দ্বিতীয় অ্যাংলো-বোয়ার যুদ্ধ যখন শুরু হলো, তখন সময়টা ১৮৯৯ সালের প্রায় শেষের পথে। মাত্র ৮ মাসের মধ্যেই ট্রান্সভালের শেষ শহরটিও আত্মসমর্পণ করে ফেলে বোয়ারদের চেয়েও প্রায় ৩ গুন বিশাল ব্রিটিশ বাহিনীর সামনে! সাড়ে তিন লক্ষ নিয়মিত সেনাদেরকে সাহায্য করতে সুদূর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি ভারতের উপনিবেশ থেকেও সৈন্য নিয়ে এসেছে ব্রিটিশরা, সাথে আরও এক লক্ষ কালো চামড়ার আদিবাসীরা তো রয়েছেই। এই বিশাল বাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে আত্মগোপন করে বোয়াররা, গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে চেষ্টা করে নিজেদের চামড়া বাঁচানোর।
আত্মগোপন করে থাকা হাজার হাজার বোয়ার পুরুষ তখন নিজেদের বাড়ি ছেড়েছুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আছে ট্রান্সভালের প্রান্তরে, ঠিক তখনই ব্রিটিশ সরকার ‘স্কর্চড আর্থ’ নীতি প্রণয়ন করলো। বোয়ারদের বাড়ি পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হলো, ক্ষেতে লবণ দেওয়া হলো, লুটপাট করা হলো পশুসম্পদ, এমনকি পানির সরবরাহ কমিয়ে দিতে কুয়াতেও বিষ ঢেলে দেওয়া হলো!
এদিকে বোয়ার নারী ও শিশুদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তথাকথিত ‘শরণার্থী ক্যাম্প’-এ, যা কিছুদিন পরেই পরিণত হলো জনাকীর্ণ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গরাও এর বাইরে ছিলো না। হাতেগোনা কয়েকটা গ্রামে তারাকাটের বেড়া দেওয়া ছাড়া বাকিদেরকে নিয়ে আসা হলো ক্যাম্পগুলোতে, যেখানে তারা কাজ করবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবৈতনিক শ্রমিক হিসেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রান্তরে কিছুদিনের মধ্যেই ১০০-এরও বেশি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প গড়ে উঠলো, যেখানে আটকা পড়লো এক লক্ষেরও বেশি বোয়ার আর কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ। একদিকে খাদ্যের অপ্রতুলতা, অন্যদিকে বন্দীর সংখ্যার আধিক্য, বন্দীদেরকে একবেলা খাবার দিতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলো ক্যাম্পের নার্সরা।
আপনার মতামত জানানঃ