বিহারের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর জয়ের ইঙ্গিত স্পষ্ট হতেই আসামের বিজেপি মন্ত্রী অশোক সিংঘল এক্স–এ পোস্ট করলেন ফুলকপি ক্ষেতে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা কপির ছবি। সঙ্গে লিখলেন, “বিহার অ্যাপ্রুভস গোবি ফার্মিং”—অর্থাৎ বিহার এবার কপি চাষকে অনুমোদন দিল। দেখতে সাধারণ রাজনৈতিক রসিকতা মনে হলেও, ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাস জানারা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যান—এটি কেবল কৃষি বা ভোটের রসিকতা নয়, বরং ভাগলপুরের এক গণহত্যার রক্তাক্ত স্মৃতিকে টেনে আনা। যে স্মৃতিতে রয়েছে লাশের স্তূপ, পুকুরের জল আর সেই লাশের ওপরে কপি চাষের বিভীষিকা।
সিংঘলের পোস্টের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। আসাম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ লিখলেন, এই ধরনের পোস্ট রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন এক ‘নিম্নমানের’ দৃষ্টান্ত। তাঁর ভাষায়, এটি একই সঙ্গে অশ্লীল ও লজ্জাজনক—কারণ এভাবে এক ভয়াবহ মানবিক ট্র্যাজেডিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা মানে জনজীবনের নৈতিকতার এক ভাঙা চিত্র তুলে ধরা। কিন্তু যতই সমালোচনা হোক না কেন, এই পোস্টের ফলে তিন দশক আগের সেই অন্ধকার সময়টি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে—১৯৮৯ সালের ভাগলপুর দাঙ্গা এবং বিশেষ করে লোগাঁয় গ্রামের গণহত্যা।
১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ আন্দোলন তখন তুঙ্গে উঠছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সারা দেশ থেকে ‘রামশিলা’—‘শ্রীরাম’ খোদাই করা ইট—অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছে। বিহারের ভাগলপুরও সেই উত্তেজনার বাইরে ছিল না। ২৪ অক্টোবর নাথনগর এলাকা থেকে বের হওয়া এক রামশিলা মিছিলেই পরে দাঙ্গার প্রথম স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়। মিছিলটি মুসলিম অধ্যুষিত এক এলাকা দিয়ে যাওয়ার কথা। প্রশাসন আগে থেকেই মুসলিম প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে শর্তসাপেক্ষে মিছিলের অনুমতি দেয়—কোনো উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে মিছিল থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠতে থাকে, বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
এক পর্যায়ে একটি মুসলিম স্কুলের সামনে পৌঁছোতেই পরিস্থিতি বিস্ফোরক হয়ে ওঠে। সরকারি বিবরণে বলা হয়, মিছিলে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। জেলাশাসক নর্দমায় পড়ে যান, পুলিশ সুপার গাড়ির আড়ালে আশ্রয় নেন, আর চারদিকে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। পুলিশ গুলি চালায়, মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঠিক কোন মুহূর্তে দাঙ্গা গোটা শহর আর আশেপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, আজও তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এরপরের কয়েক দিন ভাগলপুর শহর, পারবতী, লহারিটোলা, উর্দু বাজার, আর আশেপাশের গ্রামগুলোতে হিন্দু–মুসলমান সহিংসতা এক ভয়াবহ রূপ নেয়।
