সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক হাজার ২০১টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত। আর ১৯টি এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে। গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে জানান, দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মোট এক হাজার ২২০টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল আছে এবং সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চব্বিশ ঘণ্টা মোতায়েন আছে।
রাজধানীতে জাতির পিতার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের সৃষ্টি হয়। দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন কয়েকটি ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতা। এমন পরিস্থিতির মাঝে গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাতের আঁধারে জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তার আগে ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যের একটি অংশ কে বা কারা ভেঙে ফেলে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে ৭ ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে মামলাগুলো দায়ের করেন।
গত ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙা ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। একই সাথে ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি ও স্ট্যাচুর পক্ষে সচেতনতা গড়তে ইসলামি ফাউন্ডেশন ও ইসলামি খতিবকে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে বলেন আদালত।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর মুর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের বিতর্কের মধ্যে দেশের সেসব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে, তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ অন্যান্য স্থানে নির্মাণাধীন ম্যুরালের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আজ মঙ্গলবার নির্মিত ও নির্মাণাধীন এসব ভাস্কর্য ও ম্যুরালের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান আদালত। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর যত ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ছিল তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োগসহ আইন শৃঙখলা বাহিনীর নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার(১৪জানু) শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৬
আপনার মতামত জানানঃ