নারীর প্রতি বর্বরতা বন্ধ, নিপীড়ক-ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকালও রাজপথ কাঁপায় তরুণ-যুবারা। বজ্রকণ্ঠে প্রতিরোধের স্লোগানের এই দৃশ্য জাতীয় জাদুঘরের সামনের।
নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। শাহবাগে শিক্ষার্থীদের গণ-অবস্থান ও মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে।
একই দাবি ও প্রতিবাদ নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা বের করেছেন। উত্তরায় বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছে যুব মহিলা লীগ। শাহ্বাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জড়ো হয়ে দুপুর ১২টা থেকে গণ-অবস্থান নেয় ছাত্র ইউনিয়ন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, লেখক, কবি, শিল্পী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং নারী অধিকার কর্মীরাও এতে যোগ দেন। ‘ধর্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ লেখা ব্যানার নিয়ে এখানে অবস্থানকারীরা নানা স্লোগান দেয়। এই গণ-অবস্থান থেকে আবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
শাহবাগ থেকে দুপুর সোয়া ১টার দিকে কালো পতাকা নিয়ে একটি মিছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়। মিছিলটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও লাঠিপেটায় ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়। দুপুর ২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগে ফিরে আসে।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, পুলিশের হামলায় আহতরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা নিয়েছে। এখানে পুলিশের পুরুষ সদস্যরা নারীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা : ‘সন্ত্রাস ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন পদযাত্রা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষও অংশ নেয়। পদযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
শেকৃবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : দেশব্যাপী চলমান লাগামহীন নারী-শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন ও পদযাত্রার আয়োজন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেট ও জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনসহ ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়। পরে এখান থেকে বের হওয়া মিছিল চন্দ্রিমা উদ্যানের কাছে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় দুইপক্ষে বাগিবতণ্ডা হয়।
উত্তরায় সড়কে বিক্ষোভ : সারা দেশে ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদে সকাল ১১টায় বিএনএস সেন্টারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা হাই স্কুল, নবাব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
যুব মহিলা লীগের মানববন্ধন : নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে যুব মহিলা লীগ। গতকাল ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর সংলগ্ন মিরপুর রোডে এই কর্মসূচি পালিত হয়। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলসহ নেতাকর্মীরা।
অন্যান্য সংগঠনের মানববন্ধন : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। এ ছাড়া পৃথকভাবে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাম, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন ও সোনাইমুড়ী জনকল্যাণ সমিতি।
আপনার মতামত জানানঃ