বণর্ণবাদ কি শুধুই সাদা-কালো? সমাজ গবেষকরা বলছেন, কেবল রঙ না, এটি প্রবল আর প্রান্তিকতার বিষয়। আধিপত্য আর ক্ষমতার বিষয়। শ্বেতাঙ্গ মানুষের দাস বাণিজ্য আর উপনিবেশিক ইতিহাস থেকে উঠে আসা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের বিপরীতে সব জাতি, সব বর্ণ এবং সব ধর্মের মানুষ আজ বর্ণবাদের শিকার।
এশীয়দের প্রতি বর্ণবৈষম্য এবং বিদ্বেষের ঘটনার উপর নতুন তথ্য সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব। যার মধ্যে আছে এড়িয়ে চলা, মৌখিক হয়রানি, দোষারোপ, এমনকি শারিরীক নির্যাতনও। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যের চেয়েও বাস্তব অবস্থা বেশি ভয়াবহ। এছাড়া, এ সমস্ত ঘটনার একটি বড় অংশ ঘটেছে এশীয় নারীদের সাথে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে স্টপ এএপিআই হেট রিপোর্টিং সেন্টার। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
করোনা মহামারীর এই সময়টাতে ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে বর্ণবিদ্বেষ। প্রায় ৩ হাজার ৮০০ টি ঘটনা ঘটেছে। যা কিনা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশিই। চিন্তার বিষয়, এ সমস্ত ঘটনার ৬৮% ঘটেছে নারীদের প্রতি। যাদের মধ্যে ২৯% নারী তার সাথে ঘটনা বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছে।
প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য
প্রতিবেদনে গত বছরের ১৯ মার্চ থেকে এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অব্দি ঘটনা বৈষম্যমূলক ঘটনাগুলো উঠে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, এ বছরেই দু’মাসে ৫০৩টি ঘটনা ঘটেছে। হয়রানিমূলক কথা বলা বা এড়িয়ে চলা সবচে’ বেশি ঘটছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী যা কিনা মোট ঘটনার ৬৮.১% এবং ২০.৫%। তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘটেছে শারীরিক নির্যাতন। মোট ঘটনার ১১.১%। প্রায় এক তৃতীয়াংশের অধিক ঘটনা ঘটেছে কর্মক্ষেত্রে। এক চতুর্থাংশ ঘটেছে রাস্তায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষদের থেকে ২.৩ গুণ বেশি বৈষম্যমূলক ঘটনা ঘটেছে নারীদের সাথে। প্রতিবেদনের যথাযথ পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, নারীদের সাথে মৌখিক হয়রানির যে ঘটনা ঘটেছে, তার কারণ বর্ণবাদী ও পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা।
একজন চাইনিজ আমেরিকান মহিলা জানান, ‘সাবওয়েতে একজন পুরুষ আমার হাত শক্ত করে ধরে তার লাইটার আমার গায়ে ছুঁড়ে দেয়ার হুমকি দেয় এবং সে ক্ষিপ্ততার সাথে বলে, এখান থেকে দূর হয়ে যাও।’
আর একজন মহিলা, যে কিনা ফিলিপিনো আমেরিকান, জানান, ‘ওয়াশিংটন ডিসির একটি মেট্রো স্টেশনে আমার প্রেমিকের সাথে থাকাকালীন আমাদেরকে একজন গালাগাল করে। থুথু ছিটায় আমাদের দিকে। এমনকি শারিরীকভাবে হুমকিও দেয়।’
যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষের বিশ্লেষণ উঠে এসেছে সিএনএনের এক প্রতিবেদনেও। ওই বিশ্লেষণে স্টিফেন কলিনসন দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এশীয় আমেরিকানদের তাড়া করে ফিরছে বর্ণবিদ্বেষের মতো ভীতিকর এক অবস্থা। জাতিগত বিদ্বেষ, সহিংসতা ও ঘৃণামূলক কথাবার্তার মধ্যে মাসের পর মাস আতঙ্ক নিয়ে পার করছেন এশীয়-আমেরিকানরা।
বর্ণবাদী ঘটনা বৃদ্ধির কারণ
সান ফ্রান্সিসকো স্টেইট ইউনিভার্সিটির এশীয়ান আমেরিকান স্টাডিজের অধ্যাপক এবং ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা রাসেল জিউং এনবিসিকে বলেন, এই বর্ণবাদী ও পুরষতান্ত্রিক আচারণের কারণ হতে পারে এশীয়ান নারীরা নম্র ও আত্মনির্ভরশীল নয়, এমন বাঁধাধরা চিন্তাভাবনা।
তিনি বলেন, প্রচলিত ধারনায় এবং যেমনটা ঘটে এসেছে তাতে বর্ণবিদ্বেষীদের কাছে এশীয়ান নারীরা সহজ শিকার।
