১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের অন্যতম একটি। এদিনই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেদিনের কালো অধ্যায় থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর হন। ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় তার সরকার ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। কিন্তু সফল হন ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে। একে একে ছয়জন খুনিকে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েই পিতৃহত্যার প্রতিশোধে ক্ষ্যান্ত হননি প্রধানমন্ত্রী। এবার বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার খুনির মুক্তিযুদ্ধের খেতাব ও পদক বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সরকার। এই সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
আজ বুধবার (২ জুন) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যোগদানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান। শিগগিরই এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, শিগগিরই গেজেট জারি করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী জানান, যাচাই-বাছাইয়ের পর খেতাব বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যাদের খেতাব বাতিল হচ্ছে তারা হলেন ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী (বীর বিক্রম খেতাব পাওয়া), মেজর শরিফুল হক ডালিম (বীর উত্তম খেতাব পাওয়া), রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া) ও মোসলেহ উদ্দিন খান (বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া)।
জানা গেছে, সর্বোচ্চ আদালত ওই খুনিদের ফাঁসির আদেশ দিলেও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও গেজেটে তাদের নাম থাকার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগেই এই চার খুনির খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় মনে করে, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় বঙ্গবন্ধুর এই চার খুনির নাম থাকা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে চার খুনির মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব বাতিল করা হয়। জাতির পিতাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই চারজনের খেতাব বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশ রিট আবেদন করেন। তার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
পরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত চার খুনির রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই খুনের নেপথ্যে রয়েছেন জিয়াউর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়া হয়। এছাড়া শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিন ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান।
তাদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে জামুকার সদস্য ও সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ওই চারজনসহ মোট ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে ঢাকার দায়রা জজ আদালত। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ সেই মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়। তবে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট সবশেষ এ তালিকা হালনাগাদ করা হলেও সেখানে খুনিদের নাম থেকে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