আগের পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন : ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার ইতিহাস (পর্ব-১)
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ৩৫ হাজার ইহুদি প্যালেস্টাইনে চলে আসে। তারা সেখানে অ্যাংলো-প্যালেস্টাইন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ব্যাংকের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনের কৃষকদের উচ্চ সুদে ঋণ দিতে শুরু করে। যখনই অধিকাংশ কৃষক ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয় তখনই তারা ব্রিটিশ কমান্ডারের নেতৃত্বে কৃষকদের জমিগুলো দখল করে নেয়। সেই সাথে নিজেরাও ব্যক্তিগতভাবে সেখানে একের পর এক জমি কিনতে শুরু করে। গ্যালিলি এবং তিবারিয় এলাকায় আগে থেকেই যে ইহুদি বসতি ছিল তার সাথে নতুন ইহুদির সংখ্যা যোগ করে দিনে দিনে ইহুদিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করে তোলার চেষ্টা চলতে থাকে। অবশ্য ১৮৬০ খ্রিষ্ঠাব্দে ইংরেজ সমাজকর্মী স্যার মোসেস মন্টেফিওর উদ্যোগে আগেই জেরুজালেমে ইহুদিদের বসতি গড়ে তোলা হয়েছিল। আবার ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব ইউরোপ থেকে বেশ কিছু সংখ্যক ইহুদি প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপন করে। একে “প্রথম আলিয়াহ” নামে অভিহিত করা হয়। ফলে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেমের ৫০ হাজার মানুষের মাঝে ইহুদি জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ হাজারে।
১৯০৩ সালে কিশিনেভে দাঙ্গা বাধে। সেখানে বহু ইহুদি নিহত হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্রিটিশ সরকার উগান্ডায় ইহুদিদের একটি উপনিবেশ স্থাপনের প্রস্তাব দেন এবং হার্জল সে প্রস্তাব লুফে নেন। কিন্তু জায়োনিস্টদের পরিকল্পনা জেরুজালেম কেন্দ্রিক, তাহলে তারা উগান্ডায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে রাজি হলো কেন? এখানে লক্ষ্যণীয় যে, Protocols of the Learned Elder Zion প্রকাশিত হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং নতুন মতবাদ ‘সমাজতন্ত্র’-এর প্রভাবে বলশেভিক বিপ্লবের ফলে রুশ সাম্রাজ্যে জাঁর শাসনের অবসান ঘটে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, জায়োনিস্টগণ আগে থেকেই জানতো যে সামনে পৃথিবীতে বড় একটি যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং সেই যুদ্ধে ব্রিটেন ও তার মিত্রশক্তি জয়লাভ করবে। আর প্রতিটি যুদ্ধের পরেই একটি শান্তিচুক্তি হয়। তাদের প্রস্তাব গ্রহণ না করলে ইহুদিদের জন্য তা কল্যাণকর হবে না। আপাতত এই প্রস্তাবে রাজি থেকে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী শান্তিচুক্তির সময় প্যালেস্টাইনের ভূমি দাবি করেই ইহুদি স্বার্থ রক্ষা করা যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আরব এবং তুরস্ক উভয়েই প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল। সুতরাং এদের মাঝে কোন্দল বাধানো হবে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষার অন্যতম কৌশল। এজন্য ১৯১৫-১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার শেরিফ হোসেইনের সাথে তুর্কি বিরোধী ইঙ্গ-আরক ঐক্যজোট গঠন প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে কর্মতৎপরতা শুরু হয়, তার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্যালেস্টাইনে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। মিশরের ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার হেনরি ম্যাকমোহন মক্কার শেরিফ হোসেইনের সাথে যে গোপন যোগাযোগ করেন তা ইতিহাসে হুসেইন-ম্যাকমোহন যোগাযোগ নামে খ্যাত। এর ফলে যে চুক্তি হয় তাতে তুর্কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে আরব মুসলিমদের যুদ্ধে ব্রিটিশ সাহায্যের অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু সিরিয়া সংলগ্ন কিছু এলাকা ও আলেকজান্দ্রিয়াসহ কিছু আরব এলাকাকে এই চুক্তির আওতার বাইরে রাখা হয়। মূলকথা, ইঙ্গ-আরব চুক্তির ফলে আরবরা তুর্কি শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়।
অন্যদিকে আরবদের অজ্ঞাতে ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মাঝেও একটি গোপন চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুসারে আরব এলাকা সমূহ ব্রিটেন এবং ফ্রান্স নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে সিরিয়া ও লেবাননের ওপর ফরাসি অধিকার এবং ইরাকের ওপর ব্রিটিশ অধিকারকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। তবে প্যালেস্টাইনকে আন্তর্জাতিক প্রশাসনের অধীনে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। এই প্যালেস্টাইন থেকে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আরবদের তাড়িয়ে দিয়ে পরে ইহুদি বসতি স্থাপনসহ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়।