এই দাঙ্গার সবচেয়ে বিভীষিকাময় ঘটনাগুলোর একটি ঘটে লোগাঁয় গ্রামে। শহর থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরের এই ছোট্ট গ্রামে তখন মুসলমান পরিবারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫টি। ২৭ অক্টোবর গভীর রাতে গ্রামটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে সশস্ত্র দাঙ্গাকারীরা। বাড়ি বাড়ি ভেঙে, লুটপাট চালিয়ে তারা পুরুষদের আলাদা, নারী ও শিশুদের আলাদা করে ধরে। রাতের অন্ধকারে শুরু হয় গণহত্যা। লাঠি, তলোয়ার, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে তারা ৫৫ জন পুরুষ ও ৬১ জন নারীকে হত্যা করে। বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা না রেখে লাশগুলো ফেলে দেওয়া হয় গ্রামের পাশের এক পুকুরে।
এখানেই শেষ নয় নৃশংসতার কাহিনি। কয়েকদিন পর প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেই পুকুর থেকে লাশ তোলা হয়। কিন্তু সম্মানজনকভাবে দাফন বা শ্মশানে সৎকারের বদলে লাশগুলো তুলে আশেপাশের কৃষিজমিতে পুঁতে ফেলা হয়। তারপর ওই জমিতে বপন করা হয় শীতের সবজি—কপি আর সরষের বীজ। কয়েক সপ্তাহ পর যখন তদন্ত শুরু হয়, তখন লাশের স্তূপ ঢাকা পড়ে গেছে সবুজ গাছের চারা আর মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পচনশীল দেহ নিয়ে। এই ‘কপি চাষ’ই পরবর্তীকালে ভাগলপুরের দাঙ্গা নিয়ে আলোচনা হলেই এক ধরনের ভৌতিক প্রতীকে পরিণত হয়—যার দিকে এবার ইঙ্গিত করেছেন অশোক সিংঘল।
এই ঘটনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয় খুব দেরিতে এবং এগোয় অত্যন্ত ধীরগতিতে। প্রথম এফআইআর হয় ২৯ অক্টোবর, লোগাঁয় গ্রামের চৌকিদারের জবানবন্দির ভিত্তিতে। ধারণা করা হয়, মামলাটি নথিবদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরই প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে লাশগুলো পুকুর থেকে তুলে পুঁতে ফেলা হয়। পরে আজরাফ আলি নামের এক গ্রামের বাসিন্দার বয়ানের ভিত্তিতে আরেকটি এফআইআর হয়। দাঙ্গার ১৮ বছর পর, ২০০৭–২০০৮ সালের দিকে ভাগলপুরের আদালত ধীরে ধীরে একে একে অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে শুরু করে। সেই তালিকায় ছিল স্থানীয় থানার ওসি রামচন্দ্র সিংসহ একাধিক ব্যক্তির নাম, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা শুধু এলোপাথাড়ি গুলি চালানো বা নিষ্ক্রিয় থাকা নয়, বরং সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন নিরস্ত্র মানুষ হত্যার অভিযানে।
এই দাঙ্গায় আরেকটি ভয়াবহ অধ্যায়ের নাম চান্ধেরি গ্রাম। সেখানে অন্তত ৬০ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এই গ্রামেরই এক কিশোরী, তখন মাত্র ১৪ বছরের মলকা বেগম, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান, যদিও দাঙ্গাকারীর তলোয়ারের কোপে তাঁর ডান পা গোঁড়ালি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বছর কেটে গেছে, কিন্তু তাঁর স্মৃতিতে সেই রাত আজও দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসে।
সেদিন ছিল শুক্রবার, জুম্মার নামাজের দিন। গ্রামে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই হিন্দু–মুসলিমদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। মলকার বর্ণনায়, মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসলমানদের বাধা দেওয়া হয়। দু’পক্ষের মধ্যে পাথর নিক্ষেপ ও পটকা–বোমা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। পুরো দিন জুড়ে চলতে থাকে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া, লুটপাট আর আগুন লাগানো। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ এসে আশ্বাস দিয়ে চলে যায়, তারা আবার ফিরে আসবে বলে। কিন্তু সেই আশ্বাস রাতের অন্ধকারে আর কোনো সুরক্ষা হয়ে উঠতে পারেনি।
