গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর এক কারারক্ষী কারাগারে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ৩২৮ পিস ইয়াবাসহ ধরা খেয়েছেন। ইয়াবাসহ আটক করার পর তাকে পুলিশে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার(২৯ এপ্রিল) রাত আটটার দিকে কারাগারের মূল ফটক (আরপি গেট) থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক কারারক্ষীর নাম পিন্টু মিয়া (২৮)। তিনি ঢাকার ধামরাই থানার ঘারাইল এলাকার আবদুল ওয়াহিদের ছেলে। পিন্টু কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ কারারক্ষী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এর জেলার রিতেশ চাকমা বলেন, কারারক্ষী পিন্টু মিয়া বাইরে থেকে কারাগারে প্রবেশ করছিলেন। একপর্যায়ে আরপি গেটের কারারক্ষীরা তাকে তল্লাশি করেন। এ সময় তার কাছ থেকে ৩২৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে কারারক্ষী পিন্টু মিয়াকে উদ্ধার করা ইয়াবাসহ গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলার রীতেশ চাকমা বলেন, পিন্টু মিয়া তিন বছর ধরে এখানে কারারক্ষী পদে চাকরি করছেন। এর আগে তিনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী ছিলেন। সে সময় একবার পিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে বন্দিদের গাঁজা সরবরাহের অভিযোগ ওঠে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সিদ্দিক বলেন, গতকাল রাত ৮টার দিকে পিন্টু মিয়া কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের মেইন গেট দিয়ে ঢোকার সময় তার আচরণ ছিল সন্দেহজনক। সেখানে দায়িত্বরত কারারক্ষী আতিকুর রহমান তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে ৩২৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেন। কারা কর্তৃপক্ষ থানায় সোপর্দ করার পরে রাত ১১টার দিকে পিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার কারারক্ষী পিন্টু মিয়াকে আদালতে পাঠানো হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারাগারের ভেতরে যাতে কোনোভাবে মাদক ঢুকতে না পারে এজন্য লাগেজ স্ক্যানার ও বডি স্ক্যানার বসানো হলেও উন্নত প্রযুক্তির এসব সরঞ্জাম খুব বেশি কাজে লাগছে না। বরং সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র নিত্য-নতুন অভিনব কৌশলে আগের মতোই নির্বিঘ্নে জেলখানার ভেতরে কয়েদি ও হাজতিদের হাতে ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে মাদকাসক্ত কারাবন্দিদের নেশা তো কমছেই না, বরং তাদের পাল্লায় পড়ে অন্য কয়েদিরা এতে নতুন করে আসক্ত হচ্ছে।
তারা বলেন, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন সময়ের গোপন প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের মাধ্যমে এবং আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় কিছু মাদকদ্রব্য কারা অভ্যন্তরে ঢুকলেও এর বড় চালানগুলো মূলত: কারারক্ষীরাই সরবরাহ করছে। জেলখানার ভেতরে মাদক ব্যবসার অন্তরালে কারা কর্তৃপক্ষের কতিপয় দুর্নীতিবাজ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ রয়েছে। যে কারণে অসাধু কারারক্ষীদের পক্ষে এ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া সহজ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কারাগারগুলোতে কারারক্ষীদের প্রশ্রয়ে একদিকে যেমন কয়েদিদের মাঝে মাদক সেবন হয় তেমনি হয় কারারক্ষীদের মাঝেও। কারাগারগুলোতে মাদকের চাহিদা থাকায় কারারক্ষীদের অনেকেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত এরাই কারাগারের মাদকের যোগান দিয়ে থাকেন। একইসাথে নিজেদের মাঝেও সেবন চলতে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতে মাদক সেবন মামলায় কয়েদিদের সাথে কারারক্ষীদের পার্থক্য ঘুচে গেছে। কারাগারের ভেতরে একদল এবং একদল বাইরে থাকা ব্যতিত অন্যকোনো তফাৎ নেই। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক নজর কিংবা মিডিয়ার অতোটা পদচারণা না থাকাতে তারা নির্বিঘ্নে মাদক সেবন ও বিক্রি করে থাকেন। এর আগে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় কোনো কোনো কারারক্ষী বরখাস্ত হলেও তাদের ব্যাপারে প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