প্রায় ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়া পুলিশের সেই এএসআই গোলাম মোস্তফাকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে। র্যাবের করা মাদক মামলায় এএসআই (সাময়িক বরখাস্ত গোলাম মোস্তফা) আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। গতকাল মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওসমান গণির আদালতে আদালত এ আদেশ দেন।
এএসআই গোলাম মোস্তফা নোয়াখালী জেলার চরজব্বার থানার চরহাসান সিকদার বাড়ির সাইদুর রহমানের ছেলে। সিএমপির গোয়েন্দা শাখায় (বন্দর জোন) কর্মরত ছিলেন তিনি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে হক লাইব্রেরির সামনে থেকে ২৮০০ পিস ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েন রাঙ্গুনিয়া থানার কনস্টেবল মোশররফ হোসেন। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা করে র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদে মোশাররফ হোসেন ইয়াবা বাণিজ্যের সাথে এএসআই গোলাম মোস্তফার সম্পৃক্ততার তথ্য দেয়। দুজনকেই অভিযুক্ত করে গত ১২ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাঈনুর রহমান।
এএসআই গোলাম মোস্তফা কয়েকমাস পলাতক থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে কর্মস্থল গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনে হাজির হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সংযুক্ত করা হয় দামপাড়া পুলিশ লাইনে।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মোশাররফ হোসেন জানান, তিনি রাঙ্গুনিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন। নগরের কসমোপলিটন আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক আড়াইটায় এএসআই মোস্তফা ফোন দিয়ে তাকে দামপাড়া সিআইডি অফিসের গেটের সামনে আসতে বলেন। বিকেল চারটায় সেখানে গেলে মোস্তফাসহ গেটের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসেন। কিছুক্ষণ পর বেলাল নামে একজন লোক এসে মোস্তফার সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে মোস্তফা বেলালের হাতে একটি লাল রঙের ব্যাগ দিয়ে মোশাররফকে বলেন, ‘তুমি ওর (বেলালের) সাথে যাও। কিছু টাকা দেবে তা নিয়ে এসো’। মোস্তফার কথা মতো বেলালের সাথে লালখানবাজার হাইলেভেল রোডে গেলে ইয়াবা নিয়ে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন মোশাররফ।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ইয়াবাগুলো বিক্রির জন্য দেন এএসআই মোস্তফা। মোশাররফ ও মোস্তফা নগর পুলিশে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় চাকরি করেছেন। দুজনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ইয়াবাসহ ধরা পড়ার আগে দুজনের মধ্যে একাধিকবার কথা হয়। তারা জেনেশুনেই ইয়াবা বিক্রির জন্য নিজেদের কাছে রাখেন মোশাররফ।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, মঙ্গলবার সকালে এএসআই গোলাম মোস্তফা আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দুপুরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের সাথে পুলিশের সম্পৃক্ততার খবর চাউর হয়ে আছে দেশে। মাদকের সাথে পুলিশের জড়িয়ে পড়াতে একদিকে যেমন আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে অপরদিকে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে যুব সমাজ। তারা বলেন, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পুলিশ ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচা বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সমাজ থেকে মাদক দূর করার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাই এখন মাদক পাচার ও ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েছে, এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। মাদকের সাথে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের উযুক্ত শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০৯
আপনার মতামত জানানঃ