ইতোমধ্যে পুরনো রুপ থেকে বেরিয়ে নতুন রুপে করোনা আরো শক্তিশালী হয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর এবারই যে প্রথম রূপান্তর বা জিনগত পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসটির সংক্রমণ বেড়েছে, তা নয়। তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এবারের ছড়িয়ে পড়ার হার ৭০ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও বেশি। এই নিউ স্ট্রেইন বা নতুন ধরনের ভাইরাসটির যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়, প্রথম শনাক্ত হয় বৃটেনে। এরপর ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নতুন ধরণের এই ভাইরাস অবশেষে পৌঁছেছে বাংলাদেশেও।
বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেইন বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে, যেটির সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে। তবে এটি এখনো অতটা ভয়ংকর নয়। এর প্রভাব কতটুকু, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
মূলত তিনটি কারণে এই ভাইরাসের নতুন রূপটি সবার জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন ভাইরাসটি অন্যান্য সংস্করণকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে। এটিতে এমন মিউটেশন রয়েছে, যা ভাইরাসের অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কভিড-১৯ জেনোমিক্স ইউকে (কগ) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক নিক লোম্যান বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ধারণার তুলনায় বিস্ময়কর রকমের বেশি সংখ্যায় মিউটেশন হয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে মূলত ভাইরসাটি বাহককে আক্রমণ করে। এই স্পাইক প্রোটিনে ১ হাজার ২৭৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডটি আগে থেকেই বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল। নতুন আরও দুই সক্রিয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের নাম ‘পি৬৮১আর’ এবং ‘ডি১১১৮ আর’।
জানা যায়, নতুন পাওয়া দুটি ধরন বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের ১৬ জায়গায় পাওয়া গেছে। সারা বিশ্বের ১৬টি জায়গায় করোনাভাইরাসের ‘পি৬৮১আর’ ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনটি পাওয়া গেছে। বিশ্বে প্রথম পি৬৮১আর ধরনটি পাওয়া গেছে গত ২৭ আগস্টে পেরুর রাজধানী লিমাতে। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাশিয়াতে সেন্ট পিটার্সবার্গে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরিতে আটটি এবং সর্বশেষ ডেনমার্কের জিল্যান্ডে একটি করোনাভাইরাসের নমুনায় পি৬৮১আর ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে।
লন্ডন ও দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে নতুন ধরনের এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। লন্ডনের ৬২ শতাংশ সংক্রমণই নতুন ধরনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন কয়েকটি দেশে পাওয়া গেছে।
নতুন ধরনের করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইতালি জুড়েও। ইতিমধ্যেই ইতালির রাজধানী রোমসহ কয়েকটি শহরে ১৩ জন নতুন ভাইরাস সার্স কোভ-২ (এসএআরএস-সিওভি-২) তে শনাক্ত হয়েছে। ইতালি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসেও এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় বিস্তার ঠেকাতে আন্ত:দেশীয় বহু ফ্লাইট চলাচল পুনরায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সকল ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপসহ ৪০টি দেশ।
এদিকে করোনার নতুন এই ধরণ নিয়ে উদ্ভব পরিস্থিতির মধ্যেই লন্ডন থেকে ১৬৫ যাত্রী নিয়ে একটি বিমান বিজি ২০২ ফ্লাইটে করে সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় যাত্রীবাহী বিমানটি সিলেটে আসে। এ নিয়ে সাধারণের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