বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর অনেকে ভেবেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অন্তত একটি জিনিস বদলাবে—বিচারবহির্ভূত হত্যা আর হেফাজতে নির্যাতনের পুরনো সংস্কৃতি। কিন্তু কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা বলছে, শাসকের মুখ বদলালেও গুলি, মৃত্যু আর অস্বীকারের গল্পটা খুব বেশি বদলায়নি। সংখ্যার হিসেবে আগের থেকে কম হতে পারে, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণহানি এবং সে সম্পর্কে অস্পষ্ট, প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত—এই পুরোনো চিত্রই যেন আবার ফিরে এসেছে নতুন রূপে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান এই ধারাবাহিকতার একটা ঠান্ডা, কিন্তু কাঁপিয়ে দেওয়া হিসাব দেয়। অধিকারের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই অন্তত ৪০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের হিসাব আরও বেশি—৬০। গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা আলাদা করে ধরলে দেখা যায়, প্রতিমাসে গড়ে কয়েকজন নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে বা গুলির ঘটনায়। শেখ হাসিনার আমলে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কিংবা ‘দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে মৃত্যু’– এসব শব্দ যেমন এক ধরনের ভয় আর অনিশ্চয়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিল, এখনো সেই শব্দের রূপ বদলেছে, কিন্তু সারবস্তু বদলেছে কি না—সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই প্রশ্নটাকেই আরও তীব্র করেছে গোপালগঞ্জের রক্তাক্ত ঘটনা। জুলাই মাসে এনসিপির গোপালগঞ্জ সফর ঘিরে সংঘর্ষে একদিনে পাঁচ জনের মৃত্যু—অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এটিই ছিল সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা। মানবাধিকারকর্মীরা প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, সেখানে সেনাবাহিনী অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে তা এড়ানো যেত। আইএসপিআর অবশ্য শুরু থেকেই বলছে, তারা কেবল আত্মরক্ষার্থে এবং অনুমোদিত ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’ অনুযায়ীই গুলি চালিয়েছে; তবু কার গুলিতে কার মৃত্যু হয়েছে—এমন মৌলিক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন—যার নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি—গোপালগঞ্জের ঘটনাটা খতিয়ে দেখেছে ঠিকই, কিন্তু কমিশনের কার্যপরিধিতেই নাকি ছিল না, কার গুলিতে নিহতরা মারা গেছেন সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী, যিনি সেই কমিশনের সদস্য ছিলেন, খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন যে, “কার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে”—এটা ওই টিওআরের ভেতরে ছিল না। অর্থাৎ, পরিবারের কাছে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—‘আমার স্বজনকে কে হত্যা করল?’—কমিশনটা শুরু থেকেই সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে দায়বদ্ধ ছিল না। রাষ্ট্রের চোখে এটি হয়তো একটি ‘টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতা’, কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছে এটি এক ধরনের নির্মম উদাসীনতা।
ময়নাতদন্তের ব্যবস্থাও যেন অনেক সময় একটা আনুষ্ঠানিক কাজ সেরে রাখার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোপালগঞ্জে নিহত চার জনের লাশ কবর থেকে তুলে পোস্টমর্টেম করা হলেও পুলিশ সুপারের পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে—সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ ‘রক্তক্ষরণ ও শক’, এবং সেটি ‘হত্যাকাণ্ডের প্রকৃতির’। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কে—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি, নাকি অন্য কোনো পক্ষের অস্ত্র? সেখানেই আবারও নীরবতা। ফলে আইএসপিআর যখন বলে, জাতীয় পর্যায়ের কমিশন হয়েছে এবং তারা রিপোর্ট জমাও দিয়েছে, তখন আইনি উদ্দেশ্য পূরণ হলেও ন্যায়বিচারের দাবি এবং জনবিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় ফাঁক থেকে যায়।
