খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে মিলন বিকাশ ত্রিপুরা নামে এক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় আঘাত ও গলায় গামছা পেঁচানোর দাগ দেখা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। পরে বেলা আড়াইটার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় কারাগার কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছে বিকাশের পরিবার।
নিহত মিলন ত্রিপুরা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার অরুন পাড়া এলাকার মনসারাই ত্রিপুরার ছেলে। তিনি গুইমারা থানায় দায়ের করা একটি পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি হয়ে কারাগারে ছিলেন।
গত ১৬ মে খাগড়াছড়ির গুইমারা থানায় দায়ের করা একটি পর্নোগ্রাফি মামলায় আটক করা হয় মিলন বিকাশ ত্রিপুরাকে। পরের দিন ১৭ মে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কয়েদি ওয়ার্ডে সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতের কোনো এক সময় মিলন নিজের ব্যবহৃত গামছা গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এরপর কারাগারের লোকজন জানতে পেরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার মো. দিদারুল আলম জানান, আসামি মিলন সকালে কারাগারের আইসোলেশন সেন্টারের টয়লেটে যান। কিন্তু দীর্ঘসময় পরেও টয়লেট থেকে বের না হওয়ায় অন্য আসামিরা সেখানে গিয়ে টয়লেটের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে মিলনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি জেলা কারাগার থেকে এক আসামিকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রশিদ বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জেলা কারাগারের ওই কক্ষে নিহত মিলনসহ আরও ২২ জন কয়েদি ছিল। কয়েদিরা তাকে দেয়ালে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেছে বলে জানিয়েছে। ভোর রাতের ঘটনা হওয়ায় তখন সবাই ঘুমে ছিল। তার মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহজনক।
তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় জেল সুপার বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেল সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সহকারী কমিশনার মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, শুক্রবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে কারাভ্যন্তরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে টয়লেটের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে গলায় গামছা পেঁছিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এসময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে। পরে কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জনের পরামর্শে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে নওগাঁয় কারাগারে দুলাল হোসেনে (৬০) নামে আরেক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৮ মে) দুপুরে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত দুলাল সাপাহার উপজেলার বাসিন্দা।
জেল সুপার ফারুক আহম্মেদ গণমাধ্যমকে জানান, পারিবারিক ঝামেলায় তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গত মার্চ মাসের ১৫ তারিখের জেলে আসেন দুলাল। ভোরে বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও আনান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও এটির উন্নতিতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। চিকিৎসক এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার কারণে কারাগারে এর আগেও বন্দি মারা গিয়েছে।
তারা বলেন, ১৮৯৪ সালের প্রিজন অ্যাক্টের ১৩ ধারা মতে, একজন বন্দির পূর্ণ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন মেডিক্যাল অফিসার প্রতি ২৪ ঘণ্টা অন্তর বন্দিদের শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও তাদের নানা অসুস্থতা সম্পর্কে জানার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে, বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে মানা হয় না। এদিকে ১৮৬৪ সালের জেলকোড বন্দিদের চিকিত্সা পাওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ ব্যবস্থা রেখেছে।
এ বিধান অনুযায়ী, কোনো বন্দি অসুস্থ হলে প্রহরীরা সঙ্গে সঙ্গে হেড ওয়াড্রেনকে জানানোর কথা রয়েছে। তিনি সাব-অ্যাসিসট্যান্ট সার্জনকে বন্দির অসুস্থতা সম্পর্কে জানাবেন। এরপর অ্যাসিসট্যান্ট সার্জন সঙ্গে সঙ্গে বন্দির ওয়ার্ড ভিজিট করবেন। বন্দির অবস্থা বুঝে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে ১৮৬৪ সালের জেলকোডে। এ বিষয়ে তিনি জেলার এবং মেডিক্যাল অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। বাংলাদেশের জেলখানায় এ নিয়মগুলো মানা হয় না বলে অনেকের অভিযোগ।
বর্তমান সরকারের আমলে কারাগারে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশেষ করে বিরোধী বা ভিন্নমতের মানুষের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটছে। এর দায় অবশ্যই সরকারকেই নিতে হবে। বলেন, কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