ব্রিটিশরা তাদের ঔপনিবেশিক স্বার্থে আফ্রিকায় একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ায় ইহুদি বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করলেও রাজনৈতিক জায়োনিজমের প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্জল তা নাকচ করে দেন। পরে রোডেশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মেসিল রোডসের উদ্যোগে প্যালেস্টাইনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্রিটিশ সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত হয় বলে ধারণা প্রচলিত আছে। বেলফোর ঘোষণার আগে দীর্ঘদিন যাবত ব্রিটিশদের সাথে জায়োনিস্টদের গোপন যোগাযোগ চলতে থাকে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি অধ্যাপক ড. ওয়াইজম্যান কৃত্রিম অ্যাসিটোন আবিষ্কার করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এর প্রতিদানে ওয়াইজম্যান নিজের জন্য কিছু না চেয়ে ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র চান। ব্রিটিশরা তার আবেদন মঞ্জুর করে।
১৯০৪ থেকে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের মাঝে ৪০ হাজার ইহুদি প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপন করে। একে “দ্বিতীয় আলিয়াহ” হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। এসময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা ব্যারন রথচাইল্ডকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। এটিই ছিল ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের বিখ্যাত বেলফোর ঘোষণা। যেখানে বলা হয়েছিল, প্যালেস্টিনিয়ান ম্যান্ডেটের (প্রভাবশালী রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব) মধ্যে ব্রিটেন একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিনিময়ে ইহুদিদের অটোমান সৈন্য-সামন্তের বিষয়ে ব্রিটিশদের অবহিত করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই জায়োনিস্টরা এতে রাজি হয়। ব্রিটিশ এবং ফরাসিরা মিলে নতুন রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ করে।
উল্লেখ্য যে, ইহুদিদের কাছে বেলফোর ঘোষণাটি প্রকাশ করা হলেও আরব ও ফরাসিদের কাছে তা গোপন রাখা হয়। এসময় প্যালেস্টাইনে বসবাসকারী স্থানীয় মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ। স্থানীয় ইহুদি জনসংখ্যা ছিল শতকরা মাত্র ৫ ভাগ এবং বাকি ৫ ভাগ ছিল নতুন বসতি স্থাপনকারী। প্যালেস্টাইনের মুসলমানদের অধীনে তখনও ৯৭% জমির মালিকানা ছিল।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের প্যালেস্টাইন দখলের কাজে ইহুদিদের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল সাহায্য করে। এই দলটির নাম ছিল ‘জিউইস লিজিয়ন’। স্থানীয় আরবরা এর প্রবল বিরোধিতা করে। ফলে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে প্যালেস্টাইনে দাঙ্গা হয়। তখন ইহুদিরা ‘হাগানাহ’ নামের একটি মিলিশিয়া বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে। হিব্রু ‘হাগানাহ’ শব্দের অর্থ প্রতিরক্ষা। পরবর্তীতে এখান থেকেই ‘ইরগান’ এবং ‘লেহি’ নামের দুটো দলের সৃষ্টি হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের কাছে অটোম্যান শক্তি হেরে গেলে প্যালেস্টাইন ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে চলে যায়। ফলে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বেলফোর ঘোষণার সাথে সঙ্গতি রেখে ‘লিগ অব নেশনস’ ব্রিটেনকে প্যালেস্টাইনের ওপর ম্যান্ডেট প্রদান করে। ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঝে আরো ৪০ হাজার ইহুদি প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপন করে, যা তৃতীয় আলিয়াহ নামে পরিচিত। ১৯২৮ সালে প্যালেস্টাইনে জিউইস ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত হয়। ১৯২৪ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের মাঝে আরো ৮২ হাজার ইহুদি প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপন করে, যা চতুর্থ আলিয়াহ নামে পরিচিত।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেমের ওয়েলিং ওয়ালকে কেন্দ্র করে প্রথম বড় ইহুদি-মুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ফলে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে ইরগান নামে নতুন মিলিশিয়া বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে নাৎসিদের সাথে চুক্তিতে আরো ৫০ হাজার ইহুদি প্যালেস্টাইনে চলে আসে। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম আলিয়াহ-তে প্রায় আড়াই লাখ ইহুদি প্যালেস্টাইনে গমন করে। ফলশ্রুতিতে ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে আরব বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে প্যালেস্টাইনে অব্যাহত ইহুদি বসতি স্থাপনের ওপর ব্রিটেন নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদি হত্যা করে নাৎসিরা। যুদ্ধের পর ব্রিটেন হলোকাস্টে বেঁচে যাওয়া ইহুদিদের একটা অংশকে প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেওয়ার বদলে সাইপ্রাসের বন্দি শিবিরে নেয়। ফলে হাগানাগ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্দে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে এবং জায়োনিস্ট আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব চলে যায় আমেরিকান ইহুদিদের হাতে।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে প্যালেস্টাইন এলাকায় ইসরাইল রাষ্ট্র স্থাপনের লক্ষ্যে ইহুদি অধিবাসীদের সেখানে বসতি গড়ার উদ্দেশে ভাল কর্মকর্তাদের প্যালেস্টাইনে নিযুক্ত করার জন্য মার্কিন সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। এই ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রশিক্ষিত অস্ত্রধারী জায়োনিস্টরা ব্রিটিশ বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্যালেস্টাইনে আসে।
