পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সামরিক অভ্যুত্থান চালানো হয়েছে। সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর ওইদিনই ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। ক্ষমতা দখলের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট বাহ নদা, প্রধানমন্ত্রী মক্টর ওয়ান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সোলাইমান ডোকুরেকে আটক করেছে তারা।
এ নিয়ে মালিতে মাত্র ৯ মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় এমন ঘটনা ঘটলো। সোমবার প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আটকের পর তাদের রাজধানী বামাকো-র কাছেই একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাহ নদা এবং প্রধানমন্ত্রী মক্টর ওয়ানে ১৮ মাস মেয়াদী অন্তর্বর্তী সরকারের পরিচালনা করছিলেন। একইসঙ্গে দেশে আবারও বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে দুই সেনা কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার পর ফের সংকটের সূচনা হয়। এক পর্যায়ে আটক করা হয় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে।
মূলত সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় রদবদলের ঘটনায় অন্তত দুই জন সেনা কর্মকর্তা বাদ পড়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় দেশটির সেনাবাহিনী। দৃশ্যত এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেদিনই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়।
সোমবার আটক হওয়া প্রেসিডেন্ট বাহ নদা নিজেও একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তার সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট অসীম গোয়েতা-র নেতৃত্বেই এদিন অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। গত বছরও তার নেতৃত্বেই নির্বাচিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল সেনাবাহিনী।
দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মরুভূমির বিশাল এলাকা আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সম্পর্কিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো দখলে থাকার মধ্যে রাজধানীতে পরপর এসব ঘটনায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে চলা অস্থিরতা আরও ডালপালা মেলতে পারে।
অগাস্টে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বেসামরিক শাসন ফেরানোর লক্ষ্যে নদা ওয়ানকে ১৮ মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব দেয় সামরিক বাহিনী, কিন্তু তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে যাচ্ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মালির এক সাবেক সরকারি আমলা রয়টার্সকে বলেন, “অভ্যুত্থানের স্তম্ভদের পদচ্যুত করা বড় ধরনের ভুল ছিল। সম্ভবত তাদেরকে তাদের নিজ জায়গায় ফেরানোর লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।”
সামরিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের ওই প্রধানদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা কাতি থেকে জানিয়েছেন।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, “তারা যা করেছে তা ভালো করেনি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আমরা তাদের তা জানিয়ে দিচ্ছি।”
আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতায় ভূমিকা রেখে চলা দরিদ্র দেশ মালিকে পতনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে প্রতিবেশী দেশ ও পশ্চিমা শক্তিগুলো। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে অর্ন্তদন্দ্ব তাদের উদ্যোগকে জটিল করে তুলেছে।
এদিকে মালিতে সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট বাহ নদা ও প্রধানমন্ত্রী মক্টর ওয়ানকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এক টুইট বার্তায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
মালিতে থাকা জাতিসংঘ মিশন দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের নেতাদের ‘অবিলম্বে শর্তহীন’ মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, যারা এই নেতাদের আটক করে রেখেছে নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের জবাব দিতে হবে।
বন্দি হওয়া নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস বা ইকোয়াস। এই ‘এটেম্পটেড ক্যু’ বা অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে নাকচ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভাবে নেতাদের বন্দি করাকে ‘অপহরণ’ বলেছে।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনেরাল আন্তোনিও গুতেরেস বলেন যে তিনি নদা ওয়ানের গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত।
টুইটারে তিনি বলেন, “আমি তাদের নিঃশর্ত ও শান্তিপূর্ণ মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।”
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল সোমবারে ইইউ বৈঠকের পর ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেন, “যা হয়েছে তা খুবই গুরুতর। আমাদের যা পদক্ষেপ নিতে হবে, তার জন্য আমরা তৈরি।”
পশ্চিম আফ্রিকার শীর্ষ আঞ্চলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা ইসিওডব্লিউএএস-র একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার বামাকো সফরে যাবেন। তারা এই ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা’র বিষয়টি সামধান করতে সহায়তা করবেন বলে ইসিওডব্লিউএএস, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে।
যাদের আটক করে রাখা হয়েছে এক বিবৃতিতে তাদের ‘নিঃশর্ত মুক্তি’ দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
গত কয়েক বছরে, মালিতে নানা ধরনের রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট দেখা গেছে।
২০১২ থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে বিভিন্ন ইসলামিস্ট ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। সহিংসতার কারণে বহু মানুষ বাধ্য হয়েছেন দেশ ছাড়তে, সহিংসতার আঁচ গিয়ে পৌঁছেছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বুরকিনা ফাসো ও নাইজেরেও।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটির খাদ্য ও কৃষিখাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। দেশটির দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরো দুর্বল করেছে চলমান করোনা অতিমারি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