাডা নামক সংস্থার জ্যেষ্ঠ জলবায়ুবিদ ডেভিড ফিলিপস বলেন, ‘কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় শীতলতম ও তুষারপাতপ্রবণ দেশ। আমরা তুষারঝড়ের সঙ্গে পরিচিত। এমন তীব্র গরমের সঙ্গে অভ্যস্ত নই আমরা।’
গরমের কারণে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত এলাকার মানুষ ফ্যান ও বহনযোগ্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কিনতে দোকানে ভিড় করছে। গরম থেকে স্বস্তি দিতে ভ্যাঙ্কুভারে সড়কের পাশে কৃত্রিম ফোয়ারা বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় লোকজনের অনেককেই ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য হচ্ছে। যাদের বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেই, তাদের অনেককেই গাড়িতে কিংবা বাড়ির বাইরে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছে। খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অ্যালবার্টা, মেনিটোবা, নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিসহ কানাডার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সপ্তাহজুড়েই ভয়াবহ দাবদাহ বয়ে যেতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে এনভায়রনমেন্ট কানাডা নামে একটি সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকায়ও তাপমাত্রা সর্বকালের রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সেখানকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস। বলা হয়েছে, পুরো অঞ্চলে ‘হিট ডোম’ তৈরি হয়েছে, যা সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়তে থাকলে এই ধরণের তাপদাহ সৃষ্টি হওয়ার হারও বাড়তে পারে। তবে যে কোন একটি ঘটনার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করাও পুরোপুরি সঠিক নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৪৫
আপনার মতামত জানানঃ