কারাগারে বন্দী হলমার্ক কেলেঙ্কারির আসামি হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমদকে কারা কর্মকর্তাদের কক্ষে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়। অবশেষে হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তুষার আহমেদের সঙ্গে কারাগারে এক নারীর সময় কাটানোর ঘটনায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়কে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসাথে জেলার নুর মোহাম্মদকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ রবিবার(২৪ জানু) দুপুরে তাদেরকে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন।
কারাগার সূত্র জানায়, পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধাকে কারা অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে আলোচিত এই ঘটনায় শুক্রবার রাতে ডেপুটি জেল সুপার মোহাম্মদ সাকলাইন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মোট ৫ জনকে প্রত্যাহার করল কারা অধিদপ্তর।
দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম কেলেঙ্কারি হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের ভায়রা ও হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমদকে কারা কর্মকর্তাদের কক্ষে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আবরার হোসেনকে প্রধান করে উপসচিব (সুরক্ষা বিভাগ) আবু সাঈদ মোল্লাহ ও ডিআইজি (ময়মনসিংহ বিভাগ) জাহাঙ্গীর কবিরকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া একই ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবুল কালামকে প্রধান করে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা ফারজানা ও ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কারাগারের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এই ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের চিহ্নিত করেছে ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি।
রত্না রায় ঘটনার জন্য জেলার নূর মোহাম্মদকে দায়ী করে একটি প্রতিবেদন কারা মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিজের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেননি। তিনি প্রতিবেদনে বলেন, তাকে না জানিয়েই জেলার এটা করেছেন। অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি রত্না রায়ের।
যদিও নূর মোহাম্মদ বলেন, রত্না রায়ের নির্দেশে তিনি তুষার আহমদকে ওই নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর অনুমতি দেন।
কারাগারে সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি কারাগারে প্রবেশ পথে কর্মকর্তাদের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় কালো রঙের জামা পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ। তিনি সেখানে আসার কিছু সময় পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পরা এক নারী সেখানে প্রবেশ করেন। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায় ও ডেপুটি জেলার সাকলাইনের উপস্থিতিতেই এ ঘটনা ঘটে। তাদের সহযোগিতার বিষয়টিও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে।
তবে ভিডিও ফুটেজে জেল সুপার রত্না রায়ের সংশ্লিষ্টতা দেখা গেলেও নিজের করা প্রতিবেদনে নিজের কোনো দায় বা অবহেলার কথা উল্লেখ করেননি তিনি। জেল সুপার রত্না প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে তার অগোচরে ও গোপনে হয়েছে। কারাগারের গেটে জেলারই তাদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং ডেপুটি জেলার তাদের রিসিভ করেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে রয়েছে। সামগ্রিক বিষয়টি ওয়াকিটকির মাধ্যমে না বলে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে মুঠোফোনের মাধ্যমে হওয়ায় কেউ জানতে পারেনি। তার দাবি, তাকে না জানাতেই এসব করা হয়েছে।
অথচ ভাইরাল হওয়া সিসি ক্যামেরার ওই ভিডিওতে দেখা যায়, অন্য দুই যুবকের সঙ্গে ওই নারী করাফটক পেরিয়ে অফিস কক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সময় তখন দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিট। এর পর কাশিমপুর কারাগার-১-এর ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন ও সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ওই নারীকে গ্রহণ করছেন। ওই নারীর গায়ে বেগুনি রঙের সালোয়ার-কামিজ ও মুখে মাস্ক পরা।
ভিডিও ফুটেজে জেল সুপারের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করা গেলেও জেল সুপার রত্না রায় তার দেওয়া প্রতিবেদনে নিজেকে পরোক্ষ করে হলেও কোথাও রাখেননি। এনিয়ে সর্ব মহলে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু কারসাজি করেও অবশেষে নিজেকে আর রক্ষা করতে পারলেন না জেল সুপার।
এশডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৮
আপনার মতামত জানানঃ