প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু অনিবার্য। এর ব্যতিক্রম হয়ে বেঁচে থাকা কোনো প্রাণীর চিরঞ্জীব হয়ে ওঠার প্রমাণ নেই। কেননা মৃত্যুকে এড়িয়ে চলার সাধ থাকলেও কারো সাধ্যে নেই। আর একবার মৃত্যুবরণ করলেও সেখান থেকে পুনরায় বেঁচে ওঠার নজিরও নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই অসাধ্যকে সাধন করেছেন। ৩৩ বছর আগে মারা যাওয়া বেজির মত দেখতে ফেরেটকে বাঁচিয়ে তুলেছেন তারা।
ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেট অনেকটা বেজির মতো দেখতে চারপেয়ে প্রাণী। পায়ের একেবারে নীচের অংশ কালো লোমে ঢাকা। সে কারণেই ব্ল্যাক ফুটেড অর্থাৎ কালো পা।
লম্বা এবং সরু হয়ে ফেরেটের একটি সাধারণ দেহ-আকার থাকে ১৩ সেন্টিমিটার, লেজসহ তাদের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার। তাদের প্যালেজ বাদামী, কালো, সাদা বা মিশ্রিতসহ বিভিন্ন সংকলন রয়েছে। এদের ওজন ০.৭ থেকে ২.০ কেজি এবং এর মধ্যে যৌন দিকনির্দেশক পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের তুলনায় যথেষ্ট বড়। তারা প্রায় ছয় মাসে যৌনরূপে পরিণত হয় এবং গড় আয়ু সাত থেকে ১০ বছর হয়।
ফেরেটরা ঘুমাতে দিনে ১৪-১৮ ঘন্টা ব্যয় করে এবং ভোর ও সন্ধ্যার মধ্যে বেশিরভাগ সক্রিয় থাকে, যার অর্থ তারা হ’ল ক্রিপাস্কুলার। যদি তারা খাঁচায় হয় তবে তাদের ব্যায়াম করতে এবং কৌতূহল মেটাতে প্রতিদিন তাদের বাইরে নেওয়া উচিত; তাদের কমপক্ষে এক ঘন্টা খেলার জন্য জায়গা প্রয়োজন। তাদের পোলোক্যাট পূর্বপুরুষদের মতো নয় যারা একাকী প্রাণী, বেশিরভাগ ফেরেট সামাজিকভাবে সুখে বেঁচে থাকে।
উত্তর-মধ্য আমেরিকা জুড়ে এই প্রাণীর বাস। বাড়তে থাকা জনবসতির কারণে এই প্রাণীর মূল খাদ্য পেইরি ডগ (কাঠবিড়ালী কিংবা বড় ইঁদুর জাতীয় প্রাণী) ক্রমে অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। খাদ্য সঙ্কটের জেরে এই প্রাণীর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে।
এই প্রজাতিটি ক্রমশ কমে আসছে। তাদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এবার এক মৃত ফেরেটকে বাঁচিয়ে তুললেন তারা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই প্রাণীটি ১৯৮৮ সালে মারা গিয়েছিল। তার পর থেকেই তার দেহ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিজ্ঞানীরা এই প্রাণীটিকে জীবিত অবস্থাতেই নিজেদের সংগ্রহে রেখে দিয়েছিলেন। সেটা ১৯৮০ সাল। তার আট বছর পর প্রাণীটির মৃত্যু হয়। আমেরিকার ফিস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সেই মৃত প্রাণীটিকেই জীবিত করে তুলেছেন।
প্রকৃতপক্ষে প্রাণীটির ডিএনএ সংরক্ষিত ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। সেই ডিএনএ-র ক্লোন বানিয়েই হুবহু একই দেখতে প্রাণীর জন্ম দিয়েছেন তারা। প্রাণীটির নাম রেখেছেন এলিজাবেথ অ্যান। এটি একটি স্ত্রী ফেরেট।
চলতি বছর (২০২১) ফেব্রুয়ারিতে পুনর্জন্ম জয় ফেরেটটির। প্রাণীটিকে আপাতত গবেষণাগারের উপযুক্ত পরিবেশে রাখা রয়েছে। কিছু দিন পর্যবেক্ষণের পর তাকে বন্য পরিবেশে ছাড়া হবে। বন্য পরিবেশে সেটি যদি বাঁচতে সক্ষম হয় তা হলে এই প্রজাতির ক্রমহ্রাসমান সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
১৯৮২ সালে প্রথম এই প্রজাতি ‘বিপদগ্রস্ত’ হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৯৬ সাল নাগাদ এর সংখ্যা আরও কমে গিয়ে লুপ্তপ্রায় পর্যায়ে পৌঁছায়। তার পর শুধুমাত্র সংরক্ষণের জেরে এর কিছুটা সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সালে ফের এই প্রজাতিকে ‘বিপদগ্রস্ত’ তালিকাভুক্ত করা হয়।
এই মুহূর্তে মাত্র ৬৫০টি ফেরেট জীবিত রয়েছে। তাদের মধ্যে স্ত্রীর সংখ্যা আরও কম। নতুন ক্লোন প্রাণীটি যদি বংশবিস্তারে সক্ষম হয় তা হলে ক্রমহ্রাসমান প্রজাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই চিন্তামুক্ত হবেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৯
আপনার মতামত জানানঃ