ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে গুগলের ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নজরদারি চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছেন গুগলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এরিয়েল কোরেন। এরপর থেকে কোম্পানিতে তার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করা হয়। এতে কাজ করতে পারছেন না জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এ তিনি।
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট এই কোম্পানির বিপণন ব্যবস্থাপক এরিয়েল কোরেন ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের চালানো নিপীড়নের ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। তার এই সক্রিয়তার কারণে গুগলে প্রতিকূল কাজের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন এরিয়েল। চলতি সপ্তাহেই তিনি গুগলের চাকরি ছাড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় এরিয়েল কোরেন বলেছেন, ‘যে কর্মীরা কথা বলেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ এবং প্রতিহিংসার কারণে আমি এই সপ্তাহে গুগল ছাড়ছি। আমি ইসরায়েলের সাথে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা/নজরদারি চুক্তির বিরোধিতা করার পরপরই গুগল আমার দায়িত্ব কেড়ে নিয়েছে।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাজন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গুগলের নজরদারি চুক্তির নাম ‘নিম্বাস’। এ প্রজেক্টের বিরোধিতা করে কোরেন বিতর্ক উসকে দেন। তিনি চুক্তি থেকে গুগলকে সরিয়ে আনতে পিটিশন প্রচার করেন। নির্বাহীদের সঙ্গে লবিং করা এবং সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলাসহ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নানাভাবে চুক্তি বাতিলের পক্ষে প্রচার চালান। তার এসব কর্মকাণ্ড ভালো লাগেনি কোম্পানির।
কোরেনের অভিযোগ, এ সময় কোম্পানি তার সঙ্গে অবন্ধুসুলভ আচরণ করতে থাকে। যে পরিবেশ তার কাজকে বাধাগ্রস্ত করে তোলে।
কোরেন সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে গুগলে কাজ করছেন।
ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে গুগলের জড়িত থাকার বিষয়ে কর্মীদের কথা বলতে দেয় না। কর্মীদের জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়। ভিন্নমতকে থামিয়ে গুগল ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেখে আসছি যে, কোম্পানিকে নৈতিক জায়গায় নিয়ে যেতে যারাই কথা বলছে, তাদের সমর্থন করার পরিবর্তে গুগল ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলে। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে গুগলের জড়িত থাকার বিষয়ে কর্মীদের কথা বলতে দেয় না। কর্মীদের জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়। ভিন্নমতকে থামিয়ে গুগল ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি গুগলকে ‘নিম্বাস’ প্রজেক্ট আরো ভালোভাবে পড়ার এবং প্রজেক্ট থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
কোরেন অভিযোগ করেন, তার উদ্বেগের কথা শোনার পরিবর্তে গুগল তাকে ২০২১ সালের নভেম্বরে আল্টিমেটাম দেয়, হয় দেশ ছেড়ে যেতে হবে নয়তো চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাধ্যতামূলক এই পদক্ষেপের পক্ষে আইনি কোনও যুক্তি নেই এবং তিনি গুগলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লেবার রিলেশন্স বোর্ডে (এনএলআরবি) অভিযোগ করেছেন।
কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গুগল এবং এনএলআরবি কোরেনের অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করেছে এবং তাতে কোনও ভুল পায়নি।
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষপাতমূলক নীতির কথা উল্লেখ করে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন গুগলের আরও অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি কর্মচারী ও সহযোগী।
তাদের দাবি, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে কোম্পানি নীরব থাকে এবং কোনো কথা বলতে দেয় না। বললেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৭
আপনার মতামত জানানঃ