১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে চালানো গণহত্যাকে স্বীকৃতির দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টিভস) একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার হাউসের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা রোহিত খান্না এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা স্টিভ চ্যাবট এ প্রস্তাব তোলেন।
এ প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনাবলী বিবেচনায় নিয়ে বিলে ১৯৭১ এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সহিংসতাকে নিন্দা জানানো হয়।
বাঙালি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি ওইসব সহিংসতাকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসাবে স্বীকার করা হয়। ১৯৭১ সালে যারা মারা গেছেন এবং অত্যাচারের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।
প্রস্তাবের প্রথম অংশে ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের প্রতি বিতৃষ্ণার মনোভাব পোষণ করতো সেটির কথা বিবৃত করা হয়।
১৯৭০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়লাভ এবং পরবর্তীতে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে তার আলোচনা ব্যর্থ হয় জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার জেনারেলদের বলেছিল ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করো এবং বাকিরা আমাদের হাত চাটবে।
এতে আরও বলা হয়, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে এবং সামরিক বাহিনী ও উগ্র ইসলামিক দলের সহায়তায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে।
গণহত্যার শিকার লাখো মানুষের স্মৃতিকে আমাদের বছরের পর বছর ধরে মুছে যেতে দেওয়া উচিত নয়। এ গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে সমৃদ্ধি করবে।
রিপাবলিকান দলের সদস্য স্টিভ চ্যাবট টুইটে লেখেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে চালানো গণহত্যার ঘটনা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। আমার ওহিও অঙ্গরাজ্যর সহকর্মীর সহযোগিতায় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো নৃশংসতা বিশেষ করে যার কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
এরপরের টুইটে স্টিভ চ্যাবট লিখেন, ‘গণহত্যার শিকার লাখো মানুষের স্মৃতিকে আমাদের বছরের পর বছর ধরে মুছে যেতে দেওয়া উচিত নয়। এ গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে সমৃদ্ধি করবে। এটা হলে দেশবাসীকে শিক্ষিত করবে। সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের এই বার্তা দেবে যে এ ধরনের অপরাধ সহ্য করা হবে না কিংবা কেউ ভুলে যাবে না।’
রোহিত খান্না টুইটে লেখেন, ১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার স্মরণে প্রথম প্রস্তাব তোলেন স্টিভ চ্যাবট। এ প্রস্তাবে আমাদের সময়ের সবচেয়ে বিস্মৃত গণহত্যার শিকার লাখো জাতিগত বাঙালি এবং হিন্দু নিহত হয়েছেন কিংবা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি এই রেজল্যুশনকে স্বাগত জানিয়েছে। ’৭১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান সেলিম রেজা নূর পিটিআইকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আমরা তাতে সন্তুষ্ট।’
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মানবাধিকারকর্মী প্রিয়া সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশেল স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গর্বের।’
বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ও ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার অ্যারোমা দত্ত পিটিআইকে বলেন, ‘আমার দাদা (পিতামহ) ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (৮৫) এবং আমার বাবা দিলীপ দত্তকে (৪০) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হানাদার বাহিনী। তারপর কুমিল্লার ময়নামতি ক্যাম্পে দুই সপ্তাহ নির্মম নির্যাতন করার পর খুন করা হয়ে তাদেরকে।’
‘আমরা চাই, ’৭১ সালে যারা নিরপরাধ ও নিরস্ত্র লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, অসহায় নারীদের ধর্ষণ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