হেফাজতের পুরনো মামলা চালু এবং ভাস্কর্য ইস্যুতে তাদের নতুন আন্দোলনের বিরুদ্ধে জোরদার অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতেও সোচ্চার হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এ অবস্থায় বিএনপি নেতারা ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের জন্য বিব্রতকর বক্তব্য দিয়ে চলেছে। তাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এই ইস্যুতে উল্টো চাপে রাখার কৌশল নির্ধারণ করেছে সরকারের নীতি নির্ধারকরা। ইতোমধ্যে বিএনপির এই শীর্ষ তিন নেতার নামে মানহানি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় হেফাজত ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির জুনাইদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীমকেও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে এ মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান। মামলার বাদী এবি সিদ্দিকী মামলার আবেদনের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবন মিলনায়তনে হেফাজত ইসলামের একটি আলোচনা সভায় সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কোনো ধরনের ভাস্কর্য থাকবে না এবং জাতির পিতার ভাস্কর্য করতে দেয়া হবে না। গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম হাটহাজারীতে হেফাজত ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, মদিনার সনদে যদি দেশ চলে তা হলে কোনো প্রকার ভাস্কর্য থাকতে পারবে না। ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ না করলে আরও একটি শাপলা চত্বর ঘটাবেন বলে সরকারকে হুমকি দেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে একটি জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ফয়জুল করীম বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনো ভাস্কর্য তৈরি করা হয়, তা হলে সব ভাস্কর্য ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। প্রয়োজনে আবারও শাপলা চত্বরে জমায়েত করা হবে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এর আগে শাপলা চত্বরে ৫ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সকাল ৬টার মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটাবেন। তোমরা সেভাবে কাজ চালিয়ে যাও। তার পর বাবুনগরীর হুকুমে হেফাজতে ইসলামের জঙ্গিবাদীরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অগ্নিসংযোগ করে পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়ে ফেলেন। স্বাধীনতার পর থেকেই এ উগ্রপন্থী স্বাধীনতাবিরোধীরা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং জাতির পিতা, দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিশ্বের কাছে দেশকে হেয়পতিপন্ন করছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৯৭১ স্বাধীনতার যুদ্ধে পরাজিত গোষ্ঠী জামায়াত, আলবদর, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীরা পরাজিত হয়ে ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর খুনি নেতৃত্বদানকারী মেজর জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ইসলামিক সংগঠনগুলো জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রপন্থী ইসলামিক দলগুলো স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার জন্য অপকর্ম, বিশৃঙ্খলতা ও স্বাধীনতার ইতিহাস ও জাতির পিতার স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য অপপ্রচার চালিয়ে দেশে জনগণের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। যা দেশের জনগণের ভিতরে একটি স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এর পর থেকেই এই দেশে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি দালালরা একের পর এক কৌশলে দেশবিরোধী অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট পাকিস্তানি দালালচক্র বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে ঐক্যজোট করে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য তার ছেলে তারেক রহমানকে দিয়ে জঙ্গিবাদীদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এমতাবস্থায় আবার এই স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানিদের দালালচক্র খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ইসলামিক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী জাতির পিতার ভাস্কর্য বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যকলাপ ও সংঘাত সৃষ্টি করে তাদের গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়াতে জাতির পিতার ভাস্কর্যের একটি হাত ভেঙে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের মধুর ভাস্কর্যের একটি কান ভেঙে দেয়।
তাই বাদী মনে করেন, যে পিতার নেতৃত্বে এই দেশের জন্ম হয়েছে; একটি স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই পিতার হাত ভেঙে এই বিএনপি-জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামিক শাসনতন্ত্র এসব ইসলামিক সংগঠনগুলো যারা এই দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করে পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা করে এবং স্বাধীনতার স্থাপক জাতির পিতার নাম এই দেশের মাটি থেকে মুছে ফেলতে চায়। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০/৫০৬/১০৯ ও ৪২৭ ধারায় আসামি করে, অপরাধ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন বাদী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের ইঙ্গিত ছাড়া এ ধরনের মামলা করার নজির নেই। সংসদের বাইরে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের বেকায়দায় পড়াটা উপভোগ করছিল। কিন্তু সরকার তা বসে বসে দেখতে রাজী নয়। এই মামলার আয়োজন করে তারা পাল্টা বিএনপি নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পথে হাঁটছে।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৬৪০
আপনার মতামত জানানঃ