এই শূন্যতাটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে দেশের নানা প্রান্তের অন্য ঘটনাগুলো দেখলে। খাগড়াছড়ির গুইমারা, গাজীপুরের আশুলিয়া, ঢাকার মোহাম্মদপুর—সব জায়গাতেই গল্পটা প্রায় একই ছাঁচে গড়া। কোনো না কোনো অজুহাতে উত্তেজনা, তারপর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, গুলি, মৃত্যুর মিছিল, আর ঘটনাটিকে ঘিরে দুই ভিন্ন বয়ান। আইএসপিআরের মতো সরকারি সংস্থাগুলো বারবার বলছে, তারা কেবল আত্মরক্ষার্থে এবং বিধি মেনেই ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করেছে; অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলছে—কেন সংঘর্ষের আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাগুলো এত দুর্বল ছিল, কেন অপ্রাণঘাতী উপায়গুলো যথেষ্ট ব্যবহার করা হলো না, কেন প্রতিটি ঘটনার পরই ব্যবহার হচ্ছে একই ভাষা, একই অজুহাত।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ফিরোজা বেগমের মৃত্যু এই প্রশ্নকে আরও ব্যক্তিগত, আরও অন্তরঙ্গ এক বেদনায় নামিয়ে আনে। একজন গরিব ঘরের নারী, অভিযোগ শুধু এই যে, তার স্বামীকে না পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে গেছে যৌথ বাহিনী। পরিবারের দাবি—সামনাসামনি লাঠিপেটা, ঘরে ফেলে রাখা লাঠিতে এখনো টেপ পেঁচানো চিহ্ন, মৃত্যুর পর শরীরে কালসিটে দাগ, আর ছয় ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে morgue–এ যাত্রা। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আবার লেখা—‘কার্ডিয়াক ফেইলিয়র’, ইনজুরি থাকলেও তা ‘মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়’। আইএসপিআর দৃঢ়ভাবে বলছে, কোনো নির্যাতন হয়নি; সবই স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু শাশুড়ি, মেয়ে, প্রতিবেশীদের চোখে দেখা সেই আঘাতের দাগগুলো জায়গা করে নেয় না রাষ্ট্রের অফিসিয়াল কাগজে।
এই দুই বয়ানের সংঘাতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে সত্যের ওপর, আর তারপর আস্থার ওপর। একদিকে রাষ্ট্রের অফিসিয়াল ভাষ্য—আইন মেনে অভিযান, নিয়মিত তদন্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী, মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া; অন্যদিকে মাঠের বাস্তবতা—মৃত্যু, আতঙ্ক, পরিবারগুলোর অভিযোগ এবং তদন্তকে ‘গোটা ব্যাপারটা ঢেকে রাখার নাটক’ মনে হওয়া। মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন খুব পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আগের আমলে যেমনভাবে এসব অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া হতো, এখনো সেই একই প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে—ঘটনাই স্বীকার করা হয় না, বা স্বীকার করলেও এতটা সাধারণীকরণ করা হয় যে, দায় আর কাউকে স্পষ্ট করে ছুঁতেই পারে না।
সরকার অবশ্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কথা বলছে। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জোর দিয়ে বলছেন, তারা নীতিগতভাবে প্রাণঘাতী গুলির বিরুদ্ধে, এবং পুলিশ বা অন্য বাহিনীর কারও মানবাধিকার-বহির্ভূত আচরণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ তদন্তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তার যুক্তি—আগেও যে প্রশাসন ছিল, সেই একই লোকজন, একই অফিস, একই অভ্যস্ততা নিয়ে এখন পরিবর্তিত বাস্তবতায় কাজ করছে। ফলে একটি সংস্কৃতি বদলাতে সময় লাগবেই, হয়তো চার, পাঁচ কিংবা দশ বছর পর্যন্ত। কিন্তু এখানেই তৈরি হয় মূল দ্বন্দ্ব—রাষ্ট্র কি ন্যায়বিচারকে ভবিষ্যতের কোনো অস্পষ্ট সময়সীমার ওপর ঠেলে দিতে পারে, যখন বর্তমানেই মানুষ মরছে, পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে?
কারণ, প্রতিটি গুলির শব্দের সঙ্গে একজন মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটি পরিবার, একটি ভবিষ্যৎ। গোপালগঞ্জের পাঁচ জন, গুইমারার পাহাড়ি তরুণ, আশুলিয়ার শ্রমিক, মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা—প্রতিটি মৃত্যু শুধুই ‘দুঃখজনক ঘটনা’ নয়; এগুলো রাষ্ট্র এবং নাগরিকের পারস্পরিক বিশ্বাসের পরীক্ষার মুহূর্ত। এসব ঘটনায় যদি দেখা যেত, প্রতিটি গুলির পর দ্রুত, স্বাধীন, বিশেষজ্ঞ-নির্ভর তদন্ত হচ্ছে; সেনাবাহিনী–পুলিশ–যৌথবাহিনীর সদস্যরাও আইনের মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে; ভুল প্রমাণিত হলে পদাবনতি, বরখাস্ত, এমনকি ফৌজদারি শাস্তির নজির তৈরি হচ্ছে—তাহলে হয়তো নাগরিকেরা বুঝতে পারতেন, রাষ্ট্র নিজেকে সবার ঊর্ধ্বে ভাবছে না।
