বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। রবিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উত্তম লাহিড়ী বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন।
পরে আবেদনটি বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি রিটটি উপস্থাপন করে শুনানির আরজি জানান। তার সঙ্গে ছিলেন এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। আজ এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
ভাস্কর্যের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে সৃষ্ট ‘নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা’ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে এই রিটে। এছাড়া জাতির জনকের ভাস্কর্য স্থাপন এবং ভাস্কর্য নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ প্রধান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবকে এই রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে। যুথী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুসহ রাষ্ট্রের যত ভাস্কর্য আছে এটা রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যেন সেটা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয় তার নির্দেশনা চেয়েছি।
‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রতীক। আমাদের স্ট্যাচু অব লিবার্টি। বঙ্গবন্ধু কোনো মনুমেন্টে সীমাবদ্ধ না। এটা আমাদের অস্তিত্ব। বাংলাদেশের অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুর জন্য আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যের যে মনুমেন্টগুলো আছে এগুলো কোনোভাবে কোনো রিলিজিয়াস প্রতীকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না। এটার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছি,’ বলেন তিনি।
যুথি আরও বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ও বায়তুল মোকাররমের খতিব রিলিজিয়াস ভিউ থেকে উনারা ডিটেইলস বলবেন, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবেন এটা কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে না। এজন্য ওনাদের বিবাদী করেছি। ‘আমরা নিজেরা সবাই ধর্ম পালন করি। আমরা ধর্মের ঊর্ধ্বে না। আমরা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখি। সেটার জন্য ডাইরেকশন চেয়ে বঙ্গবন্ধুর মনুমেন্টের ওপরে যেন কোনো আঘাত না আসে সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটা যেন রাষ্ট্র পালন করে,’ বলেন তিনি।
অপরাজেয় বাংলা অপরাজেয় বাংলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে নিবেদিত একটি ভাস্কর্য যা তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিত্রায়িত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত এ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপরাজেয় বাংলা উদ্বোধন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের প্রতীকী চিহ্নই ‘অপরাজেয় বাংলা’।
সংশপ্তক সংশপ্তক ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সংকল্পের এক অসামান্য সংমিশ্রণের প্রতীক। এর স্থপতি শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। ঢাকার সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এর অবস্থান। সংশপ্তক ভাস্কর্যটি একজন আহত মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা ও নিষ্ঠার প্রতীক।
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ভাস্কর্যটি সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ গণহত্যার প্রতীক। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা কীর্তিমান ভাস্কর শামীম সিকদারের অন্যতম সেরা রচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং রোকেয়া হলের মোড়ে অবস্থিত এ ভাস্কর্য অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা যোগায়।
রাজু স্মারক ভাস্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে প্রতিষ্ঠিত রাজু স্মারক ভাস্কর্য বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ভাস্কর্য নির্মাণে জড়িত শিল্পীরা ছিলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ও গোপাল পাল। রাজু স্মারক ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মইন হোসেন রাজুর স্মৃতির প্রতি নিবেদিত। ‘রাজু স্মারক ভাস্কর্য’ প্রতিবাদের ভাষার প্রতীক।
স্বাধীনতা সংগ্রাম শামীম শিকদার কর্তৃক নির্মিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য। ১৯৯৯ সালে উদ্বোধন হওয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুলার রোডে সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল ও বুয়েট সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে অবস্থিত।
অমর একুশ শিল্পী জাহানারা পারভীন এর অমর একুশ ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিমূলক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার কাছে অবস্থিত। ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাস্কর্যটি প্রথম উদ্বোধন করা হয়।
We use cookies to ensure that we give you the best experience on our website. If you continue to use this site we will assume that you are happy with it.AcceptPrivacy policy