বগুরায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দ্বিতীয় স্ত্রীর করা মামলায় কারাগারে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ইফতেখায়ের গাউসুল আজম। ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি, নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টা ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন স্ত্রী। এই মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ইফতেখায়ের মো: গাউসুল আজম আজ বুধবার(১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক নুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার কবীর এ আদেশ দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা গাউসুল আজম নওগাঁ জেলায় রিজার্ভ অফিসে কর্মরত আছেন। তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের চেঁচড়া গ্রামের শামছুল হক ও ফিরোজা বেগমের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর পৌর এলাকার টাউন কলোনীর বাসিন্দা গৃহবধূ তমানিয়া আফরিন তার স্বামী পুলিশের এসআই ইফতেখায়ের গাউসুল আজমকে আসামি করে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর আদালতে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ইংরেজি মাস্টার্স শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন। ফেসবুকে মাধ্যমে তার সাথে আসামির পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। এর দুই মাস পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তমানিয়া। এ সময় তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীর আগের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এদিকে গাউসুল আজম ১৭ আগস্ট দুপুরে তমানিয়ার বাবার বাড়ি শেরপুর টাউন কলোনীর বাসায় এসে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। যৌতুক না পেয়ে তার স্ত্রীকে কিল ঘুষি মারাসহ শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। এ ছাড়া তার তলপেটে লাথি মেরে গুরুতর আহত করায় গর্ভপাত হয়।
এ ঘটনায় স্বামী পুলিশের এসআই ইফতেখায়ের গাউসুল আজমকে আসামি করে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল নং-২-এর আদালতে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেন তমানিয়া আফরিন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম আবুল কালাম আজাদ জানান, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা গাউসুল আজম উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের জামিন নিয়ে এসেছিলেন। আট সপ্তাহ পর তিনি বুধবার দুপুরে আবার নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করলে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার কবীর তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর স্পেশাল পিপি অ্যডভোকেট আশেকুর রহমান সুজন জানান, স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলায় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক পুলিশ কর্মকর্তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর এসবের সবকটাই ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, পুলিশে ঢোকার পর স্বাভাবিক একজনের ভেতরেও আশ্চর্য এক পরিবর্তন আসে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত ভেবে তারা যা ইচ্ছা তা করার মানসিকতা নিয়ে দাপটের সাথে চলতে থাকেন। ফলে ঘর থেকে বাহির কেউ তাদের কুৎসিত হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসার হয়েও যৌতুক দাবি, নারী নির্যাতন করা আমাদের সমাজের এক চরম দুর্দশার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন আরও অসংখ্য অভিযোগ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫৩
আপনার মতামত জানানঃ