পাশাপাশি দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বরফ গলতে যাচ্ছে এবার। আবারও সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে দুই দেশের পক্ষ থেকেই। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেশটি থেকে চিনি ও তুলা আমদানি শুরু করছে পাকিস্তান। আজ বুধবার(৩১ মার্চ) পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার এ ঘোষণা দিয়েছেন।
কয়েকদিনের নানা জল্পনা শেষে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহ দেখিয়েছ পাকিস্তান। তবে শুরুটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাকিস্তানকে দেওয়া এক শুভেচ্ছাবার্তা থেকে হয়।
কয়েকদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিঠি পাঠিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রীকে। পাকিস্তানের জাতীয় সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সৌজন্যমূলক শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি ছিল সেটি। সেই চিঠি জবাবে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চেয়ে মোদীকে চিঠি দেন ইমরান খান।
পাকিস্তান দিবসে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদীকে ‘ধন্যবাদ’ জানান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে ইমরান লেখেন, ‘ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় পাকিস্তানের মানুষ।
কাশ্মীর ইস্যু উহ্য রেখেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইস্তানবুলে ভারত-পাক দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাক্ষাতের পরেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এই চিঠি। সেকারণেই এটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও ইস্তানবুলে আয়োজিত সম্মেলনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও বৈঠক বা আলোচনা হয়নি। এই নিয়ে জল্পনা শুরু হলে সেটা বাস্তবে হয়নি। তারপরেই ইমরান খানের শান্তির বার্তা শোরগোল ফেলে দিয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা লোপের পর ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। সেসময় ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বরখাস্ত করে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য, রেল ও বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেয় তারা। তবে সম্প্রতি পাকিস্তান দিবসের দিন মোদীর শুভেচ্ছা বার্তা ইসলামাবাদে পৌঁছোনোর পর দুই দেশের মধ্যে ফের কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সে চিঠির জবাবে চিঠি লেখেন পাক প্রধানমন্ত্রীও।
চিঠিতে পাক প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, পাকিস্তানের মানুষ ভারত সহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।এটা ঠিক যে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিস্থাপন তখনই সম্ভব, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যা সহ যাবতীয় সমাধান সম্ভব হবে।তবে ভারতের তরফে এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইমরানের আরোগ্য কামনা করে ট্যুইট করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্বাস ও বন্ধুত্বপূর্ণ বাতাবরণ তৈরি করারও বার্তা দেন। তবে তিনি বলেন যে সন্ত্রাস দমন না করলে সম্পর্কে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যাবে না। তার পালটা হিসাবেই কাশ্মীরের কথা ইমরান খান উত্থাপন করলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যে প্রশাসনিক স্তরে এভাবে চিঠি চালাচালি দুই দেশের মধ্যে আলোচনার রাস্তাকে আরো প্রশস্ত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেশটি থেকে চিনি ও তুলা আমদানি শুরু করছে পাকিস্তান। বুধবার পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার এ ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি (ইসিসি) বেসরকারিভাবে ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চিনি আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে চিনির দামে ব্যাপক ফারাক থাকায় আমদানি আবারও শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী। তার ভাষ্যমতে, পাকিস্তানের চেয়ে ভারতে চিনির দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম।
হাম্মাদ আজহার বলেন, আমরা চিনি আমদানির অনুমতি দিয়েছি, তবে বাকি বিশ্বেও দাম চড়া হওয়ায় সেটি সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে দাম তুলনামূলক কম। একারণে সেখান থেকে বেসরকারিভাবে পাঁচ লাখ টন চিনি আবারও আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তুলা আমদানির অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তানের পোশাক রফতানি বাড়ায় তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গত বছর এর উৎপাদন ভালো হয়নি।
পাকিস্তানি এ মন্ত্রী বলেন, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মিসর বা অন্য দেশ থেকে তুলা আমদানি করতে পারে। দামের এই পার্থক্য আমাদের এসএমই খাতের ক্ষতি করছে।
পাকিস্তানের টেক্সটাইলের কর্মকর্তারা বলছেন, সুতির সুতার সঙ্কট এবং কর ও আয়কর পরিশোধের অযোগ্যতা রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে করে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আদেশ ঝুঁকিতে পড়েছে বলেও জানা গেছে।
পাকিস্তান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিটিইএ) প্রধান মুহাম্মদ আহমদ এক বিবৃতিতে জানান, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য ভারত থেকে সুতির সুতা আমদানির ব্যাপারে অনুমতি দেওয়া উচিত।
করোনাভাইরাসের বড় ধরনের ধাক্কার পর রপ্তানিকারকদের কর ও আয়কর ফেরত (৫০ মিলিয়ন রুপির বেশি) বিতরণে অযৌক্তিক বিলম্বের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পিটিইএ’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক খুররাম মুখতার।
তিনি আরো বলেন, রপ্তানিকারকদের ওপর আর্থিক চাপ কমাতে সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে।
বলা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে এসব পণ্য আমদানি শুরু করছে পাকিস্তান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