
উইল থ্রোন : “আমি চাইলেই তোকে খুন করতে পারি, কিন্তু যদি আমি তোকে খুন করি তাহলে তুই কষ্ট বুঝতে পারবি না। আমি তোকে ভোগাবো।“, মোহাম্মাদ হাসান ভয়ানক একটা হাসি দিয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বর্ণনা দিচ্ছিলেন যে কিভাবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে পুরনো হিসেব চুকিয়েছেন। বুদাপেস্টের সরু গলির একটা বদ্ধ কেবিনে সিগারেটের ধোঁয়ার একটি কুণ্ডলি সিলিংয়ের দিকে উড়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে কোন আবেগ বা গ্লানি কাজ করছে না। শুনে মনে হতে পারে কোন মাফিয়া মুভির দৃশ্যপট। কিন্তু না, এটাই মোহাম্মাদ হাসানের কাজ।
হাসান বর্ণনা দিচ্ছিল কিভাবে সে হাজার মাইল দূরের একটি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (র্যাব)’কে ব্যবহার করে তার টার্গেট করা ব্যক্তির ফোন ট্র্যাক করিয়ে আটক করিয়েছেন। প্রতিশোধ এবং শাস্তির মাধ্যম হিসেবে সে র্যাবের মত বাহিনীর সাথে সংযোগ তৈরি করেছেন; যে ইউনিট খুন, গুম এবং নির্যাতনের জন্য খ্যাত। এসব ঘটনা হাসানকে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ক্ষমতাশালী মানুষদের একজন হিসেবে প্রমান করে।
কে এই হাসান ?
মোহাম্মাদ হাসানের রয়েছে দুটি পরিচয়। তারমধ্যে একটি পরিচয় তার বিশেষ পারিবারিক গুরুত্ব বহন করে।
তার প্রথম পরিচয় হল দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে ইউরোপে নতুন জীবন তৈরি করতে আসা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে বুদাপেস্টে আসার পরে শুরু করেন “বে অফ বেঙ্গল” নামে একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। অবৈধ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার কোন লাইসেন্স নেই, কিন্তু হাসানের কাছে ভাবার মত কোন বিষয় এটা নয়।
কাছের একটি সরু গলিতেই তার একটি ক্ষুদ্র হাঙ্গেরিয়ান নৈশভোজের রেস্তোরাঁ রয়েছে যার নাম গুলিয়াস এত্তেরাম, গউলাম রেস্টুরেন্ট। এটি স্থানীয় পুরনো একটি এলাকার কেন্দ্রে অবস্থিত যেখানে প্রচুর ভ্রমণকারীরা আসেন, কিন্তু অন্যান্য ব্যবসার মত হাসানের এই ব্যবসাও ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি এর বাইরে একটি ছাত্রাবাস, পুরাতন এলাকায় আরেকটি রেস্তোরাঁ এবং মহিলাদের কাপড়ের দোকান পরিচালনা করেছিলেন। হাসানের অর্থনৈতিক সমস্যা আছে, কিন্তু সেটা অর্থের ঘাটতি মোটেই নয়। তার কাছে টাকা আসে বিভিন্ন রাস্তা থেকে, তবে তার মূল সমস্যা হল কিভাবে তিনি এই সম্পদসমূহ লুকাবেন।
মোহাম্মাদ হাসান একটি নাটকীয় চরিত্র। এই পরিচয় তার আসল পরিচয় নয়। তার এই পরিচয়টি বিভিন্ন নকল দলিলাদির ভিত্তিতে তৈরি যা তাকে বাংলাদেশের শীর্ষ দাগী আসামী থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। হাসান গর্ব করেন একজন বিশ্ব নেতার বিশ্বাস প্রাপ্তি এবং আর্মি প্রটেকশন নিয়ে।
আসল নাম হারিস আহমেদ, ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পরিবারের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহন করে। সহিংসতা এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে অন্যান্য অপরাধ চক্রের মধ্যে নিজের দাপট তৈরি করেন ফলে বেশ কম বয়সে পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে। তিন ভাই জোসেফ, আনিস ও টিপুর সাথে এলাকার ভয়ানক মাস্তান হিসেবে পরিচিতি পায় হারিসও। তারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পক্ষের হয়ে কাজ করত। তাদের ছিল বড় ধরনের অপরাধ ঘটানোর মত সক্ষমতা ।
আহমেদ গ্যাংয়ের উত্থান
