ইথিওপিয়ার অরোমো অঞ্চলে বিদ্রোহী অরোমো লিবারেশন আর্মির হামলায় শতাধিক সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। কমপক্ষে ২৫০ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছে গ্রামবাসীরা। কেউ কেউ আবার নিহতের সংখ্যা ৩৭৮ বলে উল্লেখ করেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক বলে জানিয়েছেন। হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। নিহতদের অধিকাংশই আমহারা জাতিগোষ্ঠীর। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই হামলার জন্য দায়ী অরোমো লিবারেশন আর্মি (ওএলএ)।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, বন্দুকধারীরা এই হামলা চালিয়েছে। এই হামলার জন্য অরোমো বিদ্রোহীদের দায়ী করা হচ্ছে। তবে অরোমো লিবারেশন আর্মি (ওএলএ) এ ঘটনায় দায় অস্বীকার করেছে।
গত শনিবারের এই হামলার পর ছোট ছোট এ গ্রামগুলোর রাস্তা থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হচ্ছে। লাশগুলো সমাহিত করছে গ্রামবাসীরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃতের এ সংখ্যার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি তারা। তারা পাল্টা দাবি করেছে সরকারের ‘পিছু হটে যাওয়া’ সেনারা হামলা চালিয়েছেন। ওএলএর এক মুখপাত্র অরোমিয়া আঞ্চলিক সরকার গঠিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও এ হামলার জন্য দায়ী করেছে।
শনিবারের ভয়ংকর হামলা থেকে বেঁচে ফেরা গিম্বি কাউন্টির বাসিন্দা আব্দুল-সইদ তাহির বার্তা সংস্থা এপি নিউজকে বলেন, ‘আমি ২৩০টি মরদেহ দেখেছি। আমার জীবনে এত সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করার ঘটনা দেখিনি।’
আব্দুল-সইদ তাহির আরও বলেন, ‘আমরা নিহতদের গণকবরে দাফন করছি এবং আমরা এখনো মরদেহ সংগ্রহ করছি। ফেডারেল সেনা ইউনিট এখন এসেছে। কিন্তু আমরা আশঙ্কা করছি তারা চলে গেলে ফের বিদ্রোহীরা হামলা চলতে পারে।’
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শাম্বেল বলেন, ‘জাতিগতভাবে আমহারা সম্প্রদায় যারা প্রায় ৩০ বছর আগে পুনর্বাসন কর্মসূচিতে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল তাদের এখন মুরগির মতো মেরে ফেলা হচ্ছে।’
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী আবদু হাসান বলেন, ‘আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। আমি শুনেছি তিন শ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এখনো দুটি গ্রামে মরদেহ উদ্ধার করা হয়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছে, গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে হামলা শুরু হয়। বেলা একটা পর্যন্ত তা চলে। জেলা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে সহযোগিতা চেয়েছিলেন স্থানীয় লোকজন। তবে কয়েক ঘণ্টা দেরিতে সহযোগিতা পাওয়া যায়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘(আঞ্চলিক) বিশেষ বাহিনী এবং সেনাবাহিনী বিকেল পাঁচটার দিকে পৌঁছেছিল। ওই সময় পর্যন্ত কেউ আমাদের সহযোগিতা করতে আসেনি।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছে, ঘটনাস্থলে হত্যাকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি কয়েকজনকে অপহরণ করে হামলাকারীরা। ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলে, তারা (হামলাকারীরা) তাদের (অপহৃত) নিয়ে যাওয়ার পর জঙ্গলের ভেতর হত্যা করেছে। বন থেকে ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তারা (হামলাকারী) আমহারিক ভাষাভাষীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হত্যা করতে শুরু করে।
আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। আমি শুনেছি তিন শ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এখনো দুটি গ্রামে মরদেহ উদ্ধার করা হয়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।’
প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেছে, গুতু গ্রামে কিছু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আটজন নিহত হন। এ ছাড়া ওই গ্রামে আরও ৩৫ জনকে সমাহিত করা হয়েছে। সিলসা গ্রামে সমাহিত করা হয়েছে ১০২ জনের মরদেহ।
ইথিওপিয়া সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইথিওপিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলছে, সম্প্রতি ওই এলাকায় সরকারি বাহিনী ও ওএলএর মধ্যে লড়াই হয়। এ হামলার সঙ্গে ওই লড়াইয়ের সংযোগ থাকতে পারে।
মৃতের সংখ্যা ৩৭৮ বলে উল্লেখ করেছে অ্যাডভোকেসি সংগঠন আমহারা অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা। সংগঠনটি বলছে, ১৭৮ জন নিহত ব্যক্তির নাম জানতে পেরেছে তারা।
ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এ সহিংসতাকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। এক টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়।’
গত তিন বছরে ইথিওপিয়ায় নজিরবিহীনভাবে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা বাড়তে দেখা গেছে। এ সময় হাজারো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ।
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় তাইগ্রে অঞ্চলে গৃহযুদ্ধের কারণেও দেশটি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।
মালিতে বিদ্রোহীদের হামলায় শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হামলায় কমপক্ষে ১৩২ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, শনিবার ও রোববার রাতে মালির মোপ্তি অঞ্চলের ব্যাঙ্কাসের অন্তত তিনটি গ্রামে হামলা চালিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। কাতিবা মাকিনা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করছে মালি সরকার। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতিবা মাসিনা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা মালির মধ্য মোপ্তি অঞ্চলের অন্তত তিনটি গ্রামে হামলা চালিয়েছে। শনিবার ও রোববার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ১৩২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং কয়েকজন অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে দেশটির সরকারের তরফে জানানো হয়, আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সংগঠন আমাদৌ কাউফার মাসিনা কাতিবার সদস্যরা বেসামরিক লোকজনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। মধ্য মালির দিয়াল্লাসাগৌ ও নিকটবর্তী দুটি গ্রাম, দিয়াওয়েলি এবং ডেসাগৌ-তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় যে অঞ্চলটির মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল।
যদিও এ হামলার দায় এখনো কোনো গোষ্ঠী স্বীকার করেনি।
ব্যাঙ্কাসের মেয়র মোলায়ে গুইন্দো দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ঠিক কী ঘটেছে তা জানতে তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
এসব হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন। তারা এক টুইটার পোস্টে বলেছে, মালির মধ্যাঞ্চলে চরমপন্থীদের হামলায় অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এ হামলায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
মালি এবং মধ্য সাহেল অঞ্চল কয়েক মাস ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি একের পর এক হামলা চালিয়ে বেসামরিক মানুষদের মেরে ফেলছে। ২০১২ সাল থেকে দেশটিতে নিরাপত্তাহীনতা চরমে উঠেছে। সেখানে আল-কায়েদা ও আইএসআইএসে সঙ্গে সম্পৃক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নির্বিচারে বেসামরিক মানুষদের হত্যা করছে। মালির উত্তরে শুরু হওয়া এসব সহিংসতা এখন প্রতিবেশী দেশ বুরকিনা ফাসো ও নাইজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪৮
আপনার মতামত জানানঃ