বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত জার্মানিতেও ধীরে ধীরে কমে আসছে করোনা সংক্রমণ। দেশটির চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, সময়মত করোনার কার্যকরি টিকাদান কর্মসূচি শুরু করাসহ দ্বিতীয় দফায় স্বাস্থ্যখাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই এর প্রধান কারণ। বুধবার জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি লকডাউনের মেয়াদ ৭ই মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ করোনা সংক্রমণের কমে চলা হারের আলোকে পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, জার্মানি এখন তিনটি আক্রমণাত্মক মিউটেশনের মোকাবিলা করছে। নতুন বৈশিষ্ট্যের এসব ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে উঠার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসগুলো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বিনষ্ট করে দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, লোকজনের জন্য এই লকডাউনটি কতটা কঠিন সেটি তিনি অনুধাবন করেন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের একাকীত্ব ও হতাশার বিষয়টিও তিনি বুঝতে পারছেন। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির কারণে বিধিনিষেধ এখনও বহাল রাখা প্রয়োজন।
এদিকে জার্মানির শীর্ষ নেতাদের মতে, বর্তমান কড়া বিধিনিয়মের ফলে দেশে করোনা ভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণের হার যেভাবে লাগাতার কমে চলেছে, তার আলোকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিপদ কেটে যেতে পারে৷ তখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবেন জার্মানির মানুষ৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গড় হার ৩৫-এর নীচে নামলেই এমন সুযোগ পাওয়া যাবে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানবাজার, মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারিসহ একাধিক পরিষেবা আবার চালু হবে৷ উল্লেখ্য, ১০ ফেব্রুয়ারি, বুধবার গড় সংক্রমণের হার ছিল ৬৮৷ গত ২২শে ডিসেম্বর সেই হার ছিল ১৯৮৷
ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা বুধবার কয়েকটি স্পষ্ট পদক্ষেপেরও ঘোষণা করেন৷ যেমন ১লা মার্চ থেকে দেশজুড়ে চুল কাটার সেলুন খোলা হবে৷ হোটেল-রেস্তোঁরা খোলার বিষয়ে এখনো কিছু স্থির হয়নি৷ তবে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন খোলার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারগুলির হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ অনেক রাজ্য ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব শিশু-কিশোরদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছন্দে নিয়ে আসতে চান মুখ্যমন্ত্রীরা৷ শিক্ষকদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে করোনা টিকার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকারের মাত্রা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে৷
এমন সব ইতিবাচক পূর্বাভাসের মাঝেও জার্মানির নেতারা করোনা ভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে মিউট্যান্ট বা সংস্করণ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ এই সব নতুন মিউট্যান্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা বলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ তবে এখনো পর্যন্ত সংক্রমণের ধীর গতির আলোকে তিনি অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ আগামী ৩রা মার্চ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। তারা বলেন, দেখুন আমরা এখনো মহামারির মধ্যে আছি, তবে আমাদের সরকারের সুষ্ঠু টিকা কার্যক্রমের ফলে সংক্রমিতের সংখ্যা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। সেই ৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোয় এই সংখ্যা আরো কমে আসবে। আশা করছি আগামী গ্রীষ্মেই আমরা আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবো।
আরেকজন বলেন, লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখন নিয়ে কি হবে, সরকার শুরুর দিকে কিছু বোঝেনি, বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেনি। তার ওপর টিকার বিষয়টি দেখুন, টিকা কেনা ও প্রয়োগ নিয়ে ইইউর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর না করে জনগণের স্বার্থে সরকার নিজে সিদ্ধান্ত নিলে এত মানুষ মারা যেত না।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। এরইমধ্যে করোনার একাধিক টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩০৭
আপনার মতামত জানানঃ