জিউং জোর দিয়ে বলেন, নারীরা সবসময়ই পুরুষের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়ে আসছে। নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিতে আছে আরও বেশি। তবে এই করোনা মহামারীর মধ্যে এশীয়ান নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচারণের একটা অজুহাত নিপীড়নকারীরা পেয়ে গেছে।
আমরা খেয়াল করেছি একেবারে গোঁড়ার সময় থেকেই এটা ছিল নিয়মিত এক চিত্র, জিউং বলেন। নির্যাতনকারীরা তাদেরকই আক্রমণ করে যারা সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এই প্রবণতা আমরা আমাদের বয়স্ক এবং তরুণ, দুই বয়েসীদের মধ্যেই দেখতে পাই।
অভিযোগ না করার প্রবণতা
জিউং সতর্ক করে দেন সম্প্রতি সময়ে মানুষের বর্ণবাদী আচারণের এই হঠাৎ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে। কারণ ২০২০ সালে ঘটা অনেক ঘটনার অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে ২০২১ সালে। মানুষ এখন কথা বলতে শুরু করছে। রিপোর্ট অনুসারে, মানুষের মধ্যে অভিযোগ দায়ের না করার এক প্রবণতা ছিল।
আমরা ভেবেছিলাম পুরো গ্রীষ্ম জুড়েই এ ধরণের ঘটনা কমে আসছে। কিন্তু আমি মনে করি বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়া অধিকাংশরাই অভিযোগ দায়ের করেননি। যা কিনা বর্ণবাদী আচারণকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, তিনি ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু এখন আশার কথা হল, মানুষ অভিযোগ জানাচ্ছে। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। আমি মনে করি দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিত ভাবে এশীয়দের প্রতি বর্ণবাদী আচারণ করা হয়েছে এবং এখন আরও নিয়মিতভাবে আমরা এসব ঘটনার বিরুদ্ধে মানুষকে কথা বলতে এবং অভিযোগ জানাতে দেখবো।
বছরের শুরুর দিকে সহিংসতার ঝোঁক ছিল এশীয় আমেরিকান বয়স্কদের দিকে। বিশেষ করে এমন ঘটনার কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে, সাধারণ মানুষ এবং মূলধারার গণমাধ্যমগুলো নড়েচড়ে বসে। যা কিনা মানুষকে এ ধরণের আচারণ বা সহিংসতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত করছে, জিউং বলেন।
বয়স্কদের উপর ওই প্রকোপই বর্ণবাদী আচারণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে মানুষকে উৎসাহিত করেছে। যদিও জিউং এই বিশেষ ঘটনাটি যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন জাতিগতভাবে প্রভাবিত হবার স্পষ্ট কারণ নেই এবং সমাজে জনসম্মুখে প্রতিনিয়ত ঘটা বর্ণবাদী আচারণগুলোর মধ্যে পার্থক্য দাঁড় করিয়েছেন, যার স্পষ্ট যোগসূত্র আছে এই মহামারী এবং এশীয় আমেরিকানদের সাথে।
প্রকৃত অবস্থার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া
আমি মনে করি, যে সহিংসতার আমরা এখন সম্মুখীন হচ্ছি এবং যে বর্ণবৈষম্য আমরা গত বছর দেখেছি, এদের কারণ ভিন্ন। যদিও ঘটনাগুলো সম্পর্কযুক্ত, জিউং বলেন।
আমরা খুব সতর্কতার সাথে দেখেছি যে এশীয় আমেরিকানদের সাথে ঘটা এই সব সহিংসতার ঘটনা সবসময়ই ঘটে আসছে এবং এর হারও অনেক বেশি। এর সাথে গত বছর থেকে যুক্ত হয়েছে বর্ণবৈষম্য এবং এশীয় বয়স্কদের সাথে ঘটা অপরাধগুলো। যা কিনা এখন পুরো জাতির মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা অস্বীকারের কারণ নেই যে বয়স্কদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনে পক্ষপাত নেই। তবে এই দুই ঘটনাকে এক করে ফেলা উচিত হবে না। এদের কারণ এবং উদ্দেশ্য আলাদা।
এটাই সমস্যা— মানুষ এক করে ফেলে, তিনি বলেন। কিন্তু দুটি ভিন্ন ঘটনাকে এক করে তার প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভব হয় না।
