পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। রোববার এ ক্ষমতা দখলের পর দেশটির প্রসিডেন্টকে আটক করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আফ্রিকার দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। কর্নেল মামাদি দুমবোয়ার নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরা জানায়, গিনিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী।
রোববার সৈন্যরা দেশটির সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তারা সোমবার কনক্রিতে রাষ্ট্রপতি কন্ডের মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকে আনবেন। একজন সৈনিকের কর্তব্য হলো দেশকে বাঁচানো, আমরা আর একজন ব্যক্তির হাতে রাজনীতি হস্তান্তর করব না, আমরা জনগণের কাছে তা অর্পণ করব’।
আরও বলেন, ‘আপনি যদি আমাদের রাস্তার অবস্থা দেখেন, যদি আপনি আমাদের হাসপাতালের অবস্থা দেখেন, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন ৭২ বছর পর, জেগে ওঠার সময় এসেছে। আমাদের জাগতে হবে।’
সৈন্য পরিবেষ্টিত ইউনিফর্ম পরা একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টকে আটকের পর আমরা সংবিধান বাতিল ও সরকার ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরো জানান, গিনির স্থল ও আকাশ সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
এছাড়া পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী কারফিউ বলবৎ থাকবে বলেও এক বিবৃতিতে বলা হয়।
পশ্চিম আফ্রিকার দরিদ্র দেশটিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মামাদি অভিযোগ করেন, কন্ডে রাজনীতিকে নিজের সম্পত্তিতে পরিণত করেছিলেন। তিনি দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য কিছুই করেননি।
তিনি বলেন, আমরা আর একব্যক্তির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, গিনি সুন্দর। তাকে নিপীড়িত করার দরকার নেই। আমাদের প্রয়োজন তাকে ভালোবাসা।
রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রেসিডেন্ট আলফা কন্ডেকে ঘিরে রেখেছেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, গিনির পতাকা গুটিয়ে সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল বলছেন, নিজেদের ভাগ্য আমরা নিজের হাতে নিয়ে নিচ্ছি।
এর আগে গিনির রাজধানী কনক্রির প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে কারা এই গুলিবর্ষণ করেছে সেটা জানা যায়নি ।
গিনির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স প্রেসিডেন্ট প্যালেসে আক্রমণ করে। তবে সেই আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর গিনির ক্ষমতা দখল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, গিনিকে সমর্থনে মার্কিন সক্ষমতার একটা সীমা রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস টুইটারে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে কন্ডেকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডি. আর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তিশেকেদিও অভ্যুত্থানের নিন্দা এবং কন্ডেকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছর সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনে ৮৩ বছর বয়স্ক কন্ডে তৃতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কন্ডে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন।
উল্লেখ্য, তিনি দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসেন। পরে ২০১১ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। তখন বিদ্রোহী সৈন্যরা তার প্রাসাদে গুলি চালিয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৩
আপনার মতামত জানানঃ