হোয়াং হো নদকে এক সময় বলা হতো চীনের দুঃখ। সেই নদকে শাসন করে জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটি গড়ে তুলেছে চীনের সরকার। সেই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে চীনের হোয়াং হো নদী ও সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়কে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে। বাঁধের দুই পাশে থাকবে মেরিন ড্রাইভ।
তৈরি হবে আধুনিক সেচ প্রকল্প ও যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ কৃষি খামার। একই সঙ্গে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠা তিস্তা স্যাটেলাইট শহর গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোন্ দিকে যাচ্ছে। উপদেষ্টা বলেছেন চীনকে শর্ত দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো চীনের দিকে টানছে। এদিকে তিস্তা বাঁচাও এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। সব মিলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব বাড়ছে। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনরোধ ও ন্যায্য পানি হিস্যা এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল কুড়িগ্রামের উলিপুরে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন উলিপুর উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক উপজেলা এিনপির সভাপতি হায়দার আলী মিঞা।
তিস্তার মহাপরিকল্পনা আধার কেটে গেল ২৫ বছর, উন্নয়ন বঞ্চিত ৮ জেলার মানুষ, নদীতে বিলীন ৩ কোটি পরিবার। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আটকে থাকলেও ৮ জেলার ৪২ ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন ও বন্যা থেমে নেই। এই ভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। বিলীন হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি। খরাকালে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও খননের কাজ শুরুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রংপুরের বাসিন্দারা। চীনের প্রস্তাবিত ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষের ভাগ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বাড়বে। বন্যার পানি প্লাবিত হয়ে ভাসাবে না গ্রামগঞ্জের জনপদ। সারা বছর নৌ চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যাবে। এতে আছে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দু’পাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার ও ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন। নৌ-বন্দর এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দুই পাড়ে থানা, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে প্রকল্পটিতে।
গত ডিসেম্বরের মধ্যেই চীনের চুক্তি ও টেন্ডার। প্রকল্প ব্যয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। তিস্তার পানি চুক্তির প্রয়োজন পড়বে না। ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের কারণে নদীটির শাখা-প্রশাখা ও উপনদীগুলো ভরাট, দখল ও তিস্তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পরিণতিতে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টান পড়েছে ভূগর্ভস্থ উৎসে। নদীর পানির চাপ না থাকায় সাগরের নোনাপানি দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে ওই অঞ্চলের মৎস্য চাষ, ফসল আবাদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলছে। তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ধাপে ধাপে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ, রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র, ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতকেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, ইপিজেড, ইকোনমিক জোন, কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি উদ্ধার, বনায়ন ইত্যাদি রয়েছে। এতে পাল্টে যাবে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের জীবনমান।
এদিকে তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষদের দুঃখ ও দুর্দশার কথা শুনতে রংপুরের কাউনিয়ায় যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। আজ রোববার সেখানে যাচ্ছেন তারা। দুই উপদেষ্টা হলেন, পানি সম্পদ এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আজ তিস্তা নদীর ভাঙ্গন দেখতে আমরা দুই উপদেষ্টা রংপুরে। সরেজমিন দেখা হবে। চীনের সাথে তিস্তা নিয়ে যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চুক্তি হওয়ার কথা সেটি হবে। আমরা কিছু বিষয়ের উপর চীনকে শর্ত দিয়েছি।
তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করা হয় প্রথমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দিয়ে। গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এবং চলতি বছরের গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন সরকারের সাথে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চুক্তি ছিলো তা যথাযথভাবে কাজ করেছে চীন। তবে এ চুক্তি আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে দিল্লির মোদির এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু ফ্যাসিবাদ কর্মকর্তার কারণে তিস্তা মহা প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দফতরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে। এদিকে তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও অর্থসহ সব কিছু ঠিক থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের পরে তিস্তা প্রকল্পের কাজ একা চীন নয়, ভারতও যুক্ত হবে এমন ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ঘোষণার পরে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে রশিটানা-টানি চলছে। এ মধ্যে সুযোগ নিয়েছে ভারত। পতিত সরকার পতনের পর ভারতকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত করার সম্ভাবনা নেই। তবে অর্থায়নের উৎস যেখান থেকে আসুক না কেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি অপরিহার্য মহাপরিকল্পনা। জনস্বার্থে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ইআরডিকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে তিস্তার পাড়ের মানুষের অভিযোগ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো নির্দেশনা না দিলে অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রকল্পের সাথে বেইমানী করবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের প্রকল্প তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো তৎপরতা নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। কিন্তু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে চীন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিস্তায় ভারতের সম্ভাবনার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপরীতে এই প্রকল্পের নিজেদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা জেগেছে চীনের। এতে বিপাকে ভারত। কেননা প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাব দিয়েছিল চীন। পরবর্তীতে ভারত প্রস্তাব দিলেও তা ভারতের আশা পূরণ হচ্ছে না। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ভারত বাংলাদেশকে শোন করেছে। আর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সময়ক্ষেপণ করে। তবে কি তিস্তা প্রকল্পের কাজ চীন সরকারকে করতে হবে। তা বাংলাদেশের মানুষের দাবি বলে জানা গেছে।
পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দফতরে পাঠানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনা কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক গত ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত হয়। নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি)টির মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্মারক ১, ২ ও ৩ মোতাবেক বর্ণিত নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে ৩ দফায় যথাক্রমে ২০২০-২০২২ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ইআরডির মাধ্যমে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাবনা চায়না সরকারের কাছে পাঠানো হয়।
চীন সরকার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করার পরে বাংলাদেশের চীনা দুতাবাসের মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ প্রদান করে। পাওয়ার চায়না সেই মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সমৃদ্ধ করে পুনরায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি পাওয়ার চায়না প্রকল্পটি শুরুর পূর্বে উল্লেখিত কাজগুলো ছাড়াও আরো কিছু প্রকৌশলী গত কাজ সম্পন্ন করা এবং মহামারি কোভিডের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করে নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক এর মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদন করেছে। চায়না কোম্পানি আবেদন মোতাবেক নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
এ মাসেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনা কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তার আঁধার কেটে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মাটি-নদী-জমি তারপরও দিল্লির মোদির ও মমতার বাধায় তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। চীনের ঋণ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশে বিশদ সমীক্ষা শুরু করে বাংলাদেশ ও চীন। ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কিছু অগ্রগতি হলেও গত ২৪ জুন তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও ভারত আন্তরিক বলে আটকে দিয়েছে তিস্তা মহাপ্রকল্পে দিল্লির মোদি। চীনকে নিয়ে তিস্তায় মহাবিপদে ভারত। তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কৌশলে বাংলাদেশ। তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র বিভাগ রংপুর। আর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ও গরিব জেলাগুলোর পাঁচটিই রয়েছে সর্বনাশা তিস্তাজুড়ে। ভাঙ্গনখ্যাত তিস্তা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার নাম। ২৩৪ বছর বয়সী তিস্তার প্রবাহ এই পাঁচ জেলার বুক চিরে প্রতিবছরই ডেকে আনছে বন্যা ও খরা। এতে মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারি হচ্ছে, প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে দুই পাড়ের জীবন চক্র। নদীপাড়ের মানুষের বসতভিটা, ফল-ফলাদি, সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়া তিস্তা নিজেও ভালো নেই। শুকনা মৌসুমে তিস্তার চারদিকে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ঝুঁকির মুখে পড়ে তিস্তাতীরবর্তী মানুষ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে চার মাস পূর্ণ হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথমদিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু পতিত হাসিনার পতন হয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারতের সম্ভাবনা থাকছে। তবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে ভারতীয় দোসরদের কারণে রংপুর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের প্রকল্প তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো তৎপরতা নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। কিন্তু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে চীন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের অর্থায়নের সম্ভাবনার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপরীতে এই প্রকল্পের নিজেদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা জেগেছে চীনের। কেননা প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অনেক কাজ বাস্তবায়ন করেছে চীন।
পরবর্তীতে প্রস্তাব দেয় ভারতও। তবে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় কোনো উৎস থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। গত ২০২০ সালের আগস্টে আট হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি (প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট প্রোপোজাল) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল।
পিডিপিপি’র ব্যাপারে চীন সরকার গত বছরের পাঁচ মার্চ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার রাজাহাট, উলিপুর, চিলমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি। তবে শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিই তিস্তা নদীবেষ্টিত। নদীশাসন না হওয়ায় গত পাঁচ বছরে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে তিস্তা পাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। চীনের হোয়াংহো নদীকে একসময় বলা হতো চীনের দুঃখ। প্রতি বছর ওই নদীর পানি ভাসিয়ে দিত শত শত মাইল জনপদ। ভেঙে নিয়ে যেত বহু গ্রাম-জনপদ। সেই সর্বনাশা নদীশাসন করায় (পরিকল্পিত ড্রেজিং) চীনের মানুষের দুঃখ ঘুচেছে। হোয়াংহো এখন হয়ে গেছে চীনের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। হোয়াংহোর মতোই এখন বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের ‘পাগলা নদী’ খ্যাত তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানো সম্ভব বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেছেন, তিস্তা বাঁচাও এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করে আসছে স্থানীয়রা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ তিস্তা শুকিয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে। বহুরূপী তিস্তায় স্থানীয়রা হয়ে পড়ছেন নিঃস্ব।
উলিপুর উপজেলা তিস্তা সমন্বয়ক কমিটির প্রধান হায়দার আলী জানান, ব্রহ্মপুত্রের তীর বা বাঁধ সংরক্ষণের কাজ চলছে। এতে কিছু উপকার হচ্ছে। তিস্তার যে দাবি উঠেছে তা দীর্ঘদিনের। এই কর্মসূচি বিএনপি বাস্তবায়ন করবে। এটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সবকিছুর জন্য দাবি-দাওয়া ওঠাতে হয়। আমরা এখনই চাচ্ছি আন্দোলনটা বেগবান করবো। এখন থেকেই এটার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এটা একটা মেগা প্রকল্প। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিস্তা ব্যারেজ করেছিলেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন এই তিস্তাকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করা যায়। পানিকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করা যায় বাংলাদেশে
আপনার মতামত জানানঃ