রাত গভীর হলে গ্রামে আসে ‘ফৌজি’ পোশাক পরা কিছু মানুষ। প্রথমে তারা নিজেদের সেনা বা নিরাপত্তা বাহিনীর বলে পরিচয় দেয়, গ্রামের মানুষকে আশ্বস্ত করে যে তারা সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবে। নারী–পুরুষ–শিশুরা তখন একসঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। সামনে আর পেছনে কেবল সশস্ত্র পুরুষ, মাঝখানে নারী ও শিশু। কিছুদূর এগোতেই বুঝতে দেরি হয় না—এরা রক্ষক নয়, বরং হত্যাকারী। রাস্তার পাশে আগে থেকেই লুকিয়ে রাখা ছিল তলোয়ার, লাঠি, অন্যান্য অস্ত্র। একদিকে ঘর, অন্যদিকে পুকুর—পালানোর পথ নেই। শুরু হয় নির্বিচার কুপিয়ে হত্যা। কেউ সামনে থেকে, কেউ পেছন থেকে আঘাত পায়; মায়ের কোলে থাকা শিশুদের টেনে নিয়ে মাটিতে ফেলে হত্যা করা হয়।
মলকা বেগম কোনোভাবে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। সেই সময়ই তাঁর পায়ে পড়ে তলোয়ারের কোপ। তিনি দেখেন, তাঁর বাবা–মা ও আত্মীয়দের একে একে কেটে ফেলছে দাঙ্গাকারীরা। পরে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে, লাশগুলো পুকুরে ফেলে কচুরিপানায় ঢেকে রাখতে হবে—যাতে পুলিশ তৎক্ষণাৎ কিছু টের না পায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে পুকুরের ঠান্ডা জলে লাশের সঙ্গে ভেসে থাকতে থাকতে মলকা কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে যান।
এরপর ভাগলপুরে সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ, বিএসএফ মোতায়েন করা হয়। বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে সেনা নামানোর নির্দেশ দেন। মলকার বর্ণনায়, সেই ‘ফৌজি’ দলই পরে আবার গ্রামে ফিরে আসে। যখন তারা জানতে চায়, এত মানুষেরা কোথায় গেল, দাঙ্গাকারীরা উত্তর দেয়—সবাই ভয়ে পালিয়ে গেছে। তখনও গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না মলকার, কিন্তু সেনাদের গাড়ি চলে যাওয়ার মুহূর্তে তিনি কোনোভাবে চিৎকার করতে সক্ষম হন। একজন সেনা তাঁর দিকে বন্দুক বাড়িয়ে দেন, সেটি আঁকড়ে ধরে তিনি পানির ভেতর থেকে উপরে ওঠেন। সেই এক মুহূর্তের সহায়তাই তাঁর বেঁচে যাওয়ার গল্প তৈরি করে।
ভাগলপুরের এই দাঙ্গা কেবল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নজিরই নয়, বিহারের রাজনীতির গতিপথও বদলে দেয়। মুসলিম ভোটব্যাংকের দীর্ঘকালীন আশ্রয়স্থল ছিল কংগ্রেস। কিন্তু দাঙ্গার আগে–পরে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ ভগবৎ ঝা আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মুসলমানদের দিয়ে রামশিলা মিছিল আটকানোর পথ তৈরি করতে গিয়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন এবং তা থেকে রাজনৈতিক সুবিধা তোলার চেষ্টা করেন। অপরদিকে, দাঙ্গায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসা কামেশ্বর যাদবের নাম পরে বিহারের রাজনীতিতে আরেক ধরনের প্রতীকে পরিণত হয়—যাকে অনেকেই মুসলিম নিধনের নেতাদের একজন হিসেবে দেখেছেন, আবার যিনি লালু প্রসাদ যাদবের ‘জাতভাই’ পরিচয়ে সুরক্ষাও পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
