করোনা সনদ না থাকলে কোনো যাত্রীই দেশে ঢুকতে পাবেন না মর্মে নির্দেশনা থাকলেও অনেক বিমান সংস্থা এ নির্দেশনা মানছে না। সম্প্রতি ১০টির বেশি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে পাঁচশ’র বেশি যাত্রী করোনা সনদ ছাড়াই শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। আর করোনা সনদ ছাড়া কত যাত্রী এসেছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।
নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে কেউ দেশে এলে তার করোনা নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে আসার আগে সব যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু নেগেটিভ সনদ থাকলেই তারা বাংলাদেশে আসার অনুমতি পাবেন। আর বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেই মেডিকেল সনদ দেখাতে হবে। এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও বিমান সংস্থাগুলো সেটি মানছে না। খোদ রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বাংলাদেশ বিমানও সুযোগ পেলেই উপেক্ষা করছে সরকারের এই নির্দেশনা।
যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) শনাক্ত হওয়ার পর অনেক দেশ দেশটির সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে সচল থাকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচল। গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের হিথরো বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০২ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট। এর মধ্যে ১৬৫ জন যাত্রী সিলেটে নামেন। বাকি ৩৭ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে।
গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) করোনা পজিটিভ একজন যাত্রী ঢাকায় আসেন কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর৪১৯ ফ্লাইটে। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর লিবিয়া থেকে ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট। ওই ফ্লাইটের কোনো যাত্রীর করোনা সনদ ছিলো না। গত ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বরও সৌদি এয়ারলাইন্সে করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আসে বাংলাদেশে। এরও আগে গত ১০ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী আনে মালদ্বীপ এয়ারলাইন্স।
কোভিড-১৯ টেস্টের সনদ পরীক্ষা করে শুধু নেগেটিভ সনদধারীদের হেলথ টোকেন দেয়ার নিয়ম। কিন্তু ১৭ নভেম্বর দায়িত্বরত এক স্যানিটারি ইন্সপেক্টর করোনা পজিটিভ সনদ থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন যাত্রীকে হেলথ টোকেন দেন। এছাড়া ২০ নভেম্বর হেলথ ডেস্কে দায়িত্বরত অপর এক স্যানিটারি ইন্সপেক্টর যাত্রীর কোভিড-১৯ পজিটিভ সনদ থাকার পরও হেলথ টোকেন দেন। পরে ওই যাত্রীকে এয়ারলাইন্স কর্তৃক বোর্ডিং কার্ড ইস্যু না করে ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে তাকে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেস্কের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এবিষয়ে জানান, এমন ভুল একবার হলে পুরো জাতির জন্য সেটা হুমকি। আমরা এয়ারলাইন্সগুলোকে বারবার চিটি দিয়েছি, অনুরোধ করেছি যেন করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী তারা না আনে। কিন্তু এরপরও তারা ভুল করছে— এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক। কোনো যাত্রী কোনোভাবেই আমাদের নজরের বাইরে যেতে পারবে না। আর যেসব এয়ারলাইন্স ভুল করছে, সামনে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আরও বড় কঠোর হতে বাধ্য হবে।
ইতোমধ্যে দেশে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের উপস্থিতি পেয়েছে। সরকারের বেখেয়ালিতে দেশে নতুন করোনা দ্বারা উদ্ভব বিপজ্জনক পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ। তারা মনে করেন, বিশ্বের সবখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনা নিয়ে সরকারের তেমন কোনো মাথা ব্যথা দেখা যাচ্ছে না। সরকার যেন পূর্বেকার ছেড়ে দেওয়া হাল নতুন করে পাতে তুলতে চাচ্ছে না। নতুন করোনা এবং শীত মৌসুমের আতঙ্ক সরকার কানে তুলছে না বলে অভিযোগ তুলেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সরকারের আলাদা কোনো প্রস্তুতি জোরদার হচ্ছে না এবং বিমান বন্দর এয়ারলাইন্সে নামে মাত্র নির্দেশনা দিয়ে নজরদারিতে রাখার প্রয়োজন মনে করছেন না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। সরকারের অবহেলায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশে ভালোভাবেই আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টগণ।
এসডব্লিউ/কেএইচ/০৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