কিন্তু এখন যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে “রুলস অব এনগেজমেন্ট অনুযায়ী গুলি করা হয়েছে”, “আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে”, “সন্ত্রাসী বা দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত”—এই শব্দগুলো বারবার ফিরে আসছে সরকারি ব্যাখ্যায়। আইএসপিআর লিখিতভাবে জানাচ্ছে, প্রত্যেকটি অভিযোগে সেনা আইন অনুযায়ী তদন্ত কমিটি হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই তদন্তের ফলাফল কতটা জনসমক্ষে আসে, কতজন প্রকৃতপক্ষে শাস্তি পায়, কতটি ঘটনায় বাহিনীর নিজের সদস্যদের দায় নির্ধারণ হয়—এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভাষায়।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি মাত্রা হলো ‘ভয়’। একদিকে রাষ্ট্রীয় শক্তি, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ—গ্রামগঞ্জ, শ্রমিক কলোনি, পাহাড়ি অঞ্চল বা শহরের বস্তি। গুলি ছোড়া হোক আকাশে, কিংবা নিচু লক্ষ্যে—প্রতিটি ট্রিগার টানার মুহূর্তে ভয়ে জমে যায় আশপাশের মানুষ। যখন পরে শুনতে হয়, “ওটা ফাঁকা গুলি ছিল”, “মাথার খুলি উড়ে গেলেও কারণ হয়তো ইটের আঘাত”, “শরীরে আঘাতের দাগ থাকলেও তা মৃত্যুর কারণ নয়”—তখন বাস্তব অভিজ্ঞতা আর সরকারি বয়ানের মধ্যে দূরত্ব এতটাই বেড়ে যায় যে, মানুষ ধীরে ধীরে বিশ্বাস করাই ছেড়ে দেয়। সেই অবিশ্বাসই দীর্ঘমেয়াদে যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট।
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোরও একটি বাস্তবতা আছে—রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, সশস্ত্র গোষ্ঠী, নাশকতার আশঙ্কা, অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষ, হঠাৎ উত্তেজিত জনতা—সব মিলিয়ে কখনও কখনও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে ভুল সিদ্ধান্ত, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বা ভুল লক্ষ্যভেদ হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। কিন্তু ঠিক এই জায়গাতেই প্রয়োজন হয় স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তের—ব্যালিস্টিক বিশ্লেষণ, সিসিটিভি ফুটেজ, ফরেনসিক রিপোর্ট, প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি—সব কিছুর সমন্বয়ে সত্য বের করে আনার। তা না হলে ‘আত্মরক্ষা’ আর ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’-এর সীমানাটা প্রতি ঘটনাতেই ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে রাষ্ট্রীয় সহিংসতার সঙ্গে—স্বাধীনতার পর থেকে নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সরকার, ভিন্ন ভিন্ন বাহিনী, কিন্তু একই ধরনের গল্প। গুম, ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু—এসব শব্দ যেন রাজনৈতিক রঙ বদলালেও প্রশাসনিক ভাষার অংশ হয়েই থেকেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, অন্তত এখন এই চর্চার বিরুদ্ধে একটা স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি হবে, শুরুর দিকে হলেও কিছু উদাহরণ স্থাপন করা হবে যেখানে দেখা যাবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আইনের ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু মানবাধিকারকর্মীদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের আলামত স্পষ্ট নয়, বরং বিগত আমলের ধারাবাহিকতারই অনেকটা অংশ বহন করে চলেছে বর্তমান সময়।
সবশেষে প্রশ্নটা তাই সংখ্যার হিসাবের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় নীতির জায়গায়। সরকারের তথ্য উপদেষ্টা হয়তো সৎভাবেই বলতে পারেন, ‘আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি, ফল পেতে সময় লাগবে।’ কিন্তু ফিরোজা বেগমের মেয়ে সোমার কাছে, গোপালগঞ্জে নিহতদের স্বজনদের কাছে, পাহাড়ের বা শিল্পাঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে এই ‘সময় লাগবে’ যুক্তিটা খুবই নিষ্ঠুর শোনায়। কারণ তাদের জীবনে সময় থেমে গেছে সেই দিনেই, যেদিন কোনো গুলির শব্দে, কোনো লাঠির আঘাতে, কোনো অন্ধকার থানাকক্ষে তাদের আপনজনের শেষ রাত শেষ হয়ে গেছে।
একটা সত্য তাই খুব পরিষ্কার—যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র প্রথমেই স্বীকার না করবে যে গুলি ও নির্যাতনের এই ঘটনাগুলো ঘটছে, এবং প্রতিটি ঘটনায় সত্যকে সামনে আনার রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ইচ্ছাশক্তি তৈরি না করবে, ততদিন পর্যন্ত ‘তদন্ত’, ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’ বা ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’—এই শব্দগুলো মানুষের মনে আস্থা নয়, বরং সন্দেহ আর ক্ষোভই বাড়িয়ে যাবে। গণঅভ্যুত্থানের পর যে বাংলাদেশ নতুন করে নিজেকে গড়ার কথা বলছে, সেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে অনেকটাই এই প্রশ্নের ওপর—এই দেশ কি সত্যিই প্রাণঘাতী গুলি আর নির্যাতনের ইতিহাসকে অতীত বানাতে পারবে, নাকি শুধু শাসকের নাম বদলে একই ইতিহাসকে নতুন করে লিখবে।
আপনার মতামত জানানঃ