১৯৪৬ সালে ইরগান বাহিনী ছদ্মবেশ ধারণ করে কিং ডেভিড হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে প্যালেস্টাইনের ব্রিটিশ প্রশাসনিক হেড কোয়ার্টার ছিল। সেই হামলায় ৯১ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়। এতে তেলআবিব (বর্তমান ইসরাইলের রাজধানী) শহরে কারফিউ জারি এবং প্যালেস্টাইনের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইহুদিকে জেরা করা হয়। সেবছরই ব্রিটিশ উদ্যোগে লন্ডনে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তবে সেখানে ইহুদি ও আরব পক্ষ উপস্থিত থাকলেও কোনো মীমাংসা করা হয় না। বরং ব্রিটিশরা প্যালেস্টাইনকে আরব ও ইহুদিদের মাঝে ভাগ করে দিতে বলে।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ প্যালেস্টাইন সমস্যা উত্থাপিত হয়। ১৫ মে এই বিষয়ে জাতিসংঘের এক বিশেষ অধিবেশন বসে এবং United Nations Special Committee on Palestine (UNSCOP) গঠিত হয়। পরবর্তীতে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, গুয়াতেমালা, ভারত, চেকোস্লোভাকিয়া, ইরান, পেরু, হল্যান্ড, সুইডেন, উরুগুয়ে এবং যুগোস্লাভিয়া প্রভৃতি দেশসমূহকে নিয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা প্যালেস্টাইন সফর করে। লক্ষ্যনীয় যে, এই কমিটিতে কোনো আরব দেশকে রাখা হয়নি। তারা ‘স্বাধীন এক আরব রাষ্ট্র, স্বাধীন এক ইহুদি রাষ্ট্র এবং জেরুজালেম শহর’- এই তিন ভাগ করার প্রস্তাব দেয়।
পরিদর্শক দলের অধিকাংশ সদস্য পৃথক পৃথক আরব ও ইহুদি রাষ্ট্র কায়েমের পক্ষে মত দেয়। এর মাঝে অল্প কয়েকজনের সিদ্ধান্ত হলো- একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র কায়েম করা যেখানে আরব ও ইহুদিদের সমান অধিকার থাকবে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের ১৮১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী, প্যালেস্টাইন বিভক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ৩৩টি ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ১৩টি ভোট। ১০ সদস্য ভোট দানে বিরত থাকে। পাকিস্তান, ভারত, ইরান ও তুরস্ক সহ স্বাধীন আরব রাষ্ট্রগুলো বিভক্তি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ১ ডিসেম্বর আরব উচ্চতর কমিটি তিনদিনের ধর্মঘট ডাকে। এর প্রতিবাদে ইহুদিদের সাথে প্রবল সংঘাতে প্রায় আড়াই লাখ প্যালেস্টাইনি বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে যায় এবং প্রায় ১ লাখ ইহুদি নেতা সে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এতে আমেরিকা প্যালেস্টাইন ভাগ করার প্রস্তাব থেকে সরে আসে। কিন্তু ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ তারিখে ব্রিটেন সে প্রস্তাবে সমর্থন জানায়।
অবশেষে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ সামন্ত প্যালেস্টাইন এলাকা ছেড়ে চলে যায়। সেদিন তেলআবিব মিউজিয়ামে জিউস পিপল কাউন্সিল ডাকা হয় এবং ডেভিড বেনগুরিন ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ঘোষণা করেন; কিন্তু তিনি রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট সীমানা বললেন না। তার বদলে Eretz Israel তথা প্রতিশ্রুত ভূমি শব্দটিকে ব্যবহার করলেন। যুক্তরাষ্ট্র সাথে সাথে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়, পরদিন মিশর, সিরিয়া, টান্সজর্ডান ও ইরানের ষৈন্য ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি প্যালেস্টাইনে ঢুকে পড়ে এবং আরব ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়। মিশরীয় কমান্ডে কাজ করার জন্য সৌদি আরব একটি সেনাদল পাঠালেও ইয়েমেন শুধুমাত্র মৌখিকভাবে সমর্থন দেয়। ১ বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধের ফলে অনেক মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় লাখ প্যালেস্টাইনি পালাতে বাধ্য হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে ইসরাইল জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইহুদিগণ তাদের ধর্মশাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীর কিছু অংশ সত্য প্রমাণ করে।
তথ্যসূত্র :
জুদাইজম – মাশরুর ইশরাক
সভ্যতার ইতিহাস : প্রাচীন ও মধ্যযুগ- ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মোঃ আব্দুল কুদ্দুস সিকদার
বিশ্বসভ্যতা- এ কে এম শাহনেওয়াজ
হিব্রু থেকে ইহুদি- খন্দকার মাহমুদুল হাসান
হিব্রু জাতির ইতিহাস- ড. ডেনিস দিলীপ দত্ত
সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন – কুশ দাশগুপ্ত
আপনার মতামত জানানঃ