১৯৮০ এর দিকে ঢাকার মোহাম্মাদপুর এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে আহমেদ গ্যাং বেশ অর্থকড়ি এবং নাম অর্জন করে। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ফুটপাথের খাবারের দোকান থেকে চার ভাই চাঁদাবাজি করতো। সেই সময়ের নড়বড়ে এবং সংঘাতময় রাজনৈতিক অবস্থা তাদের জন্য ছিল আশীর্বাদ স্বরূপ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে একটা পারস্পারিক প্রয়োজনের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। রাজনীতিবিদরা টিকে থাকার জন্য এসকল মাস্তানদের অর্থ দিয়ে ভাড়া করতো।
ঢাকার অপরাধজগতে আহমেদ গ্রুপের বিস্তৃতি প্রমান করে আওয়ামী লীগের টিকে থাকার নেপথ্যে তাদের ভূমিকা। শেখ মুজিবের নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তার কন্যা শেখ হাসিনা । নবীন রাজনীতিবিদদের জন্য সেটা ছিল অত্যন্ত কঠিন সময়। একের পর এক মিলিটারি ক্যু এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখলের ফলে শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত গৃহবন্দী, গ্রেফতার এবং নিপীড়নের সম্মুখীন হন।
সেই অনিশ্চয়তা এবং সংঘাতের মধ্যে আহমেদ ভাতৃদ্বয় শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বেষ্টনীতে পরিনত হয়ে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো শেখ হাসিনার মিছিল এবং বাড়িতে যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদেরা হামলা বা গ্রেফতারের ভয় ছাড়াই আসতে পারত।
আহমেদ গ্যাং ছিল আতংকের নাম। কিন্তু প্রতিশোধের আগুনে পড়তে হয়েছে তাদেরও। ভাইদের মধ্যে কনিষ্ঠতম এবং তারই একজন বন্ধুর ভাষ্যমতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছিল টিপু। নিজেকে মোহাম্মাদপুরের ত্রাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পর গ্যাং এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয় টিপু।
দুই যুগ পূর্বে, যখন চার ভাই ঢাকার অপরাধ জগতের সিঁড়ি বেয়ে উঠছিল, আরেক ভাই আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ আর্মিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বেছে নিয়েছিলেন আলাদা রাস্তা। তার সহকর্মীদের মতে তিনি ছিলেন বিশেষত্বহীন, কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে সাথে তারও খুব দ্রুত পদোন্নতি ঘটতে থাকে।
খুন, মারামারি, গোলাগুলির চলমান চক্রের মধ্যে একটি লোমহর্ষক খুন বদলে দিয়েছিলো আহমেদ গ্যাংয়ের ভাগ্য। ১৯৯৬ সালে তিন ভাই আনিস, হারিস এবং জোসেফ বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তফাকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়েও কিছুদিন জীবনযুদ্ধে লড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান এবং নিজের খুনের মামলার একমাত্র সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দিয়ে গেছেন। সেই জবানবন্দী আহমেদ গ্যাং এর ভাগ্যে তালা লাগায়। বিচারে ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আনিস এবং হারিসকে যাবতজীবন কারাদণ্ড দেয়া হলেও তারা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলো। ধারনা করা হয় যে ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় হারিস আহমেদ ভারতে এবং আনিস আহমেদ মালয়েশিয়া পালিয়ে যান।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
বাংলাদেশে আইনের ধরাছোঁয়া থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ এবং উপরমহলে যোগাযোগ। আজিজ আহমেদের দ্রুত পদোন্নতি এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা আহমেদ গ্রুপের জন্য তাদের পথকে আরও মসৃণ করে দেয়। ২০১২ সালে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার অধীনেই বিজিবি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করে। ২০১৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা চলাকালীন ইলেকশনে আওয়ামী লীগের জয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
