শুভ্র সরকার :: ফারাক্কা বাঁধের বিরুপ প্রভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা। সেই সাথে পদ্মার শাখা-প্রশাখা অন্তত ৩৬টি নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশাল বিশাল চর জায়গা করে নিচ্ছে পদ্মা ও শাখা নদীগুলোর বুকে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও চাষাবাদ, নৌ-যোগাযোগও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। তবে শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয় ফারাক্কা বাঁধ ভারতের গলায়ও হাড় হয়ে আটকে আছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রতিবছর গঙ্গা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যেমন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদসহ বিহারের বেশ কিছু জেলা ভয়াবহ বন্যায় কবলিত হয়। তখন পানির চাপ সামলাতে বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয় ভারত। তখন বন্যা কবলিত হয় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অথচ গঙ্গার পানি নিয়ে ত্রিশ বছর মেয়াদী গ্যারান্টিক্লজহীন চুক্তি করলেও বাংলাদেশ কখনোই তার পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। চুক্তির নামে হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। পদ্মা অববাহিকার কোটি কোটি মানুষ ভারতের ইচ্ছের পুতুলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা। আর বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়ে এপারে ডুবিয়ে মারার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই বন্ধু রাষ্ট্র।
ফারাক্কার প্রভাবে মরে যাচ্ছে পদ্মা
ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প-কারখানা সবকিছুতে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। ফারাক্কার কারণে যশোর-খুলনা অঞ্চলে মিঠাপানির প্রবাহ কমে গেছে। পদ্মার তলদেশ ওপরে উঠে এসেছে। এখন পদ্মায় তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। দুই শতাধিক প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ির অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির পথে।
চুক্তির ফলে বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধ থেকে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
পদ্মার পানি দিয়ে শুকনো মৌসুমে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় সেচকাজ চালানো হয়। এ নদীর পানি দিয়ে প্রায় ২০ ভাগ জমির সেচকাজ চলে। ভারত পানি প্রত্যাহারের যে একতরফা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
পদ্মা নদীতে পানি স্বল্পতার কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরণ অবস্থা স্থায়ী রুপ নিতে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। পদ্মা পাড়ে এখন আর গাঙচিল, মাছরাঙা, বেলেহাঁস দেখা যায় না।
নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। পানি সঙ্কটে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পদ্মার পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পসহ পশ্চিমাঞ্চলের বহু সংখ্যক সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
বরেন্দ্রের অনেক স্থানে ডিপটিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে পানির হাহাকার।
পদ্মায় পানি না থাকায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েক দফা গড়াই নদী খনন করা হলেও তেমন কোনও সুফল আসেনি। বর্ষা গেলেই চরের বালি আবার নদীতে নেমে গিয়ে ভরাট হচ্ছে নদী। রুগ্ন পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়সহ গড়াই নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এসব চরে কৃষকরা ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন।
পদ্মার প্রবাহ রাজশাহী নগরী থেকে সরে গেছে মাইল দেড়েক দূরে। পানি কমে চর জাগছে। নদীও সরে যাচ্ছে। ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ব্রীজের পনেরটি পিলারের মধ্যে সাতটির নীচ দিয়ে পানির প্রবাহ রয়েছে। ভেড়ামারা পয়েন্টের পাঁচটি পিলারে দ্রুত পানি কমছে। ইতোমধ্যে মাঝ বরাবর চর জেগে উঠেছে।
পদ্মাসহ শাখা প্রশাখা নদ নদীগুলো মরে যাবার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। গত ত্রিশ বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পঞ্চাশ ষাট ফুট নিচে নেমে গেছে। ভর করেছে আর্সেনিক। এখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর একশো পনের ফিট নীচে অবস্থান করছে। ভূ-উপরিস্থ পানি না থাকায় ব্যাপক হারে গভীর নলকূপের ব্যবহারে এমনটি হচ্ছে। বরেন্দ্রের অনেক স্থানে ডিপটিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে পানির হাহাকার।
ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণ
ভারত সরকার গঙ্গার পানি রোধে ১৯৫১ সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৫ সালে শুরু হয় ফারাক্কা ব্যারেজের কার্যকারিতা।
এরপর থেকেই মরে যেতে থাকে পদ্মা ও শাখা নদীগুলো। যশোর-কুষ্টিয়ার অনেক নদী পদ্মার সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে। পদ্মার প্রধান শাখা নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ, ভৈরব, মাথা ভাঙ্গা, কুমার, কপোতাক্ষ, পশুর, বড়াল, মাথাভাঙ্গা, ইছামতি, গড়াই প্রভৃতি।
