ছবি ও কার্টুন আঁকার অপরাধে জেল-জুলুম- হুলিয়ার বিরুদ্ধে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ‘ওরা আবার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ শিরোনামে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন সম্পন্ন হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ করতে পারেননি আয়োজকরা। পুলিশ অনুষ্ঠানের শেষদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলেন মুক্তচিন্তার লেখক, কবি, শিল্পী, সংস্কৃতি কর্মী, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ছাত্র কর্মীরা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রীয় দমন পীড়নের প্রতিবাদ উচ্চারিত হয় গোটা আয়োজনে। গানে কবিতায় নাটকে এবং কথায় উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার কথা।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রীয় দমন পীড়নের প্রতিবাদ উচ্চারিত হয় গোটা আয়োজনে। গানে কবিতায় নাটকে এবং কথায় উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার কথা। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, লেখক হাসনাত কাইয়ুম, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মাহা মির্জা, এক্টিভিস্ট বাকি বিল্লাহ প্রমুখ।
আনু মুহাম্মদ তার বক্তৃতায় বলেন, নানা আইন দিয়ে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও শিল্প-সংস্কৃতির মুক্ত প্রকাশ রুদ্ধ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রেররাষ্ট্র একটা বর্বর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। লুটপাট, স্বৈরাচারী মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে কথা বললেই জেলে পোরা হচ্ছে মানুষকে। যে কোনো ভিন্নমতকে দমনে মরিয়া শাসকরা। ফলে দেশে গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। প্রতিক্রিশীল শক্তির হাত ধরে প্রগতিশীল শক্তিকে যে কোনোভাবে আঘাত করতেই বেশি উৎসাহী এ রাষ্ট্র। এর বিরুদ্ধে গণজাগরণ ছাড়া মানুষের মুক্তি আসবে না।
কথায়, গানে, ছবিতে কবিতায় বারবার দাবী করা হয় কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাকের মুক্তি। কার্টুনিস্ট কিশোর কারাপ্রকোষ্ঠে অসুস্থ হয়ে প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েছেন। সবার কথায় বারবার একটা জোর দাবীর কথাই ঘুরেফিরে এসেছে। আটকদের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাতিল।
বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত। রবিউল ইসলাম শশির গান ‘ডিংগা ভাসাও সাহরে সাথীরে’ দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। এর পর নৃত পরিবেশন করেন দিলশানা পারুল, কবিতা পাঠ করেন কবি আরিফুজ্জামান তুহিন, রহমান মুফিজ, শোয়াইব হাসান, নূর হোসেন। পথনাট্য পরিবেশন করে বটতলা ও থিয়েটার ৫২, সংগীত পরিবশেন করে বনফুল, সমগিত ও মুকুল। সঞ্চালনা করেন কবি সৈকত আমীন ও ফেরদৌস আরা রুমী।
আয়োজকদের অন্যতম আরিফ রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আমাদের প্রোগ্রাম করছিলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ এসে আমাদের প্রোগ্রামের লাইটগুলো নিভিয়ে দিয়ে আমাদের তুলে দিয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশীদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশের কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিল কিংবা এর নিবর্তনমূলক ধারা পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১২১৩
আপনার মতামত জানানঃ