এএপিআই ডেটা-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কার্তিক রামাকৃষ্ণা ইতোপূর্বে সতর্ক করে বলেছিলেন, যা ঘটছে তাকে সহজভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাওয়াটা ভুল হবে। এই মহামারীর সময়টাতে এশীয়দের সাথে ঘটা বর্ণবাদী ঘটনাগুলোকে দেখে পুরো অবস্থা ভেবে নেয়া উচিত হবে না।
এখানে কারণগুলোর মধ্যে বেশ জটিল পার্থক্য আছে। কিন্তু মূল কথাটা হল, এশীয় আমেরিকানদের প্রতি বর্ণবৈষম্যের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে, যার ফলে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত এখন।
এন্টি-এশীয় ঘটনাগুলো নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিন্দা জানানোর কারণে সম্প্রতি এ বিষয়টি কার্যনির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে এ বছরের শুরুতে তিনি একটি স্মারকলিপিতেও সাক্ষর করেন। যাতে উল্লেখ ছিল, কীভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এশীয় আমেরিকানদের প্রতি বর্ণবাদী ঘটনাগুলোয় পদক্ষেপ নেবে।
জিউং বলেন, এই সহিংসতার মূল কারণ জানতে আমাদের আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে, বিচারব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করতে হবে। হেইট ক্রাইম বা ঘৃণা জনিত অপরাধের তুলায় হেইট ইন্সিডেন্টিগুলোতে গুরুত্বারোপ করা, এশীয় আমেরিকানদের সাথে রাস্তায়, পরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে এবং অন্যত্র ঘটা বৈষম্যমূলক ঘটনাগুলোকে আরও সামগ্রিকভাবে দেখার সুযোগ করে দেয়।
যদি আপনি শুধু ঘৃণা ছড়ানো থেকে ঘটা অপরাধগুলো দেখেন, শুধু সেই বর্ণবাদী আচারণগুলো খুঁজে পাবেন, এশীয় আমেরিকানরা যেগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, জিউং বলেন। বাইডেনের স্মারকলিপি অনুযায়ী এ ধরণের ঘটনার থেকে বর্ণবাদী ঘটনাগুলো আমাদের পুরো অবস্থাকে সর্বোতভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করার সুযোগ দেয়।
করোনা মহামারীতে বেড়েছে বিদ্বেষমূলক অপরাধ
এশীয়-আমেরিকান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মনে যে সুপ্ত ঘৃণা ছিল, তা জাগিয়ে তোলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং তা আরও বাড়িয়ে তোলে ট্রাম্পের ‘চায়না ভাইরাস’র মতো বিভিন্ন অযৌক্তিক উক্তি।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব হেট অ্যান্ড এক্সট্রিমিজের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা মহামারীর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষমূলক অপরাধ প্রায় দেড়শ’ শতাংশ বেড়েছে।
খ্যাতনামা বাস্কেটবল খেলোয়াড় জেরেমি লিন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনে খেলা খুব অল্প কয়েকজন এশীয়-আমেরিকানের অন্যতম, সিএনএনকে জানিয়েছেন, তরুণ বয়সে তিনি এমন নিগ্রহের ঘটনার শিকার হয়েছেন। এটি এখন আরও বেশি বেশি হচ্ছে।
‘এখন ব্যাপারটিকে পুরোই অন্যরকম মনে হয়। আমরা বড় হতে হতে দেখলাম, বিষয়টি প্রতিনিয়তই আগের চেয়ে বেশি প্রকাশ্য হচ্ছে। এখন আরও বেশি সহিংসতা দেখা যাচ্ছে। শারীরিক নির্যাতনও বেড়েছে, ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনাও। বাইরে কিংবা বাজারে গেলে এখন অনেকে এশীয়-আমেরিকান আতঙ্ক নিয়ে বারবার পেছনে ফিরে তাকান’, বলেন লিন।
বর্ণবাদী যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে জাতি-ধর্মগত বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে সে দেশের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এই কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৫১টি। তার আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি।
গত ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরই জাতি-ধর্মগত বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। গোঁড়ামি এবং বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে বক্তব্য বাড়ার সাথে সাথে এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে বলে আন্দোলনকারীরা জানান।
