শুভ্র সরকার : তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনা ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছে। বন্দি করা হয়েছে অং সান সু চি সহ দেশের একাধিক নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক কর্মীকে। তারই প্রতিবাদে দেশ জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুবসমাজ। এমন বিক্ষোভ দেশটি আগে কখনো দেখেনি। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এটিই দেশটির সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। এসময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামনে সমবেত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এসময় অফিস-আদালতে না যাওয়া এবং ধর্মঘট সফলের আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দেয় তারা।
কী কারণে এই সেনা অভ্যুত্থান
প্রথম সম্ভাব্য কারণ: ২০১৫ সালে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পর ২০২০-এর নির্বাচনেও সু চির দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। আর সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) পেয়েছিল আগের চেয়ে আরও কম আসন। ফলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে যে দীর্ঘকাল ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ওপর সেনাবাহিনীর যে সর্বময় কর্তৃত্ব, তা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, একারণেই এই সেনা অভ্যুত্থান।
দ্বিতীয় সম্ভাব্য কারণ: সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং অবসরে যাচ্ছেন শীঘ্রই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অভিযুক্ত। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাও আছে। অবসরের পর বিপদের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা আছে তার। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রপতি হবার ইচ্ছাও জানিয়েছিলেন। যাতে একদিকে ক্ষমতা, অন্যদিকে সার্বভৌম দায়মুক্তি দুটোই থাকে। জানা যায়, সু চি নাকি তাতে সম্মত হননি।
ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে গোটা মিয়ানমার
গতকাল সোমবার মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হলে, প্রায় অচল হয়ে পড়ে দেশটি। এর আগে শনিবার মান্দালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুই জন নিহতের পর বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সরকার। তবে কোন রক্তচক্ষুর সামনে পিছু হটছে না বিক্ষোভকারীরা। ইয়াঙ্গুন সহ দেশটির বড় বড় শহরগুলোতেও ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা বন্দিদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। চলছে নিরবিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ।
- গত রবিবার, পুলিশের গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনার পরদিনই, সকালে মান্দালয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছে লাখ লাখ মানুষ।
- উত্তরের শহর মাইতিককাইনাতে মানুষ নিহত বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
- ক্রমাগতভাবে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলেও রবিবার তরুণেরা অভ্যুত্থানবিরোধী ব্যানার নিয়ে মোটরবাইক মিছিল করেছে।
- মধ্যাঞ্চলীয় শহর মনিওয়া ও বাগান এবং দক্ষিণের শহর দাওয়েই ও মাইয়েক শহরেও বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে ৩২ বছর বয়সি জিজাওয়া বলেন, ‘আমার রাগ হচ্ছে৷ আমি আর সামরিক শাসন চাই না৷ তারা যেভাবে কাজ করে তা স্বৈরতন্ত্রের মতো৷ আমরা জানি, আমরা কাকে ভোট দিয়েছি।’
সিডিএম নামের একটি সংগঠন মানুষকে একত্রিত হবার আহ্বান জানিয়ে টুইটে বলেছে, লাখ লাখ মানুষ তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। জনসমুদ্রে পরিণত হোক প্রতিটি শহর।
ইয়াঙ্গুনে ২২ বছরের বিক্ষোভকারী হেট হেট হ্লাং আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা জান্তা সরকার চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই। মা আমাকে এই বিক্ষোভ থেকে আটকে রাখতে পারেননি। তিনি শুধু বলেছেন, নিজের খেয়াল রেখো।’
এদিকে, দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এমআরটিভি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বলে, ‘বিক্ষোভকারীরা এখন সাধারণ মানুষকে উসকানি দিচ্ছে। তরুণদের তারা সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।’
এছাড়া, গত মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জাও মিন তুন এক সংবাদ সম্মেলনে সহিংসতার জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়ী করে বলেছেন, সেনাবাহিনী সংবিধান অনুসরণ করেই কাজ করছে। বেশিরভাগ মানুষ এতে সমর্থন দিচ্ছে।
বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, তিনজনের মৃত্যু
গত শনিবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছোড়া পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। একজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আরেকজন বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে মারা গেছেন।
শহরের স্বেচ্ছাসেবামূলক জরুরি সেবার প্রধান পারাহিতা ডারহি বলেন, অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন এবং দুজন নিহত।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের হটাতে গুলি চালায় পুলিশ। সে সময় মিয়া থোয়াতে থোয়াতে খাইং নামের ২০ বছর বয়সী এক তরুণী মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ১০ দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রাণ হারান তিনি।
মান্দালয়ের এক তরুণ বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তারা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তারা আমাদের ভবিষ্যতকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
বিক্ষোভে সংখ্যালঘুদের একাত্মতা
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাধীকারে সুচির অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থতা সত্ত্বেও শনিবার বিক্ষোভে মিয়ানমারে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকরাও অংশ নেন।
এ সময় নাগা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুব নেতা ও ইয়াঙ্গুনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজক কে জাং বলেন, ‘একনায়কের অধীনে আমরা ঐক্যবদ্ধ দেশ গঠন করতে পারি না। আমরা জান্তাকে গ্রহণ করতে পারি না।’
মিয়ানমারে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করল সেনা সরকার
