ডেস্ক রিপোর্ট
সিলেটে পুলিশি হেফাজতে রায়হান হত্যাকাণ্ডের আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল দাবি করেছে।
আকবরের দাবি, “সিনিয়র অফিসাররা আমাকে জানায়, যেহেতু সাসপেনশন (সাময়িক বরখাস্ত) হয়ে গেছ, আপাতত তুমি কোথাও চলে যাও। দুই মাস পর সব কিছু ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পরিস্থিতি হ্যান্ডল করা যাবে।” ভারতের খাসিয়াদের হাতে আটক হবার পর তাদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছে আকবর। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এর আগে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের মাজেরগাঁও সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল আকবর।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আকবরকে ভারতীয় খাসিয়ারা রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কি কারণে রায়হানকে সে হত্যা করেছিল- এ প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, “রায়হান ছিনতাই করেছিল। এ জন্য তাকে মারা হয়েছে।” রায়হানকে সে একা মারেনি জানিয়ে আকবর জানায়, “তাকে ৫-৬ জন পাবলিক মেরেছে। রায়হানকে আমি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।”
ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতীয় খাসিয়াদের প্রশ্নের জবাবে সে তার নাম আকবর বলে জানান। “মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য তোমরা মানুষ খুন করো”- এই বলে খাসিয়ারা যখন তাকে তিরস্কার করছিল, উত্তরে আকবর জানায়, “আমি মারি নাই”। ওই ভিডিওতেই খাসিয়ারা জানায়, রায়হানকে হত্যার ঘটনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনেছিল তারা। গত রবিবার রাতে মেঘালয়ের শিলচর এলাকায় এসআই আকবরকে দেখে চিনতে পেরে তাকে আটক করেন স্থানীয় এক খাসিয়া যুবক। পরে রশি দিয়ে বেঁধে তাকে বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয় খাসিয়ারা।
এদিকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবরকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় সাদা পোশাকের পুলিশ আটক করেছে বলে জেলা পুলিশ দাবি করেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘গত ২৬ দিন ধরে আকবরকে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ। গত রাতে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে আজ সে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করবে তাই কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়। তারাই আকবরকে আটক করেন।’
কানাইঘাট ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ভারতের শিলচর এলাকায় স্থানীয় এলাকাবাসী এসআই আকবরকে আটক করেন। এরপর রহিম নামের এক বাংলাদেশির কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। রহিম তাকে বাংলাদেশ অভিমুখে আনলে সীমান্ত এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।”
কানাইঘাট থানায় উপস্থিত এক সাংবাদিক জানান, সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই আকবরকে কানাইঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন রায়হান আহমদ। পরদিন রবিবার সকালে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার পরদিন হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। মামলায় আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেনসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে। আকবর ১৩ অক্টোবর থেকে পলাতক ছিলেন। রায়হান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত এএসআই আশেক এলাহীকে ৫ দিনের এবং কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদকে দুই দফায় ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই।
রায়হান নগরীর একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন। তিনি স্ত্রী, আড়াই মাস বয়সী এক মেয়ে ও মাসহ আখালিয়ার নিহারিপাড়ায় বসবাস করতেন। পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যুর ঘটনায় “বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদ” নামে এলাকাবাসীর সম্মিলিত মোর্চা প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর। এসআই আকবরসহ জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন চলছে।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