প্রায় দুই বছর ইসরায়েলের কারাগার বন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্ত হলেন ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নাগরিক সমাজের নেত্রী ৫৮ বছর বয়সী খালিদা জারার। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে সালেম সীমান্তফাঁড়ি দিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেয়। বামপন্থী এই নেত্রী বর্তমানে নিষ্ক্রিয় ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের (পিএলসি) এমপি।
খালিদা জারার কন্যা সন্তানের জননী। স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণে রামাল্লায় গত জুলাইয়ে খালিদার ৩১ বছর বয়সী কন্যা সুহা মারা যায়। মেয়ের জানাজায় মায়ের অংশ নেওয়ার জন্য ওই সময় খালিদা জারাকে মুক্তি দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়ে গণদাবি ওঠে। কিন্তু এরপরও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি এমপি খালিদাকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা রোববারের এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে লিখেছে, ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম রামাল্লায় মেয়ে সুহার কবর জিয়ারত করার কথা রয়েছে খালিদা জারার। এরপর রামাল্লায় তার কারামুক্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রামাল্লায় নিজ বাসভবনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন জারার। এর আট মাস পর অবশ্য তিনি মুক্তি পান। কিন্তু কোনো বিচার কিংবা অভিযোগ ছাড়াই প্রশাসনিক বন্দি নীতির আওতায় ২০ মাসের জন্য বন্দি হন। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রশাসনিক বন্দি হিসেবে তিনি কারাভোগ করেন।
এরপর মার্চে ইসরায়েলের একটি সামরিক আদালত তার বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য’ হওয়ার অভিযোগ আনে। সংগঠনটি হলো পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্তাইন (পিএফএলপি)। একই অভিযোগে তিনি এর আগেও কারাভোগ করেছিলেন। ইসরায়েল প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এবং ফাতাহকেও সন্ত্রাসী সংগঠন অভিহিত করেছে।
রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের কারণে উচ্চকিত হওয়ার কারণে ইসরায়েলের লক্ষ্যে পরিণত হন জারার। গত ছয় বছরের বেশিরভাগ সময় ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন তিনি। ফিলিস্তিনে ২০০৬ সালের নির্বাচনে পিএলসির সদস্য নির্বাচিত হওয়া জারার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ফিলিস্তিনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
রামাল্লাভিত্তিক অধিকার সংগঠন আদামির প্রিজনার্স বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খালিদার মতো অনেককেই আটক রেখেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সরকার ফিলিস্তিনের চার শতাধিক সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ তালিকায় ক্ষমতাসীন ফাতাহ পার্টি, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনসহ (পিএলও) বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের সদস্য হওয়ায় বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনিদের আটক করে সাজা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও স্পষ্টভাষী স্বভাবের কারণে আগে থেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর টার্গেট ছিলেন খালিদা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের বহুদিনের কৌশলই হচ্ছে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে নিজে থেকেই ফিলিস্তিনিরা চলে যায়। অব্যাহত চাপের মুখে নানা সময়ে বহু জায়গা ফিলিস্তিনিরা ছেড়েও দিয়েছেন। ব্যতিক্রম হলো পূর্ব জেরুসালেম এবং আল আকসা। ফিলিস্তিনিরা এখানে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে, কারণ তারা মনে করে এই শহরটি হারালে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩০৪
আপনার মতামত জানানঃ