আজকের পৃথিবীতে মানুষ যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে খাবারের চাহিদা। কৃষিজমি কমছে, জলবায়ু পরিবর্তন ফসলের ক্ষতি করছে, পশু পালন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন নতুন এক সমাধান—কৃত্রিম খাদ্য বা ল্যাব–তৈরি খাবার। ভবিষ্যতে আমাদের পাতে হয়তো মুরগি, গরুর মাংস বা মাছ থাকবে, কিন্তু সেগুলো আসবে কোনো খামার থেকে নয়, বরং ল্যাবরেটরি থেকে।
কৃত্রিম খাদ্য বলতে বোঝায় এমন খাবার যা প্রকৃতভাবে জন্মানো নয়, বরং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় ল্যাব–গ্রো মাংস বা সিন্থেটিক মাংস। বিজ্ঞানীরা প্রাণীর শরীর থেকে অল্প কিছু কোষ সংগ্রহ করেন, তারপর সেগুলোকে পুষ্টিকর দ্রবণে বাড়িয়ে তোলেন। কিছু সময় পর সেই কোষগুলো আস্ত মাংসের টুকরোয় পরিণত হয়—যেমনটা আমরা খাই। এতে প্রাণী হত্যা করতে হয় না, জমিও লাগে না, দূষণও কম হয়।
এ ছাড়াও তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম ডিম, ল্যাবে বানানো মাছ, জিন–সম্পাদিত ফল এবং উদ্ভিদ থেকে তৈরি দুধ। উদ্ভিদ থেকে প্রোটিন, তেল ও ফাইবার আলাদা করে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে তা আসল মাংসের স্বাদ ও গঠন অনুকরণ করতে পারে। এসব খাবার দেখতে, গন্ধে ও স্বাদে প্রায় আসল খাবারের মতোই।
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পরিবেশ ও প্রাণী রক্ষা। গরু বা মুরগি পালনে যেমন প্রচুর জমি, পানি ও খাদ্য লাগে, তেমনি গ্যাস নির্গমনও বাড়ে। ল্যাবে তৈরি খাবারে এসব সমস্যার অনেকটাই কমে যায়। এছাড়া খাদ্য উৎপাদনে রোগ বা সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে, কারণ পুরো প্রক্রিয়াই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। এখনো কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদন অনেক ব্যয়বহুল, তাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অনেকে মনে করেন, ল্যাবে তৈরি খাবার “প্রাকৃতিক নয়”, ফলে এর প্রতি মানুষের মানসিক অনীহা থাকতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদে এই খাবার স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
তবু বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। প্রযুক্তি যেমন দ্রুত সাশ্রয়ী হচ্ছে, তেমনি মানুষের মানসিকতা বদলাচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো রেস্তোরাঁ বা সুপারশপে আমরা দেখতে পাব ল্যাবে তৈরি মাংস, মাছ বা দুধ—পুরোপুরি প্রাকৃতিক স্বাদের, কিন্তু পরিবেশবান্ধব ও cruelty-free। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে হয়তো এভাবেই মানবজাতি তাদের খাদ্যের নতুন সমাধান খুঁজে পাবে—কৃত্রিম হলেও টেকসই, বৈজ্ঞানিক আর মানবিক এক “ভবিষ্যতের প্লেট।”
আপনার মতামত জানানঃ