সোমবার মধ্যরাতে প্রায় গোটা দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর এই নিয়ে চারবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হলো। ইন্টারনেট ব্যবহার করে পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হচ্ছিল মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি। প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভের মেসেজ, সেনা বাহিনীর নির্যাতনেত ছবি পাঠানো হচ্ছিল। সে কারণেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মিয়নমারের সবচেয়ে বড় টেলিকম সংস্থা টেলিনর জানিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। তবে তাদের সাইটে কোথায় কোথায় ইন্টারনেট বন্ধ, তার কোনো তালিকা প্রকাশ করা হবে না। তালিকা প্রকাশ করলে কর্মীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সেনা সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞায় সম্মত ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপে সম্মত হয়েছেন। মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইইউ। যদিও বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না ইইউ। জানা যায়, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হবে। আগামী মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সেই ঘোষণা আসতে পারে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, ‘শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না। কারণ এটা সাধারণ মানুষকে আঘাত করতে পারে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর বাছাইকৃত কিছু সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছিলো৷ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমন করার নীতির তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
বহির্বিশ্বের চোখে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পুনর্বহালের দাবি করায় যারা বার্মার মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে। ওয়াশিংটন বার্মার জনগণের পাশে রয়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবমিয়ানমারে বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘গণতন্ত্র ধ্বংসকারী ও মতপ্রকাশে বাঁধা প্রদানকারীদের দমনে আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যাব।’
রবিবার রাতে মিয়ানমারে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিন জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, সহিংসতা বন্ধ করে তারা যেন আলোচনার রাস্তায় আসে। গণতান্ত্রিকভাবে যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
এদিকে, চীন খুবই সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, মিয়ানমারের ঘটনাবলির দিকে চীন নজর রাখছে এবং ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। চীন মিয়ানমারের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী, এবং আমরা আমা করি দেশের সাংবিধানিক এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষ তাদের মতভেদ দূর করবে, এবং রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
এর আগে সেনা অভ্যুত্থানের পরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত আসিয়ান জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান ব্রুনেই এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই জোট আশা করে জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান রেখে সংলাপের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমরা আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আসিয়ান জোটের সদস্য দেশগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এই এলাকার শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন সিফটন বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যারা কয়েক দশক ধরে দেশটিকে শাসন করেছে তারা কখনোই আসলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। তারা কখনোই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে নেয়নি, আর তাই আজকের ঘটনা আসলে এতদিন ধরে চলা অবস্থারই প্রকাশ মাত্র।’
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ‘মিয়ানমারে যা ঘটছে তা আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে দেখছি। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রতি ভারতের সমর্থন সব সময়ই অবিচল ছিল। আমরা বিশ্বাস করি যে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত থাকবে। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পেজ বন্ধ করল ফেসবুক
সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। রবিবার কর্তৃপক্ষ ‘ট্রু নিউজ’ নামে ওই পেজটি বন্ধ করে দেয়।- সূত্র গালফ নিউজ।
ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ট্রু নিউজ ইনফরমেশনটি টিম’ পেজটি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করার জন্য ডাউন করা হয়েছে। পেজটির মাধ্যমে সহিংসতা উসকে দেয়া হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।
সু চির মুক্তি!
তিন সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এএলডি) দলকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। নেত্রী সু চির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ছয়টি ওয়াকিটকি আমদানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
এদিকে সু চির গ্রেফতার প্রসঙ্গে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আটক দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে অবশ্যই মুক্তি দিতে।
বিচারপ্রক্রিয়া নিরপেক্ষ হবে কিনা এমন প্রশ্নে সু চির আইনজীবী দলের একজন সদস্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি নিরপেক্ষ হবে কি হবে না, সে সিদ্ধান্ত আপনি নিজেই নিতে পারেন।’
এর আগে ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন সুচি। দেখা করতে পারেননি স্বামী এবং দুই পুত্রের সঙ্গে। তাই সু চির মুক্তি রয়ে গেছে ধোঁয়াশায়। যেভাবে ধোঁয়াশায় আছে তাবৎ মিয়ানমারের ভাগ্য।
বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় শীর্ষ অভিনেতা গ্রেফতার
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে দেশটির খ্যাতিমান অভিনেতা লু মিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে তার দুই বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
মিনের স্ত্রী খিন সাবাই উ নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেছেন, ইয়াঙ্গুনের তাদের বাড়িতে পুলিশ এসে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘তারা শক্তি প্রয়োগ করে দরজা খুলে তাকে ধরে নিয়ে যায়, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা আমাকে জানায়নি। আমি তাদের থামাতে পারিনি। তারা আমাকে জানায়নি।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন ইস্যুতে মিয়ানমারের সেনা প্রধানের বক্তব্য
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং ক্ষমতা দখলের পর টেলিভিশনের দেয়া প্রথম ভাষণে বলেছেন, তার সরকার মিয়ানমারের চলমান বিদেশনীতিতে কোন পরিবর্তন আনবে না।
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার ব্যাপারে যে চুক্তি আছে তাতেও কোন প্রভাব পড়বে না। যদিও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী যেভাবে গৃহহীন লোকজনকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেবার কথা ছিল সেটা চলতে থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব জুড়েই সামরিক অভ্যুত্থান এবং সু চিকে কারাবন্দী করায় নিন্দার ঢেউ উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এ অভ্যুত্থানের নিন্দা করে একে ব্যর্থ করে দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি। ক্রমাগতভাবেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি আসছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে দেশটির সারধারণ মানুষ। পুলিশের ছোড়া গুলিতে টলানো যাচ্ছে না তাদের সাহস। গণতন্ত্রের সমর্থনে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের এই বিক্ষোভ, এই ঐক্যবদ্ধতা দীর্ঘদিন মানুষে স্লোগানে ঘুরেফিরে আসবে। উদ্বুদ্ধ করবে মানুষকে।
এসডব্লিউ/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