লালু প্রসাদ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ভাগলপুর দাঙ্গার বিচার কার্যত পিছনের সারিতে চলে যায়—এমন অভিযোগ করেন অনেক পর্যবেক্ষক। কিন্তু একই সঙ্গে এই দাঙ্গার পর থেকেই মুসলমানদের একাংশ ক্রমশ কংগ্রেসের ঘর ছেড়ে লালু প্রসাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন, মূল কারণ ছিল বিজেপি–বিরোধিতা ও নিরাপত্তাহীনতার ভয়। অন্যদিকে লালুর নিজের জাতের বড় অংশ তাঁকে সমর্থন করে, কারণ তারা দেখে—দাঙ্গার অভিযুক্ত কামেশ্বর যাদবের মতো নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে ভাগলপুর দাঙ্গা একদিকে যেমন কংগ্রেসের মুসলিম সমর্থন ক্ষয়ে যাওয়ার সূচনা, অন্যদিকে জাতপাত–কেন্দ্রিক নতুন সমীকরণের জন্ম দেয়।
২০০৫ সালে নীতীশ কুমার বিহারের ক্ষমতায় এসে ভাগলপুর দাঙ্গা নিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার নতুন উদ্যোগ নেন। তিনি বিচারপতি এনএন সিংয়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন, যাদের এক হাজার পাতার রিপোর্ট ২০১৫ সালে বিধানসভায় পেশ হয়। রিপোর্টে মূলত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গাফিলতি, পক্ষপাত আর নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করা হয়। অনেক পুরোনো মামলার পুনর্জীবন হয়, কিছু দোষী শাস্তি পায়; কিন্তু যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের কাছে ন্যায়বিচার আজও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। কামেশ্বর যাদবের মৃত্যু হয় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে—আইনের কাঠগড়ায় তাঁর বিরুদ্ধে সব প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায়নি কোনোদিনই।
এই দীর্ঘ প্রেক্ষাপটের মধ্যে দাঁড়িয়ে, আজ যখন কোনো শাসকদলের মন্ত্রী ‘গোবি ফার্মিং’কে বিহারের ম্যান্ডেট বলে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করেন, তখন তা শুধু একটি রাজনৈতিক টুইট থাকে না। এটি হয়ে ওঠে লোগাঁয় পুকুরে ভেসে থাকা লাশ, কচুরিপানায় ঢেকে দেওয়া মৃতদেহ, আর সেই লাশের ওপরে জন্মানো ফুলকপির গন্ধমাখা স্মৃতির ওপর নির্মম হাসি। মলকা বেগমদের মতো জীবিত প্রত্যক্ষদর্শীরা আজও মনে করেন, তাদের গ্রামের মাঠে ওঠা সবজির গায়ে লেগে আছে পচা মৃতদেহের গন্ধ। সেই গন্ধ কি সত্যিই কখনো মিলিয়ে যায়? না, বরং সময়ে সময়ে রাজনীতির মঞ্চ থেকে কেউ কেউ সেটাকে আবার টেনে এনে, এক চিলতে ব্যঙ্গ আর বিজয়ের উল্লাসের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়–পরাজয় এসে যায় যায়, পাল্টায় জোট, বদলায় মুখ্যমন্ত্রী, নতুন নতুন স্লোগান তৈরি হয়। কিন্তু ভাগলপুরের মতো দাঙ্গা, লোগাঁয় ও চান্ধেরির মতো গণহত্যা, আর কপি চাষের আড়ালে লাশ লুকিয়ে রাখার মতো কাহিনি ইতিহাসের ভাঁজে গিয়ে থেমে থাকে না। যখনই কেউ সেখান থেকে কোনো প্রতীক টেনে এনে বর্তমান রাজনীতিতে ব্যবহার করে, তখনই আবার সামনে চলে আসে সেই এক হাজারেরও বেশি নিহত মানুষের মুখ, তাদের পরিবার, আর বেঁচে থাকা সাক্ষীদের অসমাপ্ত কান্না। অশোক সিংঘলের এক টুইট সেই ক্ষতের ওপর নতুন করে আঁচড় কাটল—কেউ সেটাকে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা, কেউ বা বিদ্রূপ, আবার কেউ কেউ অমানবিক নিষ্ঠুরতা বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কিন্তু যাদের লাশের ওপর সত্যি সত্যি কপি চাষ হয়েছিল, তাদের উত্তর প্রজন্মের কাছে এই স্মৃতি কেবল রাজনীতির উপকরণ নয়; এটি তাদের অস্তিত্বের অংশ, তাদের ভয়ের ইতিহাস, এবং রাষ্ট্রের কাছে বারবার ন্যায়বিচারের দাবির আর্তনাদ।
আপনার মতামত জানানঃ