জাতি-ধর্মগত বিদ্বেষমূলক অপরাধ নিয়ে এফবিআইয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ৭,৩১৪টি অপরাধ ঘটেছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭,১২০টি।
যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ছয় এশীয় নারীসহ নিহত ৮
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার চেরোকি পল্লীতে তিনটি ম্যাসাজ পার্লারে এক বন্দুকধারীর গুলিতে এশীয়ান ছয় নারীসহ আটজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। ঘটনাস্থলেই চারজন, হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যান।
এদিন প্রথম হামলাটি ঘটে আটলান্টা শহর থেকে প্রায় ৪০ মাইল উত্তরে চেরোকি কাউন্টিতে। কাউন্টির শেরিফ বিভাগের ক্যাপ্টেন জে বেকার জানান, ইয়ংস এশীয়ান ম্যাসাজ পার্লারে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত এবং আরও একজন আহত হয়েছেন।
শহরের পুলিশপ্রধান রডনি ব্রায়ান্ট জানান, প্রথম ঘটনার ৪৫ মিনিটের মাথায় ডাকাতির খবর পেয়ে গোল্ড ম্যাসাজ স্পা নামের আরেকটি স্পাতে ছুটে যান পুলিশ সদস্যরা।
সেখানে গিয়ে তারা গুলিবিদ্ধ তিন নারীর মরদেহ দেখতে পান। এর মধ্যেই একই সড়কের অ্যারোমা থেরাপি স্পা নামের আরেকটি স্পা থেকে ফোন আসে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেখানেও গুলিবিদ্ধ আরেক নারীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ।
একপর্যায়ে সন্দেহভাজন হামলাকারী রবার্ট অ্যারন লংকে (২১) গ্রেফতার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্রিস্প কাউন্টিতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে সে।
এশীয়দের প্রতি বিদ্বেষের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
বর্ণবৈষম্য, বিদেশিদের প্রতি ঘৃণা এবং নারীবিদ্বেষের প্রতিবাদে গত শনিবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা নগরীতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান জর্জিয়া স্টেট ক্যাপিটলের সামনের পার্কটিকে বেছে নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে যোগ দেন সিনেটর রাফায়েল ওয়ারনক, সিনেটর জন ওসফ এবং জর্জিয়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তা বি গুয়েন।
এদের মধ্যে গুয়েন প্রথম ভিয়েতনামি আমেরিকান, যিনি জর্জিয়া হাউসে কাজ করছেন। সিনেটর ওয়ারনক বলেন, ‘আমি আমার এশীয় ভাইবোনেদের বলতে চাই— আমরা সবাই পাশে আছি। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।’ এ সময়ে সমস্বরে সবাই ওয়ারনককে সমর্থন জানান।
জর্জিয়ায় গত বছর বিদ্বেষমূলক অপরাধ রুখতে আইন করা হয়েছে। কোনো অপরাধের কারণ যদি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গভেদ, বিদেশি হওয়া বা যৌনতা, কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে অপরাধীকে অতিরিক্ত শাস্তি পেতে হবে।
কিন্তু আইন করেও এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। আটলান্টার ঘটনাতেই যেমন অভিযোগ, অপরাধীকে মানসিক অসুস্থ বলে চালানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে তদন্ত এখনও চলছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ‘ভিনদেশিদের ঘৃণা করা ও জাতিবিদ্বেষের ঘটনাগুলোকে আমেরিকা আর মেনে নিতে পারে না।’
জর্জিয়ার প্রশাসনিক কর্তা গুয়েন বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধ রুখতে যা-ই করা হোক না কেন, যা-ই বলা হোক না কেন, আটকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এ ঘটনাটি বিশেষ করে, এশীয়দের ওপর হামলা ছাড়া কিছু নয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