পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ খুবই প্রচলিত। আসামির তালিকা থেকে আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য পুলিশের উৎকোচ গ্রহণের ঘটনা সর্বজনবিদিত। এবার আসামির পক্ষ থেকে আসামিকে বাঁচানোর জন্য আদালত শুরুর আগে বিচারককে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন এক এসআই। সিলেটের জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারককে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন জকিগঞ্জ থানার এসআই রাজা মিয়া। এসময় ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা আদালতে গিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপনার শর্তে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এ ঘটনায় গত বুধবার রাজাকে জকিগঞ্জ থানা থেকে ক্লোজড করা হয়।
[zoomsounds_player artistname=”সংবাদটির” songname=”অডিও শুনুন” type=”detect” dzsap_meta_source_attachment_id=”4701″ source=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/01/আসামি-বাঁচাতে-বিচারককে-ঘুষ-দিতে-গেলেন-এসআই.mp3″ thumb=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2020/10/fav.png” config=”default” autoplay=”off” loop=”off” open_in_ultibox=”off” enable_likes=”off” enable_views=”off” enable_rates=”off” play_in_footer_player=”default” enable_download_button=”off” download_custom_link_enable=”off”]
আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, একটি সিআর মামলা তদন্ত করে একজন আসামিকে বাদ দিয়ে তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন এসআই রাজা মিয়া। বিজ্ঞ আদালত কেন একজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানীর দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার ধার্য তারিখে অনুমতি ছাড়া এসআই রাজা মিয়া বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগরের খাস কামরায় ঢুকে ঘুষ প্রদানের চেষ্টা করেন। বিচারক এসআইকে কৌশলে এজলাসে নিয়ে যান। সেখানে আইনজীবী ও উপস্থিত লোকজনদের সামনে এসআই রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তারপূর্বক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হয়।
পরে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আব্দুন নাসের ও জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বিচারকের খাস কামরায় অবস্থান করে বিভাগীয় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার শর্তে তাকে মুক্ত করেন।
এ অভিযোগে বুধবার এসআই রাজা মিয়াকে সিলেট পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। ক্লোজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, ঘুষের বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা পুলিশের মাঝে এতটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারাও মনে করতে শুরু করেছেন ঘুষ দিয়ে এমন কী নেই যা হয় না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উক্ত আসামিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য এসআই রাজা মিয়া আসামি পক্ষ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার উৎকোচ গ্রহণ করে থাকতে পারেন এবং শর্ত ছিল হয়ত—আসামিকে উক্ত মামলা থেকে বাঁচিয়ে আনবেন। তারই প্রেক্ষিতে আসামিকে রক্ষার জন্য এসআই বিচারককে ঘুষ প্রদানের চেষ্টা করেন। এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামির নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হলে তারও ঘুষ গ্রহণের চিত্র সামনে আসতে পারে বলে মনে করেন তারা।
আসামির নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ, আসামির হয়ে বিচারককে ঘুষ প্রদানের চেষ্টা, এসব আমাদের আইন প্রশাসনে এক বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, আইন রক্ষকদের নিকট আইনের বালখিল্য আচরণ এতোটাই নিম্নমুখীতে চলে গেছে যে তারা আইনের যেভাবে খুশি ব্যবহার করার মানসিকতার ভিত গড়ে তুলেছেন। যার ফলে আসামিকে বাঁচানো থেকে শুরু করে আসামির পরিবর্তে নিরীহকে ফাঁসানোর মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটছে। আইনের প্রতি পুলিশকে আরো শ্রদ্ধাশীল করে তোলার জন্য প্রশাসনে আইনের সুষ্ঠু পরিবেশ দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