জানা যায়, সমুদ্র থেকে ৪২ ফুট উপরে অবস্থিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট থেকে ভারত সীমান্ত ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ কিলোমিটার উজানে ফারাক্কা বাঁধ অবস্থিত। এই নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে প্রথমে হরিদ্বারে, শেষে ফারাক্কায়।
পদ্মা নদী রাজশাহী, পাবনা ও ফরিদপুর জেলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। হার্ডিঞ্জ সেতুর উজানে রয়েছে পদ্মার পানি পরিমাপের মিটার গেইজ। এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের পানি বিভাগের কর্মকর্তারা পানি মাপেন।
ফারাক্কা চুক্তি
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সাথে ফারাক্কা পয়েন্ট প্রবাহ ভিত্তিতে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে বিভিন্ন প্রবাহ পরিস্থিতি অনুযায়ী বণ্টন ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয় এবং ১৯৭৭-১৯৮৯ সাল অবধি গঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহকে বেঞ্চ মার্ক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
লক্ষণীয়, এই সময়টাতে ভারত ফারাক্কার উজান থেকে ব্যাপকহারে পানি অপসারণ শুরু করে। সুতরাং ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ভাগাভাগি শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই না। এই চুক্তিতে বাংলাদেশকে খরার মৌসুমে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার গ্যারান্টি রয়েছে অথচ খরার সময় পদ্মা এবং তার শাখা প্রশাখাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম ৬০ হাজার কিউসেক।
“সংকটময় শুকনো মৌসুমে ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ প্রতিশ্রুত পরিমাণ পানি পায় না।”
ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের মত এবারো ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে শুকনো মৌসুম। চুক্তি মোতাবেক এই শুস্ক মৌসুমের ৩১ মে পর্যন্ত উভয় দেশ দশদিন ওয়ারী ভিত্তিতে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে নেবার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো চুক্তির ২৫ বছরে বাংলাদেশ চুক্তি মোতাবেক পানি কখনো পায়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা
বাংলাদেশ ও ভারতের ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম (২জানুয়ারি) থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি পরিমাপের কাজ শুরু করেছেন। ৩১ মে পর্যন্ত এ পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ চলবে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভারত থেকে দুজন আর বাংলাদেশ থেকে চারজনের বিশেষজ্ঞ টিম পর্যবেক্ষণ কাজ করছেন।
ভারতের প্রতিনিধিরা হলেন কেন্দ্রীয় নদী কমিশনের উপ-পরিচালক (ডিডি) শ্রী ভেংক্টেশ্বর লুই এবং সিডব্লিউসির সহকারী পরিচালক (এডি) নগেন্দ্র কুমার। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন আহমদ, প্রকৌশলী রেজাউল করিম প্রকৌশলী সুমন মিয়া এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সিব্বির হোসেন।
পাউবো উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোর্শেদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় ৮৮ হাজার কিউসেক পানি বিদ্যমান। গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গায় এক লাখ ৬১ হাজার কিউসেক পানি ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬০ হাজার ৬১ কিউসেক এবং ভারতের ৪০ হাজার কিউসেক পানি। একই সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল এক লাখ দুই হাজার ৫৭৪ কিউসেক পানি।
গত বছরের তুলনায় এবার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পয়েন্টে অন্তত ১৪ হাজার কিউসেক পানি কম বিদ্যমান। চুক্তির শর্তানুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে প্রতি ১০ দিন পর পর পানি প্রাপ্তির তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং তা ৩১ মে পর্যন্ত চলবে।
ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা
১৯৯৬ সালের ফারাক্কায় গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত প্রতিবারে দশ-দিন করে ৩৫ হাজার কিউসেক পরিমাণ পানি পাবে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কাউন্সিলের ওয়াটার পলিসি ‘আ ক্রিটিক্যাল রিভিউ অব দ্য গাঙ্গেস ওয়াটার শেয়ারিং অ্যারেঞ্জমেন্ট’ শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। সেখানে বলা হয়েছে: চুক্তি-পরবর্তী উপাত্তের (১৯৯৭-২০১৬) স্ট্যাটিসটিক্যাল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পানির চাহিদা যখন তীব্র থাকে, সেই সংকটময় শুকনো মৌসুমে ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ প্রতিশ্রুত পরিমাণ পানি পায় না।”
১৯৭৫ সাল থেকে ফারাক্কার উজান থেকে পানি টেনে নিয়ে যাওয়ার ফলে, বিশাল বরেন্দ্রভূমি অঞ্চলসহ পদ্মা ও তার উপনদীগুলোর অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ এবং উপরিভাগের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
বোরো ফসলের আবাদ এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুকনো মৌসুমে পদ্মার অন্যতম উপনদী ও ‘সুন্দরবনের লাইফলাইন’ নামে পরিচিত পশুর নদী শুকিয়ে যায়। তখন এর উজানে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে।