২০১৮ সালের জুন মাসে আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন, উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে সভাপতিত্ব করেন। ফলে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করেন যা এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নতুনত্ব যোগ করে। আহমেদ গ্যাং শেখ হাসিনার প্রতি নিজেদের বিশ্বস্ততা প্রমান করতে সক্ষম হয় এবং বিনিময়ে তাদের ভাই আজিজকে আর্মিকে নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা দেয়া হয়। পরের বছরেই আজিজের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আরেকটি জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে। সেই বছরেই আজিজ আহমেদের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জোসেফ রাষ্ট্রপতি ক্ষমা লাভ করেন যা ছিল খুবই অস্বাভাবিক। এর মধ্য দিয়ে আহমেদ গ্যাং এবং শেখ হাসিনার নিরাপত্তা এবং লেনদেনের সম্পর্ক পরিপূর্ণতা লাভ করে।
মোহাম্মাদ হাসানের সৃষ্টি
আজ জাজিরার অনুসন্ধানী গোপন অডিও রেকর্ডিং এ জেনারেল আজিজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাদের সম্পর্কের শক্তি সম্পর্কে গর্ব বোধ করেন ।
২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ব সীমান্ত পুলিশ সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিতে জেনারেল আজিজ বুদাপেস্টের কেম্পেস্কি হোটেলে ভ্রমন করেন। এই সম্মেলনে সীমান্ত বাহিনীর প্রধানেরা নিরাপত্তা এবং অভিবাসন সম্পর্কে আলোচনা করেন। এখানেই একজন পলাতক আসামী হারিসের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিতের মূল পরিকল্পনা হয়েছিলো।
বাংলাদেশের কতিপয় রাষ্ট্রদূতেরা সামি (ছদ্মনাম) নামের একজন তরুণ উদ্যোক্তাকে জেনারেল আজিজকে সহায়তার জন্য বলেন। জেনারেল আজিজ উচ্চ পদস্থ একজন সামরিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় সামি কোন রকম ভাবনা ছাড়াই এই প্রস্তাব গ্রহন করেন। জেনারেল আজিজ তার ভাই মোহাম্মাদ হাসানকে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা এবং আবাসনের ব্যাপারে সাহায্যের অনুরোধ জানান। সামি কোন সংকচ ছাড়াই এই অনুরোধে সম্মতি দিলেও সময়ের সাথে সাথে হাসানের আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারেন।
এর পরের মাসেই বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধি, ব্যাংকার, উকিলদের মাধ্যমে সত্যায়িত আইনি কাগজপত্র সামির কাছে এসে পৌছায়।
আল জাজিরার অনুসন্ধানে হারিসের নতুন পরিচয় তৈরির জন্য ৫০টিরও বেশি ভুয়া দলিলাদির প্রমাণ পাওয়া গেছে। নতুন পরিচয়ের মাধ্যমে সেখানে হারিস বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে আজিজ আহমেদ প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। বিপুল পরিমান টাকা দেশ থেকে আসতে থাকে যা সকলের আড়ালে নেয়ার উদ্দেশ্যে সম্পদ কেনা-বেচা, ব্যবসায় বিনিয়োগসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন হারিস। তার পরবর্তী গন্তব্য ছিল ফ্রান্স।
হাঙ্গেরিতে মোহাম্মাদ হাসানকে সহযোগিতা করা সত্ত্বেও জেনারেল আজিজ আহমেদের পক্ষ থেকে চাপ আসতে থাকে। আজিজের ধারনা যে হাসান তার নতুন জীবন তৈরি করতে পারছেন না এবং শীঘ্রই তাকে দেশে ফিরতে হতে পারে। সামি আজিজের বার্তায় বিপদের আঁচ করেন। ২০১৬ সালে এক বার্তায় জেনারেল আজিজ সামিকে লেখেন, “যদি আমার ভাইকে ফিরতে হয়, দায়ী ব্যক্তিদের অনুশোচনা করতে হবে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, তারা নিজেদের জীবনে অমঙ্গল ডেকে আনবে।“
