পটুয়াখালী থেকে গাছ চুরি কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এ এলাকা থেকে রাতের আঁধারে গাছ চুরি চলছেই। এলাকার দুর্বৃত্ত থেকে চোরাকারবারি অনেক লোকই এর সাথে জড়িত। এদের সাথে রয়েছেন খোদ বন বিভাগের কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফলের বন কর্মকর্তা আবুল কালামের বিরুদ্ধে রাতের অন্ধকারে সরকারি গাছ চুরির লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াকুব তালুকদারের সাথে মিলে বনায়নের গাছ চুরি করেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে গাছ চুরির অভিযোগ ছিল।
অভিযোগকারীর বক্তব্য, বাউফল উপজেলার কালীশুরী বন্দর থেকে বাহিরচর সড়কের পাশে রয়েছে সামজিক বনায়ন প্রকল্প। ওই বনায়ন মধ্যে কলেজ চৌরাস্তায় শোভাবর্ধনকারী একটি ইউক্যালিপ্টাস ও একটি আকাশমনি গাছ গতবছরের ২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালামসহ ৭/৮ জনে কেটে ফেলে। গাছ স্থানীয় পরিবাহনে করে ট্রলারে ভরার মুহূর্তে দেখে ফেলে প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্যরা।
খবর পেয়ে উপকারীভোগী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল মাস্টার এসে গাছ নিতে বাধা দেয়। এ সময় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম ট্রলার চালিয়ে নদীর উত্তরে চলে যায়। স্থানীয় আ’লীগ নেতা ইয়াকুব তালুকদার এসে পরিবহনে থাকা গাছের অংশ মসজিদের মাঠে নামিয়ে রাখেন। কিছুক্ষণ বাদে বন কর্মকর্তা আবুল কালাম এসে গাছ নিতে বাধাদানকারীদের নামে মামলা দেয়াসহ মেরে পঙ্গুকরে দেয়ার হুমকি দেয়। ঘটনাস্থলের অদূরে চাঁদকাঠী গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান বন কর্মকর্তা আবুল কালাম এক সময় বিএনপি’র সাবেক এমপি’র সহচর ও দেহরক্ষী ছিলো বলেও জলিল জানান।
বিএনপি’র ক্ষমতা সময় থেকে আবুল কালামের সাথে বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী, চোরাকারবারী ও দুষ্টলোকের সখ্যতা রয়েছে বলেও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, পটুয়াখালী রেঞ্জ বরাবরে ২৯ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ করে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী সদস্যদের সভাপতি মোঃ আব্দুল জলিল।
গত ২৯ ডিসেম্বর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পটুয়াখালীর বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে ভয়ে অভিযোগকারী নিরুদ্দেশ আছেন বলে তার পরিবারের দাবি।
আব্দুল জলিলের পরিবার আরও জানায়, সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সুফলভোগীরা আবুল কালামের মামলা হয়রানির ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। অভিযোগের বিষয়ে বাউফল বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম তার মুঠোফোনে বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান গাছ জব্দ করে তার (চেয়ারম্যান) হেফাজতে রেখেছে। যে লোক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে সে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিবেন বলে জানান।
অভিযোগের তদন্ত অগ্রগতি বিষয়ে জেলা বন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, আবুল কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সাথে মিলে বন থেকে গাছ চুরি করলে বন রক্ষা করার আর কোনো উপায় থাকে না। তারা শক্তিশালী সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে বলেই বুক সটান করে গাছ চুরি করে থাকে। এব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার মতো সাহসও কেউ দেখাতে পারে না। উল্টো তাকে দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। গাছ চুরি বন্ধে এসব শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধবতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪০
আপনার মতামত জানানঃ