পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের নাম শুনলে বিশ্লেষণ ও পদবীর প্রয়োজন হয় না। বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত যেমন মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া, রাজিয়া বেগম, সুফিয়া কামাল। তেমনি একজন আলোচিত নারী প্রিন্সেস ডায়ানা।
১৯৬১ সালের ১ জুন তার জন্ম হয়েছিল ব্রিটেনের অন্যতম অভিজাত স্পেন্সার পরিবারে। তবে ৬ বছর বয়সেই বাবা-মা’র বিচ্ছেদ দেখতে হয়েছিলো ডায়ানাকে। তার জিম্মা নিয়ে বাবা ও মায়ের কদর্য আইনী লড়াই প্রভাব ফেলেছিল ডায়ানার শিশুমনে। শেষ অবধি লেডি ডায়ানা স্পেন্সারের শৈশব কেটেছিলো বাবার কাছেই।
১৯৭৭ সালে তিনি যোগ দেন লন্ডনের নাইটসব্রিজের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে, সহকারি শিক্ষিকা পদে। মজার ব্যাপার হলো, সেই বছরই ডায়ানার সাথে চার্লসের প্রথম আলাপ হয় বোন সারাহ ম্যাককর্কুডেলের প্রেমিক হিসেবে। সময়ের ব্যবধানে সে আলাপ গড়ালো প্রেমে। শুধু বয়সেই ১৩ বছরের বড় ফারাক নয়, ব্যক্তিত্বের দিক থেকেও দুজন ছিলেন দুই মেরুর। লাজুক আর ফ্যাশন সচেতন ডায়ানার বিপরীতে রাশভারী, বাগানপ্রিয় প্রিন্স চার্লস।
ব্রিটিশ রাজমুকুটের পরবর্তী উত্তরাধিকার হওয়ায় প্রিন্স চার্লসের এই প্রেম নজর কেড়েছিলো বিশ্ব মিডিয়ার। এই জুটির চার বছরের প্রণয় পরিণতি পায় ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাইয়ের এক মাহেন্দ্রক্ষণে। লন্ডনের সেন্ট পল’স ক্যাথেড্রালে অনুষ্ঠিত তাদের বিয়ে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় বিশ্ব মিডিয়ায়, যার সাক্ষী হয়েছিল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
বিয়ের ১১ মাসের মাথায় ১৯৮২ সালের ২১ জুন জন্ম নেয় চার্লস ও ডায়ানার ভালোবাসার প্রথম উপহার প্রিন্স উইলিয়াম আর্থার ফিলিপ লুইস। ১৯৮৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় তাদের দ্বিতীয় সন্তান প্রিন্স হেনরি চার্লস অ্যালবার্ট ডেভিড (প্রিন্স হ্যারি)।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের পুত্রবধূ ডায়ানা আর চার্লসের বিবাহ বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় ১৯৯৬ এর ২৮ আগস্ট। সেবামূলক কাজের মাধ্যমে প্রিন্সেস ডায়ানা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এইডস প্রতিরোধে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আক্রান্তদের হাত ধরে মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন স্পর্শের মাধ্যমে এইডস ছড়ায় না।
মানবতার সেবক, শিক্ষা অনুরাগী প্রিন্সেস ডায়ানা নার্সারি স্কুল ও হাসপাতাল পরিদর্শনে যেতেন নিয়মিত। সাধারণ মানুষের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। রাজপরিবারের সদস্য হয়েও দুই সন্তানের জননী প্রিন্সেস ডায়ানা চেয়েছিলেন তার সন্তানরা সাধারণ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে লেখাপড়া করবে। এজন্য উইলিয়ামকে নার্সারিতে যেতে হয়।
ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা-চেতনার কারণে বিশ্বে আলোচিত নারী ডায়ানা ছিলেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত খ্যাতিমান দানশীল, মুক্তচিন্তার অধিকারী, উদার মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, সৌন্দর্য ও ফ্যাশন ডিজাইনে প্রতিভাকে করেন বিকশিত।
ডায়ানা বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব এবং সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা একজন নারী। তার রহস্যজনক মৃত্যুতে সংকটে পড়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ‘জনগণের রাজকুমারী’ ডায়ানার মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়, শোক জানায়। ডায়ানাকে এই উপাধি দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার ব্যক্তি জীবনে ছোটখাট ভুল থাকলেও আর্ত-মানবতার সেবায় ছিলেন এক মহীয়সী নারী। আজও তিনি বেঁচে আছেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর প্রেরণার উৎস হয়ে তাদের মণিকোঠায়। ইংল্যান্ডে তার সমাধি হলেও বিশ্বমানবতার দেশ ফ্রান্সের ফরাসি সরকার দুর্ঘটনা স্থানে প্রিন্সেস ডায়ানার স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করে। ডায়ানাভক্তদের হৃদয়ে গহীনে উচ্চ আসনে স্থান করেছে ফ্রান্স। মরেও অমর হয়ে আছেন প্রিন্সেস ডায়ানা।
অসাধারণ কিছু ছবিতে ডায়ানার বর্ণাঢ্য জীবন:-
ছবি: rare historical photos
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৯০২
আপনার মতামত জানানঃ