সামি, মোহাম্মাদ হাসানের ব্যাপারে আরও জানতে চেষ্টা করেন। সামি আবিষ্কার করেন পলাতক খুনি গ্যাংস্টার হারিস আহমেদকে। কিন্তু ইতিমধ্যে আহমেদ গ্রুপের সাথে অনেক গভীরে জড়িয়ে পড়েছে সামি এবং এর থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হিসেবে তাদের অপরাধ জগতের যোগাযোগ বের করাকে বেছে নেন। হারিসের শক্তিশালী যোগাযোগের ব্যাপারে বেশ আন্দাজ করতে পেরেছিল সামি। ঠিক তখনই আল জাজিরা তাদের গোয়েন্দাভিত্তিক অনুসন্ধানের নতুন উৎস সামিকে পায়।
অনুসন্ধানের প্রয়োজনে সামি দানুবে নদীর পাশের একটি হোটেলে মিটিং এর ব্যবস্থা করেন। স্কাইপের মাধ্যমে সামি একজন বানোয়াট বিনিয়োগকারীর সাথে হারিস এবং তার ব্যবসায় সহযোগী মোহাম্মাদ রহমানের আলাপ করিয়ে দেন। বিনিয়োগে আগ্রহী ব্যক্তি জানান যে তিনি বাংলাদেশে কয়েক কোটি ডলারের একটি হোটেল স্থাপন করতে চান। এই পুরো মিটিং আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল হারিসের অর্থের মূল উৎস আবিষ্কার করা।
হারিসের সহযোগী রহমান অর্থের বিনিময়ে ধনী বাংলাদেশীদের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পাইয়ে দেয়ার দালালি করেন। রহমান বানানো বিনিয়োগকারীকে বলেন, “বাংলাদেশে কিছু করতে চাওয়া ভালো ভাবনা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেখানে কিছু রাজনৈতিক বিষয় এবং দুর্নীতি আছে। কিন্তু ভালো বিষয় হল জনাব হাসানের জন্য, উচ্চ পদস্থ আমলা ও সরকারের সাথে তার খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে; বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাকে খুব পছন্দ করেন।“
গোপন ক্যামেরায় হারিসের সকল কার্যক্রম রেকর্ড হচ্ছিলো। কোটি ডলারের আলোচনা চলাকালীন হারিস তার ফোন বের করে ল্যাপটপের সামনে ধরে। ফোন স্ক্রিনে ছিল হারিস এবং জেনারেল আজিজের মিলিটারি পোশাক পরিহিত একটি ছবি যেখানে তারা বিদেশি বিশিষ্টজনদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন। রহমান সেই ছবি ব্যাখ্যায় বলেন,”মূলত এই মুহূর্তে সত্যি বলতে তার বড় ভাই দেশ চালাচ্ছেন, কারন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বড় কাজগুলো পরিচালনার দায়িত্ব আর্মি প্রধানের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।“
রহমান এবং হারিস ব্যাংক থেকে মন্ত্রনালয়, আর্মি প্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্য পাইয়ে দেয়ার কথা দেন। এরপরে অব্যাহত অনুসন্ধানে হারিসের অর্থের আরও কিছু উৎস বেরিয়ে আসে। হারিস দাবী করেন ইউরোপে বাংলাদেশের সরকারি চুক্তি থেকে অর্থ লাভ করার বিষয়ে তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন আছে। গোপন রেকর্ডারে আরও জানা যায় যে কিভাবে তিনি সামরিক বাহিনীতে নিয়োগদান, আদালতের বিচারকার্যকে প্রভাবিত করা বা র্যাবের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করেন।
র্যাবকে ঘুষ দেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন,“র্যাবই আমার গুন্ডা। আমার গুন্ডা লাগে না, ওরাই আমার গুন্ডা। তারা কাউকে তুলে আনে এবং আটকে রাখে। তারা টাকা পায়। আমি টাকা পাই। সহজ ব্যবসা।“
তদন্তে চলাকালীন সময়ে উঠে আসা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলেও কোন সাড়া মেলেনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এসকল অভিযোগকে মিথ্যে চক্রান্ত বলে দাবী করে। হারিসের সাথে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নেই বলেও মন্ত্রনালয় থেকে বিবৃতি দেয়া হয়।
[উইল থ্রোন এবং আল জাজিরা ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট কর্তৃক লিখিত ‘The gangster, the general and the prime minister of Bangladesh’ প্রতিবেদন থেকে বাংলায় অনুদিত]
আপনার মতামত জানানঃ