যুক্তরাজ্য প্রবাসীর স্ত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন পুলিশের নায়েক মো. নুর আলম। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত ইয়াবা সেবনের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বাসভবনের গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসব অভিযোগ উঠলে তাকে ক্লোজ করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৮ মার্চ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জাতীয় এক দৈনিককে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের মাধ্যমে জানা যায়, বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে গত বছরের ২২ আগস্ট র্যাব অফিসে ফেসবুকের ফেক আইডি সংক্রান্ত অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর স্ত্রী। সেখান থেকেই তাদের ফলো করতে শুরু করেন পুলিশের এক নায়েক। ফেরার পথে নিজেকে র্যাব পরিচয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। এর পর থেকে ফোন করে বারবার অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই নায়েক। তার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ফোন বন্ধ রাখেন ওই গৃহবধূ। মোবাইল বন্ধ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বন্ধুকে নিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর বাসায় গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন নায়েক। ছুরি দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে নিজের সঙ্গে অশ্লীল ছবি তোলেন। এসব ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ওই নারীর স্বামীর কাছে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেন। যার ফলে তাদের সংসার জীবনের নানান ঝামেলার সম্মুখীন হয়। তবুও থেমে থাকেননি পুলিশের এ নায়েক। এক সন্তানের জননী ওই নারীকে প্রতিনিয়ত জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ওই নারী তখন বলেন, নুর আলমের ভয়ে আমি দিশাহারা। বিষয়টি এসপিকেও জানিয়েছি। নুর আলম হুমকি দিয়ে বলে : ‘সিলেটের রায়হানকে পুলিশ ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশের কী হইছে? বাড়াবাড়ি করলে তুই আর তর ছেলেকেও তুলে নিয়ে হত্যা করব।’
এসব ছাড়াও নুর আলমের বিরুদ্ধে শহরের চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত ইয়াবা সেবনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, ধর্মপাশা থানা পুলিশের কাছে ইয়াবাসহ ধরাও পড়েছিলেন নুর আলম।
মাদক সংশ্লিষ্টতা ও প্রবাসীর স্ত্রীকে হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান। দীর্ঘ তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগীয় গুরুদণ্ড হিসেবে তাকে পুলিশ বিভাগের চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। অভিযুক্ত নুর আলম হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মো. ইসলাম উদ্দিনের ছেলে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর এসবের সবকটাই ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা।
তারা বলেন, পুলিশে ঢোকার পর স্বাভাবিক একজনের ভেতরেও আশ্চর্য এক পরিবর্তন আসে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত ভেবে তারা যা ইচ্ছা তা করার মানসিকতা নিয়ে দাপটের সাথে চলতে থাকেন। ফলে ঘর থেকে বাহির কেউ তাদের কুৎসিত হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসার হয়েও প্রবাসীর স্ত্রীকে যৌন হয়রানি করা আমাদের সমাজের এক চরম দুর্দশার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন আরও অসংখ্য অভিযোগ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৯৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