সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘা এখনো শুকোয়নি। হিন্দু ধর্মের অনুসারী সংখ্যালঘুরা এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। শাল্লারে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণের ঘা শুকানোর আগেই মাগুরায় আরেক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চরগোয়ালদহ ও মালাইনগর গ্রামে ৫০-এর অধিক হিন্দু বাড়িতে কারা যেন চিঠি পাঠিয়েছে। গতকাল শুক্রবার(১৯ মার্চ) রাতের আধারে ৫০টির বেশি হিন্দু বাড়িতে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে উড়ো চিঠি দিয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
রাতের বেলায় মাথায় হেলমেট পরে পরিচয় গোপন রেখে একই ধরনের চিঠির ঘটনায় ওই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
চর মালাইনগর গ্রামের দিপ্ত বালা নামে এক ব্যক্তি জানান- শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি হেলমেট পরা অবস্থায় বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়ির কর্তাদের নামে খামে ভরা ওই চিঠিগুলি বাড়ির সদস্যদের হাতে দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলে এলাকা থেকে সরে পড়ে। ওই গ্রামের ৫০টির বেশি বাড়িতে পরপর চিঠিগুলি বিতরণ করা হয়। চিঠিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওইসকল ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত বিভিন্ন কথা লেখা ছিল। চিঠির সবশেষে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয় তাদের। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আজ শনিবার (২০ মার্চ) সকালে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইয়াছিন কবির, শ্রীপুর থানা পুলিশ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ইয়াসিন কবীর জানিয়েছেন, প্রাথমিক দৃষ্টিতে চিঠির মাঝে কোনও হুমকি পরিলক্ষিত না হলেও রাতের আঁধারে নিজেদের নামে পরিচয় গোপন করে কেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫০টির বেশি বড়িতে এ ধরনের চিঠি দেওয়া হলো তা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় এলাকায় যেন কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রশাসন সজাগ আছে।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক চৌগাছি গ্রামের মঞ্জু বিশ্বাসের ছেলে ইউসুফ (৩৫) মহেশপুর গ্রামের ইয়াকুব মোল্ল্যার ছেলে কুরবান ( ৩২) সাচিলাপুর গ্রামের আলীমুদ্দীনের ছেলে হাবিবুর রহমানকে (৪০) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শ্রীপুর থানা ওসি আলী আহমদ মাসুদ জানান, ঘটনা শোনার পর থেকেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত আছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি শিশির শিকদার ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শ্রীপুর উপজেলা সভাপতি অপূর্ব মিত্র ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে এ কর্মকান্ডের পেছনে কোন গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। শাল্লারের ঘটনার রেশ এখনো যায়নি, এরই মধ্যে মাগুরায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বানকে স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। সাম্প্রদায়িক কিছু ব্যক্তি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে পারে। এ ব্যাপারের প্রশাসনসহ সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
তারা জানান, বেনামি এইসব চিঠি পেয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আতঙ্কে থাকারই কথা। দেশের সরকার ও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ক্রমাগত অসহযোগিতা তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এলাকার প্রত্যেক পরিবারকে নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিতসহ কারা এইসব চিঠি রাতের আঁধারে দিয়ে গেল এব্যাপারেও তদন্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবে প্রশাসন ও সরকার এবিষয়ে কতটা সহযোগিতাপরায়ণ হবে এবিষয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরের দলগুলো ইসলামপন্থীদের, বিশেষ করে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কারণে সমাজে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তাদের শক্তির চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে। রাজনীতির আলোচনার সূচি অংশত তারাই নির্ধারণ করছে। আশু এ অবস্থার অবসানের সম্ভাবনা নেই; উপরন্তু তা আরও বিস্তৃত হবে বলেই অনুমান করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৪
আপনার মতামত জানানঃ