দীর্ঘদিনের সম্পর্কের টানাপোড়ন শেষে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো মোদী-হাসিনার বহুল প্রত্যাশিত ভার্চ্যুয়াল বৈঠক। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদি দিল্লি থেকে বৈঠকে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় এই বৈঠক শুরু হয়ে দুপুর একটায় সমাপ্ত হয়। রোহিঙ্গা ইস্যু, ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন চালু হওয়া, পেঁয়াজ আমদানি-রফতানি, তিস্তা পানি ইত্যাদি বহুবিধ কারণে দু’দেশের মধ্যকার বিবধমান মান-অভিমান, ক্ষোভ এবং শান্তিপূর্ণ সীমান্ত, বাণিজ্য সহযোগিতা, কানেকটিভিটি, কোভিড সহযোগিতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে মোদী-হাসিনার এই ভার্চ্যুয়াল বৈঠককে অনেক কূটনীতিবিদই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করেছেন। একই সাথে কূটনীতি মহল সংশয় প্রকাশ করেছিলেন যে, মোদী-শেখ হাসিনার এই বৈঠক আনুষ্ঠিকতা বৈ কোনো ফলপ্রসু হবার নয়।
কী পাওয়া গেলো?
মোদী এবং হাসিনা বৃহস্পতিবার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করেন। এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।
মহাত্মা গান্ধী এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি ‘বাপু-বঙ্গবন্ধু ডিজিট্যাল প্রদর্শনী’রও উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ভার্চুয়াল শীর্ষবৈঠকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগের পুরনো চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগটিও উদ্বোধন করেন। ৫৫ বছর আগে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানিসহ সাত খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ সমাঝোতা স্মারক সই করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।
সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে সংশ্লিষ্ট ৭ মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সচিব বা শীর্ষ কর্মকর্তা আর ভারতের পক্ষে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী সই করেন।
সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে-কৃষি খাতে সহযোগিতা, হাইড্রোকার্বনে সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, নয়াদিল্লি জাদুঘরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতা, হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চালু, বাংলাদেশ-ভারত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরামের ট্রাম্প অব রেফারেন্স এবং বরিশালে সুয়ারেজ প্রকল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
কী প্রত্যাশা ছিলো?
মূলত, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বাড়াতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার এই ভার্চুয়াল বৈঠক। বিশেষ করে ভারত থেকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি এবং কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সহযোগিতার রূপরেখা দিতে পারেন বলে পূর্ব থেকে আলোচ্য ছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের বহু কাঙ্খিত তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি এখন ভারতের ‘প্রতিশ্রুতির সম্মানের’ ওপর ছেড়ে দিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে তিস্তাচুক্তি নিয়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা থাকলেও বিশ্লেষকরা আগেই বুঝতে পেরেছেন মোদি-হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কোন ধরনের আলোচনাই হবে না।
এছাড়া সীমান্ত হত্যা নিয়ে দু’দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কের একটি মীমাংসারও আশ্বাস ছিল এবং অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, অশুল্ক বাণিজ্য বাধা দূর করা এবং ভারতীয় ঋণের বাস্তবায়নে গতি আনার বিষয়ে জোর দেয়া হবে বলে জানা গিয়েছিল।
তবে ভার্চ্যুয়াল এই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ইতিবাচক সমাধানের প্রত্যাশা ছিল জনমনে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত আন্তর্জাতিক ফোরামে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়নি৷ আর বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেবে বলেও বৈঠকের আগে মনে করেননি বিশ্লেষকগণ৷ দেশের মানুষের ব্যাপক প্রত্যাশা থাকলেও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এই বৈঠকে ভারতের কার্যকর কোনো উদ্যোগ বা আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি।
আপনার মতামত জানানঃ