ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বিরোধিতার মধ্যে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন এক ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। কারা এই ভাস্কর্য ভাঙচুরে যুক্ত ছিল, তা এখনো জানা যায়নি।
কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশ বিশেষ শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় ভেঙে ফেলা হয়। ৫ ডিসেম্বর ২০২০, শনিবার সকালে তা নজরে আসার পর ক্ষোভ জানিয়ে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী লীগ জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরের ওই স্থানে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। একই বেদিদে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও থাকবে। কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ করে রাতে দুর্বৃত্তরা এই ভাষ্কর্যটির ডান হাত, পুরো মুখ মণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলেছে।’ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘বিজয় মাসে জাতির পিতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। যারাই এই ভাস্কর্য ভাংচুরের সাথে জড়িত থাক তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে শনিবার শহরের এনএস রোডে মানববন্ধন করেছে জাসদ। সেখানে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি হাজি গোলাম মহসিন বলেন, ‘শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদের জুম্মার খুৎবা পাঠকালে সারাদেশের ভাস্কর্য অপসারণের যুক্তি দিয়ে মসজিদে আগত ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের উস্কে দেয়ার অভিযোগ পেয়েছি।’
অপরাজেয় বাংলা অপরাজেয় বাংলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে নিবেদিত একটি ভাস্কর্য যা তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিত্রায়িত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত এ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপরাজেয় বাংলা উদ্বোধন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের প্রতীকী চিহ্নই ‘অপরাজেয় বাংলা’।
সংশপ্তক সংশপ্তক ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সংকল্পের এক অসামান্য সংমিশ্রণের প্রতীক। এর স্থপতি শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। ঢাকার সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এর অবস্থান। সংশপ্তক ভাস্কর্যটি একজন আহত মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা ও নিষ্ঠার প্রতীক।
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ভাস্কর্যটি সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ গণহত্যার প্রতীক। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা কীর্তিমান ভাস্কর শামীম সিকদারের অন্যতম সেরা রচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং রোকেয়া হলের মোড়ে অবস্থিত এ ভাস্কর্য অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা যোগায়।
রাজু স্মারক ভাস্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে প্রতিষ্ঠিত রাজু স্মারক ভাস্কর্য বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ভাস্কর্য নির্মাণে জড়িত শিল্পীরা ছিলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ও গোপাল পাল। রাজু স্মারক ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মইন হোসেন রাজুর স্মৃতির প্রতি নিবেদিত। ‘রাজু স্মারক ভাস্কর্য’ প্রতিবাদের ভাষার প্রতীক।
স্বাধীনতা সংগ্রাম শামীম শিকদার কর্তৃক নির্মিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য। ১৯৯৯ সালে উদ্বোধন হওয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুলার রোডে সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল ও বুয়েট সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে অবস্থিত।
অমর একুশ শিল্পী জাহানারা পারভীন এর অমর একুশ ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিমূলক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার কাছে অবস্থিত। ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাস্কর্যটি প্রথম উদ্বোধন করা হয়।
We use cookies to ensure that we give you the best experience on our website. If you continue to use this site we will assume that you are happy with it.AcceptPrivacy policy