ভারতের জন্যও অভিশাপ এই ফারাক্কা বাঁধ
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একসময়কার প্রধান প্রকৌশলী কপিল ভট্টাচার্যও ফারাক্কা বাঁধটি নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৯৬১ সালে ‘সিল্টিং অব ক্যালকাটা পোর্ট’ শিরোনামের এক রিপোর্টে তিনি লেখেন, বাঁধটি তৈরির আগে বন্যার প্রাবল্য ও বন্যা-প্রসূত পলি-সৃষ্টির বিপদ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না। ফারাক্কার কারণে কলকাতা বন্দর মরে গেছে। প্রধান নিষ্কাশন ব্যবস্থাগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় বার বার বন্যার আশঙ্কাও বাড়তে থাকবে।
ফারাক্কা নিয়ে তার সতর্কবাণী আমলে না নিলে মানুষকে ভবিষ্যতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলেও উল্লেখ করেন কপিল। দেখা যাচ্ছে, কপিলের সব আশঙ্কাই এখন বাস্তব।
২.৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার উজানে। মূল উদ্দেশ্য ছিল কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষা তথা সেখানে পলির স্তর জমতে না দেয়া। সে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পানীয় জলের জোগান বজায় রাখা।
ষাটের দশকে কপিলের সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাঁধটি বরং নদীর তলদেশে পলির স্তর বাড়াবে। কারণ শুকনো মৌসুমে বাঁধের কাছে পাওয়া যাবে অর্ধেক পরিমাণ পানি যেটুকু হুগলির দিকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। সে কারণেই বাড়বে পলি। আর বাংলাদেশেও কমে যাবে গঙ্গার পানিপ্রবাহ।
কপিল স্পষ্টভাবেই লিখেছিলেন, বাঁধের নকশাটি এমনভাবে তৈরি যে, বন্যা দেখা দিলে খুব কম পানি সরিয়ে নেওয়া যাবে। ফলে গঙ্গা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যেমন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদসহ বিহারের বেশ কিছু জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা থেকে যাবে।
সে সময় এসব সাবধানবাণী উচ্চারণের জন্য কপিলকে পাকিস্তানের চর হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ভারতের একটি গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী কপিলের তিনটি সতর্কবাণী এখন সত্য হয়েছে। সে বছর বিহারে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে মূখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবি জানান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার খবরে প্রকাশ, নীতিশ তখন বলেছিলেন, “বিহারের এই বন্যার কারণ গঙ্গায় ফরাক্কার নির্মাণের ফলে নদীতে জমে যাওয়া পলি। এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় একটাই, বাঁধটা সরিয়ে নেওয়া।”
কেন্দ্রীয় সরকার যেন বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কার মাধ্যমে গঙ্গার উজান থেকে যতটুকু সম্ভব পানি সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা নেন, গত কয়েক বছর ধরে নীতিশ কুমার সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেটি হলে বিহার রাজ্যের নদীবিধৌত এলাকাগুলোতে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা কেটে যাবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্ট বলা হয়, বর্ষাতে পাটনাসহ বিহারের মোট বারোটি জেলায় গঙ্গার পানি উপচে বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় নীতিশ একইভাবে চেষ্টা করছেন। নীতিশের সঙ্গে তার পানিসম্পদ মন্ত্রী সঞ্জয় কুমার ঝা রয়েছেন। বিহারে বন্যার পানি পুরোপুরি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ফারাক্কা দিয়ে নিয়মিতভাবে কমপক্ষে ১৮ লাখ কিউসেক (কিউবিক মিটার পার সেকেন্ড) পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আহ্বান জানান তারা।
যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কে এম আনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, শুকনো মৌসুমে পানি পাবার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টনের চুক্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। যে চুক্তির ফলে বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধ থেকে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
বিহার ও উত্তর প্রদেশের বন্যার প্রসঙ্গ টেনে আনোয়ার বললেন, “বাঁধের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ভারতের একটি রাজ্যকে সুবিধা দিতে পারে। কিন্তু এটা অন্যসব ভারতীয় রাজ্যের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গঙ্গা প্রধানত তিনটি উৎস থেকে পানি প্রবাহ পেয়ে থাকে। এগুলো হলো মূল উৎসের হিমবাহ থেকে উৎসারিত পানি, উপনদীগুলোর প্রবাহ এবং বৃষ্টির পানি। ভারত এসব উৎসের একটি ছাড়া সবকটি বাধাগ্রস্ত করে নব্বই ভাগ পানি সরিয়ে নেবার ফলে নদীতে শতকরা দশভাগ পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে। নেপালের কোশি থেকে শুরু করে ফারাক্কা পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথে ভারত পানি প্রত্যাহারের যে এক তরফা কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তাতে ভাটির দেশ বাংলাদেশের বিপর্যয় অবশম্ভাবি হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের মানুষ চুক্তির নামে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১৩৬
আপনার মতামত জানানঃ